রবিবারের এল ক্লাসিকোর পর দেখছি নতুন একটা তর্কের জন্ম হয়েছে। বিভিন্ন নেটওয়ার্কিং সাইটে জোর আলোচনা চলছে, ইউরোপের বর্ষসেরা ফুটবলার এ বার কে হবে? লিওনেল মেসি? নাকি ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো? দু’জনেই যে রকম আগুনে ফর্মে!
ইউরোপের বর্ষসেরার স্বীকৃতি কে পাবে, কে বড় ফুটবলার, এ সব জল্পনায় আমি ঢুকছি না। আমার মতে, মেসি এবং রোনাল্ডো দু’জনেই এখন জীবনের সেরা ফর্মে। তুলনা তাই চলে না। বরং লিওনেল মেসিকে নিয়ে আমি একটা কথা বলতে চাই। ওকে দেখে কিন্তু আমার ’৮৬-র দিয়েগো মারাদোনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আর দু’বছর পর আমাদের দেশে ফুটবল বিশ্বকাপ। রিও-তে মেসিকে না মারাদোনা মনে হয়!
কেন বলছি? বছরখানেক আগে পর্যন্ত মেসিকে নিয়ে বলা হত, ওকে চেনা যায় শুধু বার্সেলোনার জার্সিতে। দেশের জার্সিতে নয়। গোল করতে পারে না। এটা ঠিক যে, বিশ্বকাপ দূরের ব্যাপার। মেসি একা একটা কোপা আমেরিকাও দিতে পারেনি আর্জেন্তিনাকে। কিন্তু মাঝের এক বছরে ওকে অদ্ভুত ভাবে পাল্টাতে দেখছি। দেশের হয়ে নিয়মিত গোল করছে। ব্রাজিলের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করছে। টিমের দায়িত্ব নিচ্ছে। আবার ক্লাবেও দুর্দান্ত। অনেক বেশি ফোকাসড লাগে এখন ওকে। মনকে যেন শুধু একটা লক্ষ্যে বেঁধে ফেলেছে।
রবিবারের এল ক্লাসিকোকেই ধরা যাক। বার্সেলোনায় পুওল, পিকে, আলভেজডিফেন্সে কেউ ছিল না। তার উপর বিধ্বংসী রোনাল্ডো। ব্রাজিলে এখন রিয়াল-বার্সেলোনা মুখোমুখি হলে সবাই রিয়ালকেই সমর্থন করে। রোনাল্ডোর জন্য। যেহেতু ও জাতে পর্তুগিজ। কিন্তু রবিবারের মেসি আমাকে মুগ্ধ করেছে। একাই তো বাঁচিয়ে দিল বার্সেলোনাকে। একাই তিন-চার জনকে ড্রিবল করে বেরিয়ে যাচ্ছে। ফ্রিকিক থেকে অবিশ্বাস্য গোল করছে। অনেকটাই যেন সেই ’৮৬-র দিয়েগোর স্টাইল। সে সময় দিয়েগোর পাশে বুরুচাগা, ভালদানো ছাড়া পাতে দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। কিন্তু সব সামলে একাই টেনেছে। রবিবার মেসিকেও যা করতে দেখলাম। দেশের হয়েও যেটা এখন করছে। আর্জেন্তিনার বর্তমান টিম আহামরি নয়। দি’মারিয়া, ইগুয়াইনরা বড় ক্লাবে খেলে বটে, কিন্তু দেশের জন্য বিশেষ কিছু করেনি। কিন্তু মেসি-র যা ফর্ম দেখছি, রিও-তে ও শুধু আমাদের কেন, বিশ্বের অনেক টিমকে একাই ভোগাবে। মনে রাখা দরকার, ও কিন্তু তখন ছাব্বিশে পড়বে। স্ট্যামিনা, ফর্ম, স্কিল সব দিক থেকেই যে বয়সটা একজন ফুটবলারের সেরা সময়।
এই পর্যন্ত পড়ে অনেকে ভাবতে পারেন আমি বুঝি মেসি-সমর্থক হয়ে গেলাম! সেটা সম্ভব নয়। কোনও ব্রাজিলিয়ানের পক্ষেই নয়। আমরা বরাবরই মনে করি, ফুটবলে ওদের চেয়ে আমরা অনেক এগিয়ে। লাতিন আমেরিকায় আমরাই শ্রেষ্ঠ টিম। কিন্তু আমরা, ব্রাজিলিয়ানরা ভাল ফুটবলারের কদর করতে জানি। ওদের মারাদোনা কিন্তু আমাদের দেশেও ভাল রকম জনপ্রিয়। কারণ, লোকটা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছে। তা সে পেলের সঙ্গে যতই ওর ঝামেলা হোক। কার্লোস তেভেজকে ব্রাজিল আবার অসম্ভব ভালবাসে। তেভেজ নিজের ফুটবলজীবনের অনেকটাই তো কাটিয়েছে আমাদের দেশে। তেমনই মেসিকেও ব্রাজিল পছন্দ করে। ওর ফ্যান ক্লাব হয়তো কোনও দিন রিও বা সাও পাওলোতে খুলবে না। তবে আমার মতো ব্রাজিলও এখন মানে যে, টিম হিসেবে আর্জেন্তিনা আমাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু বিশ্বের এক নম্বর ফুটবলার ওদেরই পকেটে!
|
এল ক্লাসিকোয় |
মেসি বনাম রোনাল্ডো |
৪ গোলে শট ৫
৬৮ পাস ৩১
২ তেকাঠিতে রেখেছেন ৩
৬ প্রতি আক্রমণে উঠেছেন ১৫
১ বিপক্ষের পাস ছিনিয়ে নিয়েছেন ২
০ ফাউল করেছেন ০
৬ ফাউলের শিকার ৩ |
এই মরসুমে |
মেসি |
রোনাল্ডো |
ম্যাচ ১১ |
গোল ১২ | গোলের পাস ৫ |
ম্যাচ ১১ |
গোল ১৪ | গোলের পাস ০ |
সম্ভবত রোনাল্ডো আরও বেশি বিখ্যাত হত, যদি মেসির সঙ্গে একই সময়ে না খেলত।
তিতো ভিলানোভা
(বার্সা কোচ) |
রোনাল্ডো সবার আগে প্র্যাক্টিসে আসত। সবচেয়ে বেশি ওয়ার্ক-আউট করত। তার ফল ও পেয়েছে। এখন অনেক শক্তিশালী। অনেক গতিশীল।
ফান ডার সার
(ম্যান ইউয়ে রোনাল্ডোর সতীর্থ) |
|
|
সেয়ানে-সেয়ানে ক্লাসিক টুকরো |
• রোনাল্ডো ‘এল ক্লাসিকো’ ইতিহাসে প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা ছ’ম্যাচে গোল করলেন।
• মেসির ফ্রি-কিক গোল শেষ তিন বছরে রিয়াল-গোলে মাত্র তিন নম্বর ফ্রি-কিক থেকে গোল।
• মেসির মাত্র ৬৮টি পাস রিয়ালের বিরুদ্ধে শেষ তিন বছরে সবচেয়ে কম।
• রোনাল্ডোর ৩১টি পাসও সর্বনিম্ন। গত এপ্রিলে ৩২টি পাস ছিল বার্সার বিরুদ্ধে।
• এই প্রথম রোনাল্ডো-মেসি দু’জনের একই ‘এল ক্লাসিকো’য় জোড়া গোল। আর পঞ্চম ম্যাচ যেখানে দু’জনেই গোল করেছেন।
• ইকের কাসিয়াসের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার হয়ে লা লিগায় মেসি রেকর্ড ৯টি গোল করলেন। আগের রেকর্ড স্যামুয়েল এটো-৮, দাভিদ ভিয়া-৭।
• ‘এল ক্লাসিকো’ গোল: মেসি ১৭। রোনাল্ডো ১০। আর এক আর্জেন্তিনীয় রিয়াল-কিংবদন্তি আলফ্রেদো দি’স্তেফানো (১৮) সর্বাধিক গোলদাতা। |