ফ্ল্যাশব্যাকে বছর তিরিশ আগে গেলেও দেখতে পাবেন, গোটা বিশ্বের কফিশপে, পাবে একটাই তর্ক চলছে। বিশ্বসেরা ফুটবলার কে? পেলে? না মারাদোনা? গরমাগরম এত তর্কের পরেও কিন্তু কেউ চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। কারণ দক্ষিণ আমেরিকার এই দুই কিংবদন্তি একে অন্যের বিরুদ্ধে কোনও দিন খেলেননি। বিশ্বের প্রত্যেক ফুটবল রোম্যান্টিককেই সারা জীবন এই দুঃখ, এই ট্র্যাজেডির সঙ্গে আপস করে নিতে হয়েছে।
তবে আমার মতো আপাদমস্তক ফুটবল-রোম্যান্টিকের একটা ব্যাপারে কোনও দুঃখ নেই। মেসি-রোনাল্ডোর মতো দুই মাস্টারকে একসঙ্গে এক মাঠে দেখতে পাওয়া! তবে কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন কাম্প ন্যু-তে রবিবারের এল ক্লাসিকোয় কে এগিয়ে ছিল, মেসি না রোনাল্ডো, আমার উত্তর হবেকেউ না।
হ্যাঁ, মেসির দ্বিতীয় গোলটা দুর্ধর্ষ। কিন্তু রোনাল্ডোর প্রথম গোলটাও তো অসাধারণ। মাঝমাঠ দিয়ে মেসির দৌড় অনবদ্য হলে রোনাল্ডোর উইং প্লে-ও কম যায়নি। দু’জনের মধ্যে তুলনা করা অসম্ভব। সর্বোচ্চ মানের ফুটবল ছাড়া একে কী বলব? দু’জনের মধ্যে কে কাকে টেক্কা দিল, সেই আলোচনা নেহাতই ছেলেমানুষি। তবে মনে হয় মরসুমের শেষে ছবিটা আর একটু পরিষ্কার হবে।
ম্যাচের কথায় ফিরি। সত্যি বলতে কী, স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচটা ছিল বলে রবিবার আমাদের হোটেলে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই প্রথমার্ধের কিছুটা আমরা দেখতে পারিনি। আজ সকালে হাইলাইটস দেখলাম। গোলগুলো বারবার দেখেও যেন মন ভরছিল না। রোনাল্ডোর একটা জিনিস খেয়াল করলাম, যেটা অনেকেরই চোখ এড়িয়ে যায়। বেশির ভাগ লোকই উইঙ্গার রোনাল্ডোর কথা বলে। যেটা অনেকেই দেখতে পায় না সেটা হলওর সব পজিশনে খেলার ক্ষমতা আছে।
সকালে হোটেলের কয়েকজন জিজ্ঞেস করছিল, মাঠে মেসির উপস্থিতি রোনাল্ডোকে তাতিয়ে দিয়েছিল? নাকি উল্টোটা? কোচ হিসেবে আমার সব সময় মনে হয়েছে, এত বড় মাপের প্লেয়ারের নিজেকে মোটিভেট করার জন্য এ সবের দরকার পড়ে না। একে অন্যের উপস্থিতি নয়, নিজের সহজাত ক্ষমতার উপর বিশ্বাসই ওদের কাছে টনিকের মতো কাজ করে।
এল ক্লাসিকো শুরুর আগে টিমকে বলেছিলাম ম্যাচে যে জিনিসটা সবার আগে দেখতে হবে, সেটা হচ্ছে রোনাল্ডোর গতিবিধি। দেখুন, ওয়ান-টু-ওয়ান পরিস্থিতিতে মেসির চেয়ে কোনও দিক দিয়েই পিছিয়ে নেই আজকের রোনাল্ডো। সত্যিই ঈশ্বরদত্ত ক্ষমতা! রোনাল্ডোর সঙ্গে কোনও ডিফেন্ডারের ওয়ান-টু-ওয়ান লড়াইয়ে একশো বারের মধ্যে নিরানব্বই বার রোনাল্ডো জিতবে। ইস্টবেঙ্গল টিমকে এটা দেখে শিখতে হবে রোনাল্ডো কী ভাবে বল নিয়ে বাকিদের কাটিয়ে ভেতরে ঢুকে যায়। কী ভাবে শরীরটাকে দুমড়ে-মুচড়ে নেয়। আগেই বলেছি আমি আপাদমস্তক ফুটবল রোম্যান্টিক। বিশ্বের বাকি সব কোচের মতো আমিও মাঝেমধ্যেই নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আমার ইস্টবেঙ্গলে যদি মেসি আর রোনাল্ডো একসঙ্গে খেলত, তা হলে আমি কী করতাম? উত্তরটা ভাবলে নিজের মনে মনেই হাসি। মেসি-রোনাল্ডো আমার টিমে থাকলে বাকি ন’জনকে একটাই কথা বলতে হয়। বলটা ওদের পাস করে দাও। আর দেখো, ম্যাজিক কাকে বলে! |