যান-যন্ত্রণা ছিলই। সঙ্গে টানা লোডশেডিং আর বিপর্যস্ত মোবাইল পরিষেবায় যেন দুর্ভোগের বৃত্ত সম্পূর্ণ হল সোমবার।
সিইএসসি-র টিটাগড় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল রবিবার। তার জেরে এ দিনও বিদ্যুতের অভাবে ভুগতে হয় মহানগরীর কয়েকটি অঞ্চলের বাসিন্দাদের। উত্তর কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে সকাল থেকে টানা কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিং চলে। তার উপরে এ দিন বিএসএনএল-এর কলকাতা সার্কেল এলাকার কয়েকটি অঞ্চলে মাটির নীচে অপটিক্যাল ফাইবার লাইন কেটে যায়। ফলে ‘সেল-ওয়ান’ মোবাইল পরিষেবা কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায়। সকাল থেকে ‘সেল-ওয়ান’ গ্রাহকদের অনেকেরই মোবাইলে কোনও সিগন্যাল ছিল না। ফোন আসা-যাওয়া বন্ধ ছিল টানা কয়েক ঘণ্টা।
রবিবার টিটাগড় বিদ্যুৎকেন্দ্রে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেওয়ায় সিইএসসি-র নিউ কাশীপুর বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রটি বসে যায়। কারণ, টিটাগড় থেকেই সেখানে বিদ্যুৎ আসে। এর জেরে সাধারণ মানুষকে ভুগতে হয় দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। টানা কয়েক ঘণ্টা আলো না-থাকায় মাসের প্রথম রবিবারেই ধাক্কা খায় পুজোর বাজার। অনেক বাজারেই বিকেল থেকে আলো ছিল না। লোডশেডিংয়ের কারণে হাসপাতাল, বিমানবন্দরেও পরিষেবা ব্যাহত হয়। সন্ধ্যা সাতটার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। কিন্তু টিটাগড় কেন্দ্রের ওই যান্ত্রিক ত্রুটি সোমবারও পুরোপুরি সারানো যায়নি। ফলে সকাল ৯টা থেকেই সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুৎ-বিভ্রাট শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে লোডশেডিং চলে বিভিন্ন অঞ্চলে। সিইএসসি সূত্রের খবর, সকালে ৬০-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ-ঘাটতি ছিল। দুপুরের পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। সিইএসসি-র কর্তারা জানিয়েছেন, টিটাগড়ে মেরামতি চলতে থাকায় এ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। তবে জরুরি পরিষেবায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল বলেই তাঁদের দাবি।
রবিবার বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে কলকাতা বিমানবন্দরেও কিছুক্ষণের জন্য আলো চলে গিয়েছিল। বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই বিপত্তির কারণ খুঁজতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ দিন মহাকরণে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত। ছিলেন সিইএসসি এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তারাও।
পুরনো বিমানবন্দরে শুধু সিইএসসি-র নিউ কাশীপুর বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। যে কারণে রবিবার ওই কেন্দ্র বসে যাওয়ায় বিমানবন্দরেও বিদ্যুৎ-বিভ্রাট দেখা দিয়েছিল। পুরনো বিমানবন্দরে বিকল্প ব্যবস্থা নেই। মণীশবাবু বলেন, “এই ব্যবস্থা আধুনিক নয়। আমরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বলেছি, বিকল্প পদ্ধতিতেও বিদ্যুৎ পাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। যাতে কোনও একটি উৎস খারাপ হয়ে গেলেও অন্যটির মাধ্যমে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়।” অন্য দিকে, মোবাইলে সমস্যার মূলে ছিল ভূগর্ভস্থ ফাইবার লাইনে কোপ। বিএসএনএল-এর কলকাতা সার্কেলের কর্তারা জানান, সল্টলেক, দমদম, হাওড়া-সহ কয়েকটি জায়গায় মাটির তলায় অপটিক্যাল ফাইবার লাইন কাটা পড়েছিল। সরকারি বরাত নিয়ে যে সব ঠিকাদার সংস্থা ওই সব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে, তাদের দোষেই লাইনগুলি কাটা যায় বলে ওই কর্তাদের অভিযোগ। লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় সোমবার সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন অঞ্চলে ‘সেল-ওয়ান’ মোবাইল পরিষেবা একেবারে বসে যায়। দ্রুত সেগুলি সারিয়ে তোলার কাজ চলছে বলে বিএসএনএল-এর কর্তারা জানান। |