|
|
|
|
উন্নয়নের ঢালাও প্রশংসা মুখ্যমন্ত্রীর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
নন্দীগ্রামের জেলায় উন্নয়নের কাজে সন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার পূর্ব মেদিনীপুরে পা রেখে নিজেই এ কথা জানালেন তিনি। জেলা পরিষদ ও প্রশাসনকে ঢালাও শংসাপত্র দিলেন। মমতার কথায়, “জানুয়ারিতে দিঘায় বৈঠক করতে এসেছিলাম। তখন সব কিছু দেখে নেগেটিভ ধারণা হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখছি এখানে ভাল কাজ হচ্ছে।”
দু’দিনের জেলা সফরে সোমবার বিকেলে কোলাঘাটে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ‘বলাকা’ সভাগৃহে প্রশাসনিক বৈঠক সারেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ মুকুল রায়, শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী, জেলার দুই মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র (জলসম্পদ উন্নয়ন) ও সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার (পরিবেশ ও পূর্ত), জেলা পরিষদের সভাধিপতি গাঁধী হাজরা। প্রশাসনিক কর্তাদের মধ্যে ছিলেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র, স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্প-বাণিজ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, জেলার সব মহকুমাশাসক ও বিডিওরা। প্রশাসনিক বৈঠকের আগে সভাগৃহের বাইরে রবীন্দ্র-প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মুখ্যমন্ত্রী। আগাম আয়োজন অবশ্য ছিল না। মুখ্যমন্ত্রী সটান সেখানে পৌঁছে যাওয়ায় পাশের গাছ থেকে ফুল তুলে পরিস্থিতি সামাল দেন এক পুলিশ কর্তা। |
|
কেটিপিপি-র বলাকা মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী। |
বৈঠক শেষে মিনিট পাঁচেকের জন্য সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা। সেখানেই তিনি বলেন, “শিক্ষা, স্বাস্থ্য, একশো দিনের কাজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই জেলায় ভাল কাজ হচ্ছে। দিঘা-শঙ্করপুরেও উন্নয়নের কাজ চলছে। অনেক নতুন বিডিও এসেছেন। পুরনো অভিজ্ঞ বিডিওরাও আছেন। আমাদের আশা সবাই মিলে উন্নয়নের কাজ আরও ভাল ভাবে করবেন।” নন্দীগ্রাম, এগরা ও পাঁশকুড়ায় মাল্টি স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হবে বলেও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রামে হাসপাতাল অবশ্য পূর্ব ঘোষিত প্রকল্প। বাকি দু’টি নতুন সংযোজন। উন্নয়ন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসাকে কটাক্ষ করেছেন জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নিরঞ্জন সিহি। তাঁর মতে, “জেলা পরিষদ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতিটি স্তরেই ব্যর্থ তৃণমূল। জেলাবাসী ও জেলার আধিকারিকেরা সে কথা জানেন। জেলা পরিষদ নিজের দলের দখলে বলেই মুখ্যমন্ত্রী এই প্রশংসা করেছেন।”
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে মমতা জানান, জেলায় ক্ষুদ্রশিল্পের কাজ প্রশংসনীয় ভাবে এগোচ্ছে। কিন্তু ভারী শিল্প? মমতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার নয়াচরে ‘ইকো-ট্যুরিজম’ গড়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র দিচ্ছে না। ক’দিন আগেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে নয়াচরে পেট্রো-রসায়ন শিল্পতালুক গড়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে। মূলত মমতার দাবি মেনেই এই সিদ্ধান্ত বদল। রাজ্য সরকারের তরফে নয়াচরে ইকো-পর্যটন পার্ক ও শিল্প-পার্ক গড়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করা হয়েছে। তবে তাতে বাধ সাধছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশ মন্ত্রক। অবস্থানের জন্যই নয়াচর এ ক্ষেত্রে অনুকূল নয় বলে জানিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে নয়াচরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে চাওয়া অনাবাসী ভারতীয় প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সংস্থা ‘ইউনিভার্সাল ক্রিসেন্ট পাওয়ার’কে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে জমি দিতে চাইছে রাজ্য। এ দিন মমতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “নয়াচরে পেট্রো-রসায়ন শিল্পের জন্য প্রথমে ছাড়পত্র দিতে পেরেছিল কেন্দ্র। আমরা ওখানে ইকো-ট্যুরিজম করতে চাইছি। কেন ছাড়পত্র দিচ্ছে না, বুঝতে পারছি না।” পাহাড় ও সুন্দরবনেও ইকো-ট্যুরিজম হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। |
|
প্রশাসনিক বৈঠকে ঢোকার পথে। |
সৈকত শহর দিঘা নিয়ে গোড়া থেকেই সংবেদনশীল মমতা। দিঘাকে গোয়ার মতো আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনস্থল করে তোলা তাঁর স্বপ্ন। প্রশাসন সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকে দিঘার উন্নয়নে আরও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তিনি কেরল উপকূলের তুলনা টানেন। পাশাপাশি মন্দারমণিতে অসম্পূর্ণ বিদ্যুদয়ন, খারাপ রাস্তাঘাট নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। জেলায় প্রচুর সংখ্যক দুর্ঘটনা হচ্ছে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মমতা। পুলিশকে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রয়োজনে যানবাহনের গতি বেঁধে দিতে বলেন।
কোলাঘাটে বৈঠক সেরে হলদিয়ায় আসেন মুখ্যমন্ত্রী। যান হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের অতিথিশালা ‘হলদিয়া উন্নয়ন ভবনে’। আজ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর একাধিক কর্মসূচি রয়েছে। সকাল ১০টায় হলদিয়ায় পেট্রো-কেমিক্যাল লিঙ্ক রোডের পাশে বেসরকারি সংস্থার (জেভিএল) নতুন ভোজ্যতেলের কারখানা ও ১২টায় ধানসিঁড়ি গোষ্ঠীর পেট্রো-রাসায়নিক কারখানার সম্প্রসারিত প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি। দুপুর ২টো নাগাদ তমলুকের নিমতৌড়ি স্মৃতিসৌধ সংলগ্ন প্রস্তাবিত জেলা প্রশাসনিক অফিস চত্বর ময়দানে প্রশাসনিক সভা করবেন। সেখানে নানা প্রকল্পের শিলন্যাসের পাশাপাশি কৃষক, তাঁত শিল্পীদের ক্রেডিট কার্ড, সংখ্যালঘু-তফসিলি ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি, জমির পাট্টা বিলি করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
|
ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
|
|
|
|
|