আরও বেশি স্কুল কেন নয়, উঠছে প্রশ্ন
লক্ষ্য ১০ হাজার, রাজ্য হন্যে মাদ্রাসার সন্ধানে
মুখ্যমন্ত্রী চান দশ হাজার মাদ্রাসাকে সরকারি স্বীকৃতি দিতে। কিন্তু বাদ সেধেছে মাদ্রাসাগুলিই। শ’খানেকের বেশি আবেদনই আসেনি।
উপায়ান্তর না দেখে এখন গ্রাম-গ্রামান্তরে মসদিজে মসজিদে ঘুরে মাদ্রাসার খোঁজ শুরু হয়েছে। কারণ অনুমোদনহীন ওই মাদ্রাসাগুলি প্রধানত মসজিদ-কেন্দ্রিক। সেখানে কেবল কোরানের পাঠ ও তর্জমা এবং সেই সঙ্গে শরিয়তি আদব-কায়দা শেখানো হয়। সাধারণত যাদের খারিজি মাদ্রাসা নামেই চেনে সবাই।
এর বাইরেও অবশ্য বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দীর্ঘকাল ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালায়। সেখান থেকে ফি বছর বিভিন্ন পরীক্ষায় সাফল্যের ছাপ রাখেন ছাত্রছাত্রীরা। তারাও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষিত ওই প্রকল্পে সাড়া দিতে নারাজ। তাদের বেশির ভাগই মনে করে, এখন মাদ্রাসার সংখ্যা না বাড়িয়ে সাধারণ স্কুলই গড়া উচিত। কোনও কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মনে করে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গায়ে মাদ্রাসা তকমা লাগালে সেখান থেকে পাশ করা পড়ুয়াদের কাজ পেতে বরং অসুবিধাই হয়।
সরকারে এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, রাজ্যের ১০ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে তাদের আর্থিক দায়-দায়িত্ব নেবে না সরকার। প্রশ্ন ওঠে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এত মাদ্রাসা পাওয়া যাবে কোথায়!
মাদ্রাসা পর্ষদের স্বীকৃতি নেই। কিন্তু তাদের পাঠ্যক্রম মেনে চলে বেশ কিছু মাদ্রাসা। সরকারের ইচ্ছা, তারা আবেদন করুক অনুমোদনের জন্য। কিন্তু আর্থিক সহায়তা ছাড়া স্বীকৃতি পেতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না তারাও। এখন তাই মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষিত লক্ষ্য পূরণের জন্য রাজ্য সরকার খারিজি মাদ্রাসাগুলিকেও স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবছে। স্বীকৃতিহীন মাদ্রাসাগুলির মনোভাব টের পেয়ে এখন সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর ঘুরপথে ওই সব মাদ্রাসাকে কিছু আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পথ খুঁজছে কেন্দ্রীয় অনুদান কাজে লাগিয়ে।
কিছু মাদ্রাসা অবশ্য রয়েছে, যারা রাজ্যের মাদ্রাসা বোর্ডের পাঠ্যক্রম মেনে আধুনিক বিষয়ের পঠনপাঠন চালায়, কিন্তু সরকারি টাকা পায় না। সেগুলির জন্য সংখ্যালঘু দফতর একটি পরিকল্পনা করেছে। এই ধরনের প্রতিটি মাদ্রাসায় আধুনিক বিষয়ের তিন জন শিক্ষকের জন্য প্রতি মাসে ৬ থেকে ১২ হাজার টাকা সাম্মানিক দেওয়া হবে। পাঠাগার তৈরির জন্য এককালীন ৫০ হাজার টাকা ও বছরে ৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে। বিজ্ঞান শিক্ষার যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণাগার তৈরির জন্য এককালীন ১ লক্ষ টাকা ও প্রতি বছর ৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হবে। সেখানকার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে চায় সরকার।
কিন্তু এই ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব বেশি নয়। খারিজি মাদ্রাসাই সংখ্যায় বেশি। তাদের নিয়মিত সরকারি সহায়তার আওতায় আনতে গেলে সেখানে আধুনিক পঠনপাঠনের বন্দোবস্ত করা জরুরি বলে সরকারি আধিকারিকদের মধ্যেই কেউ কেউ মনে করেন। কিন্তু খারিজি মাদ্রাসাগুলিতে যেহেতু কেবল কোরান-কেন্দ্রিক পড়াশোনা এবং মসজিদগুলিতে যেহেতু পুরোদস্তুর স্কুল চালানোর পরিকাঠামো নেই, তাই তাদের সরকারি ব্যয়বরাদ্দের আওতায় স্থায়ী ভাবে আনা কঠিন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া কোটা কী ভাবে পূরণ হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সরকারি কর্তারা।
এর আগে বামফ্রন্ট আমলে রাজ্যের কয়েকশো মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাদের আর্থিক দায়-দায়িত্বও সরকার নিয়েছে। তার উপর শিশুশিক্ষা কেন্দ্র (এসএসকে), মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (এমএসকে) নামে বেশ কিছু মাদ্রাসাকেও স্বীকৃতি দিয়ে সরকারি আওতায় আনা হয়েছে। সেই সময় এসএসকে এবং এমএসকে করতে চেয়ে প্রায় ৬ হাজার আবেদন জমা পড়ে। এখন সেগুলিকেই অনুদানহীন মাদ্রাসা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি ইতিহাসের অধ্যাপক ওসমান গণি বলেন, “একুশ শতকে এসে সরকার কেন মাদ্রাসার সম্প্রসারণে আগ্রহী হবে? তাতে মুসলিম সমাজ এগিয়ে যাওয়ার বদলে আরও পিছিয়ে পড়বে। সরকারের কী সেটাই কাম্য? তার চেয়ে সংখ্যালঘুদের শিক্ষার আঙিনায় আনতে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় বেশি করে স্কুল গড়া হোক।” প্রবীণ শিক্ষিকা মীরাতুন নাহারেরও তাই মত। তিনি বলেন, “যেখানে শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয়, সেখানে সরকারের যুক্ত হওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে খারিজি মাদ্রাসার ক্ষেত্রে। সরকার সাধারণ শিক্ষা উপরে জোর দিক।”
এই রাজ্যে সংখ্যালঘু পরিচালিত বেশ কিছু সংস্থা সংখ্যালঘুদের মধ্যে শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এমনকী তাঁদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছেন অনেকে। তাঁরা কিন্তু তাঁদের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ‘মাদ্রাসা’ কথাটি যুক্ত করতে রাজি নন। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, সংখ্যালঘু উন্নয়নের স্বার্থেই মাদ্রাসা নয়, প্রয়োজন আরও স্কুলের। শুধুই ধর্মীয় শিক্ষার বদলে প্রসার ঘটানো দরকার আধুনিক শিক্ষার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.