দলের শহর সভাপতি তথা কাউন্সিলর খোকন দাসকে হেনস্থার অভিযোগে গভীর রাত পর্যন্ত বর্ধমান থানায় বিক্ষোভ দেখালেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। দলেরই অন্য একটি গোষ্ঠী শহরে দুষ্কর্ম করলেও তাদের ধরা হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলে পুলিশকে গালিগালাজ করে বিক্ষোভকারীদের একাংশ। শেষে উত্তেজিত সমর্থকদের সরিয়ে নিয়ে যান খোকনবাবুরা। পুলিশ জানায়, কাউন্সিলরের উপরে হামলায় অভিযুক্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার রাতে। খোকনবাবু অভিযোগ করেন, শহরের নীলপুরে একটি সভা সেরে মোটরবাইক নিয়ে বেরোনোর পরে কয়েক জন তাঁর উপরে চড়াও হয়। গলা থেকে সোনার হার ছিনিয়ে তাঁকে মারধর শুরু করে। স্থানীয় একটি ক্লাবের কিছু সদস্য ও তৃণমূলের কর্মীরা ওই দুষ্কৃতীদের হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করেন বলে জানান খোকনবাবু। এর পরেই তিনি অভিযোগ জানাতে থানায় যান।
এই ঘটনার খবর পেয়ে থানায় হাজির হন তৃণমূলের বেশ কিছু লোকজন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই তৃণমূল সমর্থকেরা থানার ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। পুলিশ ও তৃণমূলেরই কিছু নেতা-কর্মী তাঁদের বাধা দেন। তা সত্ত্বেও কয়েক জন ভিতরে ঢুকে পড়েন। তাঁরা পুলিশকে গালিগালাজ করতে থাকেন। অনেক দিন ধরেই নীলপুরে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল চলছে। তার জন্য পুলিশকেই দায়ী করতে থাকেন ওই তৃণমূল সমর্থকেরা।
বর্ধমান থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় ছুটিতে রয়েছেন। ঘটনার খবর পেয়ে থানায় গিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দেবাশিস সরকার খোকনবাবু-সহ তৃণমূলের কয়েক জনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। অভিযুক্তদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন তিনি। থানার বাইরে জড়ো হওয়া লোকজন তখনও বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছেন। শেষে পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জার অনুরোধে খোকনবাবুরা তাঁদের সরিয়ে নিয়ে যান। হুমকি দিতে দিতে ফিরে যায় বিক্ষোভকারীরা।
জেলা পুলিশের এক কর্তা সোমবার জানান, কাদের নামে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ করা হবে, তা নিয়ে খোকনবাবুর অনুগামীরা দ্বিধায় পড়ে যান। রাত প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এ নিয়ে টানাপোড়েন চলে। বারবার নানা লোকজনের নাম লেখা ও কাটা চলতে থাকে। শেষে কয়েক জনের নামে অভিযোগ হয়। অভিযুক্তদের তালিকায় দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর নামও দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ওই পুলিশকর্তার। ঘটনায় জড়িতদের নাম দিয়ে অভিযোগ জানাতে কেন টানাপোড়েন হয়, সে নিয়ে অবশ্য খোকনবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
খোকনবাবুর অনুগামী তৃণমূল নেতা শিবশঙ্কর ঘোষের অভিযোগ, “দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের গোষ্ঠীর নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করছিল পুলিশ। তাই খোকনের মার খাওয়ার খবর পেয়ে কর্মী-সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।” তবে তাঁর দাবি, “থানায় ঢুকে কাউকে গালিগালাজ করা হয়নি। যা হয়েছে, থানার সামনে রাস্তার উপরে।” তিনি জানান, মারধরের ঘটনায় ১৩ জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। তার পরেই তাঁদের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কয়েক জন গা ঢাকা দিয়েছেন বলে শিবশঙ্করবাবুর দাবি। পুলিশ সুপার বলেন, “অভিযুক্তদের মধ্যে কারা এই ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তা খতিয়ে দেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |