বিবেচনার আশ্বাসে জল ঢেলে রাজ্য সরকার ফের জানিয়ে দিল, এখনই বাসভাড়া বাড়ানো হবে না। শনিবার মহাকরণে পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বৈঠকের পর পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র জানান, এ নিয়ে কোনও আলোচনাও এ দিন হয়নি।
সরকারের এ দিনের সিদ্ধান্তের কথা জেনে ক্ষুব্ধ বাস সংগঠনগুলি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা না হলে আগামী মঙ্গলবার থেকে লাগাতার ধর্মঘট শুরু হবেই। ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে অনড় শহরের ট্যাক্সি সংগঠনগুলিও। ভাড়া না বাড়লে তারাও মঙ্গলবারের পর ধর্মঘটের পথে হাঁটবে বলে এ দিন ইঙ্গিত দিয়েছে। এ দিন জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট-এর তরফে তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মন্ত্রীকে অনুরোধ করছি, দ্রুত বাস ভাড়া বাড়ানোর কথা ঘোষণা করুন। পুজোয় তা হলে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হবে না। এই শিল্প কার্যত কোমায় চলে গিয়েছে। ভাড়া বাড়ানো ছাড়া একে বাঁচানোর অন্য কোনও উপায় নেই।” তপনবাবু জানান, এ দিনই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় তাঁদের সংগঠনের যে প্রতিনিধিরা আছেন, তাঁদের সঙ্গে কলকাতায় বৈঠক হয়েছে। |
সেখানেও বাসভাড়া বৃদ্ধির ব্যাপারে অনড় থাকেন বাসমালিকরা। পরে পরিবহণ মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, “উৎসবের মরসুমে যাঁরা ধর্মঘট ডেকেছেন, তাঁদের তা প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানাচ্ছি। কারণ বন্ধ করে সমস্যার সমাধান হয় না।” ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি পরিবহণ সংক্রান্ত মন্ত্রিগোষ্ঠীর বিবেচ্য বলে জানিয়ে মদনবাবু বলেন, এখনও পর্যন্ত ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি।
পুজোর মুখে বাসমালিকরা ধর্মঘটের পথে হাঁটলে শহরের পরিবহণ পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে বলে আশঙ্কা নিত্যযাত্রীদের। এমনিতেই শহরের পথে বাস-ট্যাক্সির সংখ্যা দিন দিন কমছে। কমছে সরকারি বাসের সংখ্যাও। মালিকদের যুক্তি, লোকসান সামাল দিতেই তাঁরা গাড়ি বসিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তার ফলে, নিত্যযাত্রীদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। চাপ বাড়ছে মেট্রো রেলের উপরে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি যথেষ্টই সঙ্গীন।
শহরের কয়েকটি অটোরিকশা রুটের সংগঠনের নেতৃত্বের সঙ্গেও এ দিন বৈঠক করেন পরিবহণমন্ত্রী। বেআইনি ভাবে বেশি ভাড়া নেওয়া, যাত্রী হেনস্থা-সহ একাধিক বিষয়ে নানা অভিযোগ সংগঠনের নেতারা মেনে নিয়েছেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। মদনবাবু জানান, সরকার বিষয়টির উপরে নজর রাখছে। কোনও অভিযোগ পেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “বেআইনি ভাবে অটোও চালাবে, আবার চোখও রাঙাবে, এটা সরকার মেনে নেবে না।” পরিবহণমন্ত্রী জানান, ১৩ অক্টোবর ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে অটো সংগঠনগুলির নেতৃত্বের সঙ্গে ফের আলোচনা হবে। কোন রুটের অটোভাড়া বাড়ানো হয়েছে, কেন হয়েছে এবং কীসের ভিত্তিতে হয়েছে সরকারকে তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে। রাজ্য সরকারও ওই দিন একটি রিপোর্ট পেশ করবে। অতীতের বহু বারের মতো পরিবহণমন্ত্রীর ফের হুঁশিয়ারি, “শহরে প্রচুর অটো বেআইনি ভাবে চলছে। মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। এগুলো চলতে দেওয়া হবে না। রাজ্য সরকার ধাপে ধাপে এ সবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, অটোচালকদের পোশাক এবং বুকে ‘ব্যাজ’ লাগানো নিয়ে মন্ত্রীর প্রস্তাব অটো সংগঠনগুলির প্রতিনিধিরা মেনে নিয়েছেন। |