পুজো মানে আসলে ফিরে দেখা। পায়ে পায়ে পেরিয়ে যাওয়া কর্মব্যস্ততা, অফিস, কলেজ। তার পরে ঝুপ করে ডুব দেওয়া শৈশবে। উজান ঠেলে মনটাকে এক বার ছেলেবেলায় পৌঁছে দিতে পারলেই মনখারাপের মেঘের দল একছুট্টে পালায়। আর শরতের আকাশ জুড়ে লুটোপুটি খেতে শুরু করে সাদা মেঘের ভেলা।
বর্তমানের গণ্ডি পেরিয়ে অতীতে ফিরে যাওয়ার ভাবনাই এ বছর হাতিয়ার মলপল্লি সর্বজনীন পুজোকমিটির। তাঁদের মণ্ডপ ফিরিয়ে আনবে এক টুকরো পুরনো কলকাতাকে। দেখা মিলবে রানার, ঝাঁকা মাথায় ফেরিওয়ালা আর টোলের পণ্ডিতের। টপ্পার সুরে আর ঘোড়ায় টানা ট্রামের ঘণ্টার শব্দে দর্শনার্থীরা নিমেষে পৌঁছে যাবেন পুরনো কলকাতার অলিগলিতে। সাবেক কলকাতার স্থাপত্যরীতি মাথায় রেখেই তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। প্রতিমার সাজেও থাকবে মানানসই সাবেকিয়ানা। এ ছাড়াও টুকরো ছবির কোলাজে রূপ পাবে এ শহরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি।
প্রকৃতির অনিবার্য নিয়মে জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হয় মানুষের জীবন। শৈশবের রেশ কাটে কৈশোরের হাত ধরে। আবার কৈশোরও পথ চলতে চলতে এক দিন মিশে যায় যৌবনের সঙ্গে। শেষে অনিবার্য ভাবে আসে বার্ধক্য। তার পরে পঞ্চভূতে বিলীন হওয়া আত্মার হয় নবজন্ম। জীবনের এই চক্র চলতেই থাকে নিরন্তর। এই ভাবনাকেই থিম হিসেবে বেছে নিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন অজয়নগর সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। এক উদ্যোক্তা জানান, বর্ধমান থেকে আনা কাঠের পুতুল আর খড়ের ব্যবহারে ফুটে উঠবে সমগ্র থিম।
দমদম পার্ক তরুণ সঙ্ঘ পুজোকমিটির ভাবনা রূপ পাবে পাঁচটি শব্দকে ঘিরে রং, উৎসব, দুর্গা, সৃষ্টি, মিলন। এক উদ্যোক্তার কথায়, উৎসব মানেই রঙিন। আর নতুন কিছু সৃষ্টির জন্য সবথেকে বড় সুযোগ মেলে দুর্গাপুজোতেই। তাই এ বছরের দুর্গোৎসব তথা মিলন উৎসবে দর্শনার্থীদের নতুন ভাবনায় মুগ্ধ করতে তাঁরা বদ্ধপরিকর।
পুজোর আনন্দের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দকে মিশিয়ে দিতেই পূর্ব কলিকাতা ছাত্র সমিতির থিম নাগাল্যান্ড। মণ্ডপ সেজে উঠবে নাগাল্যান্ডের পরিবেশকে মাথায় রেখে। রঙের খেলায় ফুটে উঠবে নাগা কারুকার্য। মণ্ডপসজ্জায় শোভা পাবে নাগা অলঙ্কার।
পূর্ব কলকাতারই আর এক পুজো, বেলেঘাটা প্রগতি সংসদ দশর্নার্থীদের জন্য মণ্ডপ সাজাচ্ছেন দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরের স্থাপত্যরীতিকে মাথায় রেখে। রং ও কাপড়ের মিশেলে পূর্ণতা পাবে কাল্পনিক এই মন্দির। প্রতিমার সাজেও দক্ষিণের স্পর্শ। পুরাণে আছে, মহিষাসুর বধের জন্য দেবী যখন রণসাজে সজ্জিত হন তখন দেবতারা তাঁকে সাজিয়েছিলেন নিজেদের অস্ত্র ও অলংকারে। সে দিন দেবী সেজেছিলেন রুদ্রাক্ষের গয়নায়। সেই থেকে অশুভের বিনাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে রুদ্রাক্ষ। এই ভাবনা মাথায় রেখেই বিবেকানন্দ সঙ্ঘ নিজেদের মণ্ডপ সাজাচ্ছে রুদ্রাক্ষ দিয়ে। মণ্ডপসজ্জায় প্রায় পঁচিশ হাজার রুদ্রাক্ষ ব্যবহার হচ্ছে। দেবীপক্ষ আসন্ন। তাই কুমোরটুলিতে চলছে শেষ মুহূর্তের তুলির টান। মণ্ডপে শিল্পীদের কর্মব্যস্ততাও তুঙ্গে। অপেক্ষা এখন শুধু উমার পিতৃগৃহে পা রাখার। |