ভাড়া-মাসুল খতিয়ে দেখতে কমিটি রেলের
ংস্কারের রথে সওয়ার সরকার এ বার হাত দিচ্ছে রেলে।
তৃণমূল রেল মন্ত্রক ছাড়ার পরেই গত ১ অক্টোবর থেকে পরিষেবা কর বসেছে রেলের বাতানুকূল কামরার যাত্রিভাড়া এবং পণ্য মাসুলে। তার পর ট্রেন চালানোর খরচের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যাত্রিভাড়া ও পণ্য মাসুল কী হওয়া উচিত তা খতিয়ে দেখতে স্বাধীন ‘রেল ট্যারিফ অথরিটি’ গঠন করার কথা সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। যার জেরে প্রায় এক দশক পরে শুধু বাতানুকূল নয়, সব শ্রেণিতে যাত্রিভাড়া বাড়তে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করলেও তার সুপারিশ রেল মন্ত্রক মানতে বাধ্য থাকবে কি না, তা আজ স্পষ্ট করে বলেননি রেলমন্ত্রী সি পি জোশী। তাঁর কথায়, “ওই কমিটির রূপরেখা ও দায়িত্ব কী হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা।”
তৃণমূলের হাত থেকে রেল মন্ত্রক পাওয়ার পরে সংস্কারের পথে হাঁটলেও ট্যারিফ কমিটি গড়ার ক্ষেত্রে কিন্তু কার্যত তৃণমূলের মন্ত্রীকেই অনুসরণ করলেন জোশী। চলতি বাজেটেই এই ধরনের একটি কমিটি গঠন করার ঘোষণা করেছিলেন তৎকালীন রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী। কিন্তু সেই বাজেটেই দলীয় নীতি অগ্রাহ্য করে সব শ্রেণিতে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিপদ খোয়াতে হয়েছিল তাঁকে। দীনেশের জায়গায় এসে বাতানুকূল প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি বাদে অন্য সব শ্রেণিতে বর্ধিত যাত্রিভাড়া প্রত্যাহার করে নেন মুকুল রায়।
কিন্তু ঘটনা হল, যাত্রিভাড়া থেকে রেলের যা আয় হয়, তার ৮০ শতাংশই আসে স্লিপার ও সাধারণ শ্রেণি থেকে। ফলে শুধু বাতানুকূল শ্রেণির ভাড়া বাড়িয়ে যে সমস্যার সমাধান হবে না, তা বলছিল সংশ্লিষ্ট মহল। তাদের মতে, রেলকে যদি সত্যিই আয় বাড়াতে হয় তা হলে স্লিপার শ্রেণিতে ভাড়া বৃদ্ধির মতো কড়া অথচ বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তা ছাড়া ডিজেল, বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে গত চার-পাঁচ বছরে ট্রেন চালানোর খরচ এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে ভাড়া বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরেই চাপ আসছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর, কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক এমনকী যোজনা কমিশনের কাছ থেকেও। কিন্তু জনমুখী রাজনীতির চেনা ছকে চলে গত আট বছরে এই অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে চাননি লালু প্রসাদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলের দায়িত্বে থাকা কোনও শরিক নেতাই।
দেড় দশক পরে ফের রেল মন্ত্রক হাতে পেয়েছে কংগ্রেস। এবং এমন একটা সময়ে যখন গোটা সরকারের অভিমুখ সংস্কার এবং আর্থিক সুস্থিতি। ফলে ভাড়া ও মাসুল বাড়ানোর অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে রেল পিছপা হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনয় মিত্তলও আজ বলেন, “গত এক দশক ধরে যাত্রিভাড়া বাড়েনি। ফলে সময়ের চাহিদা মেনেই ভাড়া বাড়ানো উচিত।”
ভাড়া খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়লেও তার সিদ্ধান্ত মানতে রেল বাধ্য থাকবে কি না তা ঠিক করার ভার অবশ্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার উপর ছেড়ে দিয়েছেন জোশী। তিনি বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখে তবেই ওই কমিটির গড়া হবে। মন্ত্রিসভাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।” তবে রেল মন্ত্রক চাইছে, কমিটির সুপারিশ মানা বাধ্যতামূলক হোক। তা হলে ভাড়া বৃদ্ধির দায় সরাসরি রেল মন্ত্রক তথা ইউপিএ সরকারের উপর এসে পড়বে না। যদি সত্যিই কমিটির সুপারিশ মানা হয়, তা হলে কেবল বাজেটের সময় যাত্রিভাড়া ও মাসুল বৃদ্ধির যে রীতি রয়েছে, তা-ও ভবিষ্যতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে। বছরের মাঝেই প্রয়োজন মতো ভাড়া ও মাসুল বাড়ানো যাবে।
ডিজেলে ও গ্যাসের সিলিন্ডারে ভর্তুকি হ্রাস, রেলে পরিষেবা কর বসিয়ে ভাড়া বৃদ্ধির মতো অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে ফের রেলের সব শ্রেণিতে ভাড়া বৃদ্ধির কড়া অথচ বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথে ইউপিএ সরকার হাঁটতে পারে কিনা, তাই এখন দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.