বহুতল থেকে ‘মরণঝাঁপ’ রুখতে ছাদে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করে নজরদারি বাড়াতে বলছে পুলিশ। তবে সে ব্যবস্থা কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে নানা মহলে। কারণ, বছর দুয়েক আগে একই কারণে বিশেষ প্রহরার ব্যবস্থা করা হয়েছিল মেট্রোর প্ল্যাটফর্মগুলিতে। তাতেও রোখা যায়নি আত্মহত্যা। সোমবারও লাইনে ‘ঝাঁপ’ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন এক যুবক।
এ দিকে, পরপর ‘ঝাঁপের’ ঘটনা ঘটছে শহরের বহুতলগুলি থেকেও। রবিবারও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের সাউথ সিটি থেকে ‘ঝাঁপ’ দিয়ে মৃত্যু হয় এক প্রৌঢ়ের। এর আগে অগস্টে ওই বহুতল আবাসন থেকে ‘ঝাঁপ’ দিয়ে মৃত্যু হয় বৃদ্ধা মা ও দুই মেয়ের। তার ক’দিন পরেই বাইপাসের ধারে এক আবাসনে দুই স্কুলছাত্রী ‘আত্মহত্যা’ করে।
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতার কিছু বহুতল থেকেই বেশি ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাই ওই অঞ্চলের বহুতলগুলির কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি সতর্ক হতে বলেছে পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ শহরতলি) সুজয় চন্দ্র বলেন, “বহুতলগুলির কর্তৃপক্ষকে বলেছি, ছাদে এক জন নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হবে। তিনি নজর রাখবেন।”
তবে পুলিশের এই অনুরোধ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে নানা মহলে। ই এম বাইপাসের ধারে একটি বহুতল আবাসনের এক কর্তার বক্তব্য, বহুতলের ছাদে ও সিঁড়িতে নিরাপত্তারক্ষী রাখতে অনুরোধ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি, লিফ্ট-সহ সিঁড়িতে সিসিটিভি বসাতেও বলা হয়েছে। কিন্তু এই কাজ ব্যয়সাপেক্ষ। ওই আর্থিক বোঝার দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ওই কর্তা। বহুতলের অন্য জায়গা থেকেও ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। শুধু ছাদে ও সিঁড়িতে নিরাপত্তারক্ষী রেখেই কি সমস্যা মিটবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন তিনি।
বহুতল থেকে ঝাঁপ কী ভাবে ঠেকানো যায়, তা নিয়ে বহু আবাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলোচনা করেছে দক্ষিণ শহরতলির যাদবপুর, সার্ভে পার্ক, পূর্ব যাদবপুর, গড়ফা থানা-সহ বিভিন্ন থানার কর্তৃপক্ষ। কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ছাদে রক্ষী দিলে কে উঠছে, কেন উঠছে বা কী করছে, সে দিকে অন্তত খেয়াল রাখা যাবে। তবে সব আবাসনের পক্ষে ছাদে সর্বক্ষণ নিরাপত্তারক্ষী রাখা সম্ভব নয়। ফলে এই ব্যবস্থা নিয়েও আত্মহত্যা ঠেকানো কঠিন বলে ধারণা তাঁরও। অন্য দিকে, রবিবার সাউথ সিটিতে নিজের ফ্ল্যাটের বারান্দা থেকে ঝাঁপ দিয়ে ‘আত্মঘাতী’ হওয়া ধনঞ্জয় পাঠক নামে ওই প্রৌঢ় সত্যিই অবসাদগ্রস্ত ছিলেন কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ। পুলিশ জানায়, ঝাঁপ দেওয়ার কিছু আগে আবাসনের প্রবীণদের সভায় গিয়েছিলেন তিনি। আবাসনের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এমনকী, সম্প্রতি আবাসন থেকে ঝাঁপ দিয়ে তিন মহিলার মৃত্যুর পরে সেখানে সচেতনতা প্রচারেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। |