সম্পাদকীয় ২...
সবার উপরে
মেয়ের বয়স ষোলো হইয়াছে? শরীরে যৌবন আসিয়াছে? আর বিলম্ব নহে, এই বার উহাদের বিবাহ দিন। তাহা হইলেই আর ধর্ষিতা হইবার ভয় থাকিবে না। হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েত হইতে এই নিদান আসিলে এখন আর বিস্ময় জাগে না। অভ্যাস অতি বিষম বস্তু। খাপ পঞ্চায়েতের আমূল অশিক্ষাও ক্রমে অভ্যাস হইয়া গিয়াছে। যাঁহারা ‘স্বগোত্রে বিবাহ’ রোধ করিতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করিতে পারেন, তাঁহারা ধর্ষণের প্রতিষেধক হিসাবে বাল্যবিবাহের সুপারিশ করিলে অবাক হওয়া কঠিন। খাপ পঞ্চায়েতগুলি অপরিশীলিত পিতৃতন্ত্রের শেষ আস্তানা। সেই পঞ্চায়েতের মাতব্বররা যাহা ভাবেন, যাহা বলেন, সবই অশিক্ষার ফোড়ন দেওয়া পিতৃতন্ত্রের মতামত। ফলে, একের পর এক ধর্ষণের ঘটনায় হরিয়ানা যখন গোটা দেশে নিন্দা কুড়াইতেছে, তখন খাপ পঞ্চায়েত পিতৃতন্ত্রের হইয়া উত্তর করিল। খাপ পঞ্চায়েতের মতের উত্তরে যুক্তি প্রয়োগ অর্থহীন। এই অশিক্ষা নিন্দারও অতীত। যাঁহারা যুক্তির ভাষা বোঝেন, তাঁহাদের সমালোচনা করা চলে, তীব্র নিন্দাও করা যায়। সেই যুক্তি তাঁহারা মানুন আর না-ই মানুন, অন্তত যুক্তিটি তাঁহাদের মর্মে প্রবেশ করে। যে খাপ পঞ্চায়েত এমন নিদান দিতে পারে, তাহার মর্মে আর যাহারই স্থান থাকুক, যুক্তির স্থান আছে বলিয়া কিছুমাত্র ভরসা হয় না।খাপ পঞ্চায়েতের যুক্তি কেন ভুল, তাহা কাণ্ডজ্ঞানের পর্যায়ভুক্ত। ধর্ষণ কেবলমাত্র শারীরিক আকর্ষণের ফল নহে বিবাহ-বহির্ভূত যৌনতা এবং ধর্ষণের মধ্যে ফারাক চোখে আঙুল দিয়া দেখাইতে হয় না। অবিবাহিত পুরুষ এবং নারী যদি নিতান্তই যৌন ইচ্ছা সম্বরণ না করিতে পারেন বস্তুত, সেই ইচ্ছা সম্বরণের কোনও বাধ্যবাধকতাও নাই তবুও তাঁহারা যৌনতার জন্য পরস্পরের সম্মতি প্রার্থনা করেন। ধর্ষণ ভিন্ন প্রজাতির বস্তু। তাহাতে যৌন লালসা তৃপ্তির অনুষঙ্গ থাকিতে পারে, কিন্তু তাহা গৌণ। এক জন নারীকে দখল করিবার, তাঁহার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁহাকে ভোগ করিবার ‘গৌরব’ই ধর্ষণের মূল চালিকাশক্তি। এই জয় ‘পুরুষ’-এর জয় পিতৃতন্ত্র যে পুরুষের ছবিকে ধ্রুব জ্ঞান করে, তাহার। পিতৃতন্ত্র নারীকে সম্পত্তির বাহিরে ভাবিতে শিখে নাই খেত এবং নারী তাহার নিকট সমার্থক, উভয়ের ‘বীর’ভোগ্যা। পুংকেশররা, অতএব, জন্মসূত্রে প্রাপ্ত অধিকারজ্ঞানে নারীকে ভোগ করিতে চাহে। ধর্ষণ তাহারই ফল। খাপ পঞ্চায়েত এই যুক্তি বুঝিবে না। তাহাদের ‘না বোঝা’ তবু বোঝা সম্ভব তাহারা অশিক্ষা, দম্ভ, কূপমণ্ডূকতার সন্তান। কিন্তু বহু তথাকথিত শিক্ষিত পরিবারও যখন অল্পবয়স্ক মেয়ের বিবাহের বন্দোবস্ত করিয়া বলে, ‘সমর্থ মেয়েকে ঘরে রাখা মুশকিল’, তখন সমর্থ মেয়েরা কোথায় দাঁড়ায়? কুমারী মেয়ে আর বিবাহিত মহিলার ধর্ষণ নাকি সামাজিক অভিঘাতের নিরিখে পৃথক প্রথমটিতে ক্ষতি অপূরণীয়, কারণ তাহা সতীত্বের হানি করে! প্রকৃত প্রস্তাবে, রাজ্য-বর্ণ নির্বিশেষে খাপ পঞ্চায়েতের ফল্গুধারা বহু মনেই প্রবাহিনী। মেয়ে অপছন্দের পুরুষের সহিত প্রেম করিয়াছে বলিয়া যে মা সন্তানহত্যায় দ্বিধা করেন না, তিনি এই রাজ্যেরও। নারীর শরীর যে শুধুমাত্র তাঁহারই বিড়ম্বনা এই কথাটি বুঝিতে পশ্চিমবঙ্গের এক মাননীয় বিধায়ক খাপ পঞ্চায়েতের কোনও অশিক্ষিত প্রৌঢ়ের তুলনায় কিছু কম দড় নহেন। ‘প্রগতিশীল’ পশ্চিমবঙ্গেই যদি এই অবস্থা হয়, তবে ‘অনগ্রসর’ রাজ্যগুলি কোন অন্ধকারে আছে, কল্পনা করা চলে। যে সমাজ নারীকে পুরুষের সমমর্যাদায় দেখিতে শিখিবে, সেই সমাজে পৌঁছাইতে এখনও ঢের বাকি। তত দিন, সবার উপরে খাপ পঞ্চায়েত সত্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.