সম্পাদকীয় ১...
স্বখাতসলিল
বাস আর বিমানের মধ্যে ফারাক কী? একটিই প্রথম যানটি রাস্তায় চলে, দ্বিতীয়টি আকাশে। এই সহজ কথাটি কিংফিশার এয়ারলাইন্সের কর্তারা বুঝিতে চেষ্টা করেন নাই বলিয়া আজ আর তাঁহাদের উড়িবার সাধ্য নাই। এই বিমানসংস্থাটি, আরও কয়েকটি সংস্থার ন্যায়, ভারতের মুক্ত অর্থনীতির সন্তান। দেশের আকাশ হইতে যখন সরকারি একচেটিয়া আধিপত্য ঘুচিল, তখন বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা অসামরিক বিমান পরিষেবার ব্যবসা আরম্ভ করে। যত দিন দেশের আকাশ সরকারের হাতে ছিল, তত দিন বিমানযাত্রা ধনীর ব্যসন হিসাবেই পরিচিত ছিল। বাজারে বিমানসংস্থার সংখ্যা বাড়ায় যাত্রী বাড়াইবার দৌড় আরম্ভ হয়। গত শতকের সত্তরের দশকের গোড়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে ‘লো কস্ট এয়ারলাইন্স’-এর প্রচলন হইয়াছিল, ভারতীয় অসামরিক বিমান পরিবহণের বাজার তাহার অনুকরণ করে। এই বিমানে সফরের ভাড়া কম, কিন্তু বিমানযাত্রা বলিলে যে ছবিগুলি চোখের সম্মুখে ভাসে, তাহার কোনওটিই এই জাতীয় বিমানে নাই। বিমানবালিকারা টফিও খাওয়ান না, খাবারও নহে। ‘ফেলো কড়ি, খাও স্যান্ডুইচ’ ব্যবস্থা। এবং এখানেই বিমান এবং বাসের ফারাক সম্পূর্ণ মুছিয়া যায়। বস্তুত তাহাই স্বাভাবিক। বাসে উঠিলে যদি কেহ মুখ মুছিবার তোয়ালে প্রত্যাশা না করেন, বিমানেই বা কেন করিবেন?
যে বিমানসংস্থাগুলি এই বাস্তব বুঝিয়াছিল, তাহাদের ব্যবসা চলিতেছে। কিংফিশারের মালিক বুঝিতে অস্বীকার করিয়াছিলেন। তাঁহার সংস্থার বিমানে চড়িলে পর্দায় তাঁহার মুখ ভাসিয়া উঠিত। তিনি জানাইতেন, প্রত্যেক যাত্রীই তাঁহার ব্যক্তিগত অতিথি। ফলে, তাঁহার বাড়িতে অতিথিরা যে আপ্যায়ন পান, বিমানেও তদ্রুপ পাইবেন। বাড়ি আর বিমানে ফারাক না বুঝিলে যাহা হয়, তাহাই হইয়াছে। তিনি লো কস্ট এয়ারলাইন্সের ভাড়ায় বিশ্বমানের (অথবা, তাঁহার বাড়ির মানের) পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করিয়াছিলেন। ব্যবসার এই ছক কোনও বাজারেই টিকিবার নহে, ভারতের পরিবর্তিত বাজারে তো নহেই। ভারতের বাজারে বিমানের জ্বালানির দাম বহুলাংশে বাড়িয়াছে, তাহার উপর করের পরিমাণও বাড়িয়াছে। দেশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দরে পরিষেবা করও রীতিমত চড়া। ফলে, সমগ্র অসারিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রেই লাভের পরিমাণ হ্রাস পাইয়াছে। কিংফিশারের ন্যায় সংস্থার পক্ষে এই ধকল সামাল দেওয়া আরও কঠিন, কারণ তাহাদের ব্যবসাটিই এক ভুল নীতির উপর দাঁড়াইয়া ছিল। ভারতের সরকারি পরিবহণ সংস্থাটিরও নাভিশ্বাস উঠিতেছে। তবে, ব্যবসাবুদ্ধি যথার্থ হইলে যে এই বাজারেও টিকিয়া থাকা যায়, তাহার প্রমাণও আছে। বাজারের নিয়মকে অস্বীকার না করিলে বাজারও সচরাচর বিপদে ফেলে না।
কিংফিশার এখন যে অবস্থায় আছে, তাহাতে সংশয় হয়, ঝাঁপ ফেলিয়া দেওয়া ভিন্ন বোধ হয় আর উপায় নাই। তাহাতে নিঃসন্দেহে কর্মীদের ক্ষতি। সম্প্রতি এক কর্মীর স্ত্রী অর্থাভাবে আত্মহত্যা করিয়াছেন। অন্যরাও একই অর্থকষ্টে ভুগিতেছেন। সংস্থা বন্ধ হইলে আরও বড় ক্ষতি ভারতের অসামরিক বিমান পরিবহণ শিল্পের। একটি বড় সংস্থা ব্যবসা চালাইতে না পারিয়া ব্যবসা বন্ধ করিতেছে, ইহা এই দেশের পক্ষে আদর্শ বিজ্ঞাপন নহে। কিন্তু একটি শিক্ষণীয় উদাহরণ বটে। কী ভাবে ব্যবসা করিতে নাই, কিংফিশার ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিখাইয়া গেল। সদ্য অসামরিক বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র মিলিয়াছে। ফলে, পুঁজি সম্ভবত আসিবে। কিন্তু বাজারের নিয়ম লঙ্ঘন করিবার দুঃসাহস আর কেহ দেখাইবেন কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.