সংস্কারের পথে কাঁটা না হতে অনুরোধ চিদম্বরমের
দেশের অর্থনীতির স্বার্থকে রাজনীতির কোন্দলের বাইরে রাখার জন্য বিরোধী দলগুলির কাছে সরাসরি আবেদন জানালেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করার কোনও মানে নেই। তাই ভোট-বাক্সের রাজনীতি যেন কোনও ভাবেই সংস্কারের পায়ে বেড়ি না-হয়, তা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি। আর সেই কারণেই এ নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসতে চান তিনি। ইঙ্গিত স্পষ্ট, সংস্কারের শাঁখে ফুঁ দেওয়ার পর এ বার বিল পাশে ‘সংখ্যা’ জোগাড়েও কোমর বাঁধছে কেন্দ্র।
চিদম্বরম বলেন, নিজেদের নীতি কার্যকর করার এক্তিয়ার প্রত্যেক সরকারেরই রয়েছে। বিরোধীরা অবশ্যই সেই নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন। কিন্তু তা বলে সেটি আটকে দেওয়া বেআইনি।
পেনশন, বিমা, বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারের ঘোষণা ইতিমধ্যেই করেছে কেন্দ্র। এবং এখনও পর্যন্ত এই সংস্কার এগিয়েছে প্রায় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের গতিতে। যা শিল্পমহল এবং শেয়ার বাজারকে উৎসাহ জুগিয়েছে যথেষ্ট।
কিন্তু চিদম্বরম বিলক্ষণ জানেন যে, সংস্কারের এই পর্বের আসল পরীক্ষা শুরু এ বারই। শুধুমাত্র প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির দরজা খোলা হয়তো সম্ভব। কিন্তু বিমা ও পেনশন ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি পুঁজিকে ছাড়পত্র দিতে প্রয়োজন হবে আইন সংশোধনের।
একটি বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
সে ক্ষেত্রে সংসদের দু’কক্ষেই বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলির উপর অনেকখানি নির্ভর করতে হবে কেন্দ্রকে। বিশেষত, রাজ্যসভায়। যেখানে সরকার কার্যত সংখ্যালঘু।
আর এ কথা জানেন বলেই বিজেপি-র সঙ্গে বৈঠকে বসতে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে রাজি নন চিদম্বরম। বরং তার আগেই এ নিয়ে কথাবার্তা শুরু করতে চান তিনি। অর্থমন্ত্রীয় কথায়, “জানি, এ নিয়ে আগুনে বিতর্ক হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত বিরোধীদলগুলিকে বোঝাতে পারব বলেই আশা। অধিবেশন শুরুর আগেই এ নিয়ে কথা বলতে চাই প্রধান বিরোধীদলের সঙ্গে।” একই ভাবে, পণ্য-পরিষেবা কর নিয়ে জট কাটাতে আগামী ২২ অক্টোবর এই সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান সুশীল মোদির সঙ্গেও কথা বলবেন তিনি।
এমনিতে পেনশন ও বিমায় বিদেশি লগ্নির দরজা খোলা নিয়ে আপত্তি করেনি সংসদের স্থায়ী কমিটি। যার মাথায় রয়েছেন এনডিএ জমানার অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিন্হা। কিন্তু তাদের পরামর্শ ছিল, এই দুই ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ২৬ শতাংশে বেঁধে রাখার। কিন্তু সে জায়গায় তা ৪৯% করতে চায় কেন্দ্র। তাই এ বিষয়ে আগাম বাধা আঁচ করে অর্থমন্ত্রীর দাবি, “বিমায় এই মুহূর্তে অন্তত ৫০০-৬০০ কোটি ডলার লগ্নি প্রয়োজন। ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত অংশীদারির পথ খোলা রাখলে, তবেই এই বিপুল টাকা ঢালতে আগ্রহী হবেন বিদেশি লগ্নিকারীরা।”
শুধু বিমা কিংবা পেনশনে নয়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আর্থিক সংস্কার যে কতটা জরুরি ছিল, তা এ দিন ফের মনে করিয়ে দিয়েছেন চিদম্বরম। বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, কেন কিছু কঠোর, অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতেও এখন পিছপা হচ্ছে না মনমোহন-সরকার। তাঁর দাবি, “সংস্কার না-হলে, গোত্তা খেয়ে নীচে নেমে যাবে বৃদ্ধির হার। মুখ থুবড়ে পড়বে অর্থনীতি। এবং পুরোদস্তুর ঝুঁকি থাকবে দীর্ঘমেয়াদি মন্দার কবলে পড়ার। যা কিছুতেই হতে দিতে পারি না আমরা। কারণ, সে ক্ষেত্রে বড়সড় প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়বে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকা। এঁদের অনেকেরই আবার বয়স যথেষ্ট কম। ফলে ভেঙে যাবে একটা আস্ত প্রজন্মের স্বপ্ন।”
তবে সংস্কার-দাওয়াই ধরলে যে অর্থনীতির হাল ফিরবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত চিদম্বরম। তাঁর মতে, দেশের অর্থনীতির সব থেকে খারাপ সময় কেটে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। তাই আগামী দিনে ক্রমশ উঠবে বৃদ্ধির হার। সংস্কার বেলাইন না-হলে অসম্ভব হবে না ৮-৯ শতাংশ বৃদ্ধির সড়কে ফিরে যাওয়াও। বিশেষত বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসা, বিমান পরিবহণ, এফএম রেডিও ব্রডকাস্টিং ইত্যাদিতে বিদেশি লগ্নি আসা এই পথ সুগম করবে বলে আশাবাদী তিনি।
কিন্তু আকাশছোঁয়া জিনিসের দাম? ডিজেলের দাম বাড়ার পর তো ঘি পড়বে সেই আগুনে। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদকদের বার্ষিক সমাবেশে এই প্রশ্নের জবাবে চিদম্বরমের যুক্তি, “বিদেশি লগ্নি এলে, আরও বাড়বে টাকার দাম। তাই তখন সার, পেট্রোপণ্য ইত্যাদি ডলারে কিনতে খরচও হবে কম। ফলে তাদের দাম কমার সম্ভাবনা থাকবে দীর্ঘ মেয়াদে।”
এই সব কিছুর পাশাপাশি ভাঁড়ারে ঘাটতি কমাতে আয় বাড়ানোরও রাস্তা খুঁজছেন চিদম্বরম। এর জন্য এক দিকে কর-ব্যবস্থার সংস্কার চাইছেন তিনি। তেমনই জোর দিতে চাইছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বেচে টাকা ঘরে তোলার দিকে। প্রথমে রাষ্টীয় ইস্পাত নিগম (আরআইএনএল)-এর মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় কেন্দ্র। চলতি আর্থিক বছরেই শুধু এই খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঘরে তুলতে চায় তারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.