রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কাগজ কুড়োত বছর দশেকের ছেলেটি। আবর্জনার স্তূপ থেকে খুঁটে খেত খাবার।
এলাকার সমাজবিরোধীরাও বেশ কয়েক বার ছেলেটিকে দলে টানার চেষ্টা করেছিল। ডানলপ ব্রিজের কাছে নিয়মিত ছেলেটিকে কাগজ কুড়োতে দেখত বেলঘরিয়া থানার পুলিশ। শেষমেশ এক দিন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে করে তারা জানতে পারে ছেলেটি আসলে অনাথ। বিভিন্ন দুষ্কৃতী তাকে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছে বলেও পুলিশকে জানিয়েছে সে।
|
জয় চক্রবর্তী।
—নিজস্ব চিত্র। |
সোমবার জয় চক্রবর্তী নামে সেই বালকের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব নিলেন পুলিশ কাকুরা। জয়ের লেখাপড়া, থাকা, খাওয়া এমনকী হাতের কাজ শেখানোরও ব্যবস্থা করছে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট। জয়ের মতো এলাকার ভবঘুরে শিশু-কিশোরদের নিয়ে পুলিশের উদ্যোগে পুজোর পরে একটি অবৈতনিক স্কুলও খোলা হচ্ছে আড়িয়াদহ ফাঁড়িতে। ব্যারাকপুরের ডিসি (ট্রাফিক) কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “জয়ের মতো ছেলেরা নিজেদের অজান্তেই অপরাধের অন্ধকারে তলিয়ে যায়। আমরা আমাদের এলাকার মধ্যে সাধ্যমতো চেষ্টা করছি এই ধরনের শিশু, কিশোরদের মূল স্রোতে রাখার। লেখাপড়া যতটুকু শেখে শিখুক। তার পর হাতের কাজ শিখিয়ে স্বনির্ভর করতে পারলে, তবেই আমাদের দায়িত্ব শেষ।”
অন্য দিনের থেকে সোমবারটা জয়ের কাছে ছিল অন্য রকম। নতুন জামা, প্যান্ট, চকোলেটের বাক্স, বই, খাতা এ সব তার কখনও হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ হয়নি। পুলিশ কাকুদের দৌলতে সে সুযোগও মিলল এ দিন। জয়ের ইচ্ছে, স্কুলের গন্ডিটুকু পেরিয়েই মোটর মেকানিকের কাজ শেখা। পুলিশ আধিকারিকদের মাঝখানে বসে নিজের অতীত আর স্বপ্নের কথা একসঙ্গেই গড়গড় করে বলে গেল সে।
বরাহনগরের লেবুবাগান এলাকায় জয়ের বাড়িতে বাবা, মা, দাদা সকলেই ছিলেন এক সময়। বাবা ও মায়ের মৃত্যুর পরে দাদা আর খোঁজ রাখেনি ছোট ভাইয়ের। বছর তিনেক ধরে পথই সঙ্গী ছিল জয়ের। মূলত ডানলপ ব্রিজের কাছেই কাগজ কুড়োত সে। সেখানে এক সময় দুষ্কৃতীদের সঙ্গেও আলাপ হয় তার। তারা তাকে চুরির কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিল বলে জানিয়েছে জয়।
এক দিন বেলঘরিয়ার আই সি সুব্রত ভৌমিকের নজরে পড়ে জয়। দিন তিনেক আগে তিনি তার সঙ্গে কথা বলে সব জানার পরে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। এর পরেই ঠিক হয় জয়ের সব দায়িত্ব নেবে পুলিশ। আপাতত সে থাকবে ডানলপের ট্রাফিক গার্ডে। সেখানেই পুলিশ কাকুদের কাছে তার হাতেখড়ি হবে। স্কুলের সঙ্গে চলবে হাতের কাজ শেখার ক্লাস। জয় বলল, “আমার ইচ্ছে মোটর গাড়ির মেকানিক হব। গাড়ি চালানোও শিখব।” আর ডি সি (ট্রাফিক) বললেন, “ও ভাল কাজ শিখলে আমরা চেষ্টা করব আমাদের কমিশনারেটেই ওকে কাজ দেওয়ার।” |