পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সংঘাতের আবহেই আজ, মঙ্গলবার কলকাতা পুরসভার সামনে বামফ্রন্টের সমাবেশ। পুলিশ সমাবেশের অনুমতি না-দেওয়ায় কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের তরফে সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্রকে ফ্যাক্সে ঘটনা জানানো হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে সমাবেশের জন্য অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন সাড়া দেয়নি। লালবাজারের পুলিশ-কর্তারা জানিয়েছেন, জোর করে সমাবেশ করলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন, পুলিশি অত্যাচার হলে মোকাবিলা করতে বামেরা প্রস্তুত! সব মিলিয়ে পুজোর মুখে কলকাতা পুরসভা চত্বরে আজ টানটান উত্তেজনা থাকছে!
তবে পুর-সমাবেশ ঘিরে এই সংঘাতের আবহ তৈরির পিছনে লালবাজারের-প্রশাসনের ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতাকেই দায়ী করছে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। বামেদের তরফে সমাবেশের কথা জানিয়ে পুলিশকে চিঠি পাঠানো হয়েছিল ৮ সেপ্টেম্বর। গত সপ্তাহে পরপর কয়েকটি কর্মসূচিতে শহর লন্ডভন্ড হওয়ার পরে পুলিশ ঠিক করে, ৮ অক্টোবরের পর থেকে আপাতত পুজোর মরসুমে কোনও সংগঠনকেই ধর্মতলা চত্বরে মিছিল বা সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না। পুরসভার সামনে তাদের সমাবেশের অনুমতি না-দেওয়ার কথা বামেদের জানানো হয় শনিবার। তার পর থেকে ৭২ ঘণ্টায় কলকাতা জেলা সিপিএমের নেতারা বারেবারে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিত কুমার পচনন্দার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সিপি বা অন্য পুলিশ-কর্তাদের দিক থেকে সাড়া মেলেনি। বরং নিউ মার্কেট থানার ও সি লিখিত অনুমতি বাতিলের কথা জানিয়ে দিয়েছেন।
সিপিএমের বক্তব্য, পুজোর বাজারের ক্রেতাদের অসুবিধার কথা বলেও পুলিশ যদি তাদের সঙ্গে আলোচনায় আসত, তা হলে রফাসূত্র বার করা যেত। কলকাতা জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, “আমরা অনমনীয় ছিলাম না! উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সমাবেশ ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে করা যায়নি পুলিশের আপত্তিতে। পুলিশের অনুরোধ মেনে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে সরে গিয়েছিলাম। এ বার সিপি ফোনই ধরেননি! বিরোধীদের কথা তো শুনতে হবে! ওঁরা শুনতে চাননি। আমরা সমাবেশ করব। কী হয়, দেখা যাবে!” এর মধ্যেই বিমানবাবু আলিমুদ্দিনে বলেন, “সভা-সমিতি করার, বাক্-স্বাধীনতা হরণের চক্রান্ত চলছে। আইনের শাসন পরিচালনা হোক, আমরা সবাই চাই। কিন্তু আইনানুগ অনুমতি চাইলে দেবে না! তা হলে প্রতিবাদ করেই কথা বলতে হবে। লোক আসবে। পুলিশ অত্যাচার করলে মোকাবিলা করেই সভা হবে!” প্রদেশ কংগ্রেসের নেতা মানস ভুঁইয়াও মন্তব্য করেন, গণতন্ত্রে এ ভাবে সভা-সমাবেশের অধিকার আটকানো উচিত নয়। আজকের সভার মূল বক্তা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বললেন, “ওঁরা (সরকার) ভয় পাচ্ছেন! কিন্তু কথা তো আমাদের বলতেই হবে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে তার দায়িত্ব আমাদের নয়।”
কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ সেন এ দিন জানান, বাধ্য হয়েই তাঁরা মুখ্যসচিবকে ফ্যাক্স করে অনুমতি চেয়েছেন। তাঁদের সভা যে ধর্মতলায় নয়, বরং চ্যাপলিন স্কোয়ারের কাছে, সে কথা জানিয়েই মুখ্যসচিবকে তাঁরা লিখেছেন, তা সত্ত্বেও পার্শ্ববর্তী নিউ মার্কেটে পুজোর বাজারে মানুষের অসুবিধা হলে তা সামলানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবক রাখা হবে। মহাকরণ বা লালবাজার থেকে অবশ্য এ দিন রাত পর্যন্ত বামেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি। তবে প্রশ্নের জবাবে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) জাভেদ শামিম বলেন, “সব সংগঠন ও দলের কাছেই আবেদন জানিয়েছি, ৮ তারিখের পরে কোনও কর্মসূচি না-করার জন্য।” কিন্তু বামেরা তো সভা করবে বলেছে? শামিমের বক্তব্য, “যদি ওঁরা করেন, পরিস্থিতি অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, দেখা যাবে।”
এরই মধ্যে সিপিআইয়ের এক সংগঠনকে এ দিনই পুলিশ চিঠি দিয়ে জানায়, ৭ নভেম্বর ধর্মতলার লেনিন মূর্তিতে মালা দেওয়া বা কোনও কর্মসূচি (নভেম্বর বিপ্লব স্মরণে) রাখা যাবে না। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারের দাবি, “লেনিন মূর্তিতে যাওয়া আটকানোর ক্ষমতা এই সরকারের নেই!” |