এই টিমও উঠে দাঁড়াতে পারে, দরকার সঠিক রাস্তা চেনানো |
শনিবার সন্ধে থেকেই বেশিরভাগ মোহনবাগান সমর্থক সেই চেনা স্লোগান তুলে দিয়েছেন। ‘কোচ তাড়াও’!
একে দু’বছরের বেশি ক্লাবে কোনও ট্রফি ঢোকেনি। তার ওপর ফেডারেশন কাপে পরপর দুূ’বছর গ্রুপ লিগ থেকেই লজ্জার বিদায়। এ দিন আই লিগে নেমেই বিশ্রী হার। মোহনবাগান সমর্থকদের কি খুব দোষ দেওয়া যায়!
তবে আমি এখনই ‘গেল গেল রব’ তোলার বিরোধী। কারণ, আমার মনে পড়ে যাচ্ছে ৩৫ বছর আগে এর থেকেও খারাপ অবস্থা থেকে এই মোহনবাগানেরই উঠে দাঁড়ানোর লড়াই। যার পুনরাবৃত্তি আমার মনে হয়, টোলগে-ওডাফা-নবি-জুয়েলদের টিমও করে দেখাতে পারে। শুধু এই টিমের ফুটবলারদের ঠিক ভাবে রাস্তা দেখাতে হবে।
পঁয়ত্রিশ বছর আগে সাতাত্তরে আমাদের মোহনবাগান ছিল স্বপ্নের টিম। ইস্টবেঙ্গল থেকে শ্যাম থাপা সে বার প্রথম এসেছে। বিশাল হইচই ছিল ব্যাপারটা নিয়ে। অনেকটা এ বার টোলগের মোহনবাগানে আসার মতোই। এ ছাড়াও সবাই তো তারকাহাবিব, আকবর, সুভাষ ভৌমিক, প্রসূন, গৌতম, সুধীর কর্মকার, প্রদীপ চৌধুরী। কাকে ছেড়ে কার কথা বলব! কোচ ছিলেন প্রদীপদা। অথচ মরসুমের শুরুটা হয়েছিল দুঃস্বপ্নের। আমরা মরসুম শুরু করলাম কলকাতা লিগ আর ফেডারেশন কাপ হেরে। লিগে ভাঙা ইস্টবেঙ্গলের কাছে দু’গোলে হেরেছিলাম। ফেড কাপে আইটিআইয়ের মতো দলের কাছেও হেরে গিয়েছিলাম। ভাবাই যায় না!
কিন্তু মরসুমের শেষে ক্লাব তাঁবুতে ঢুকেছিল চারটে ট্রফি। মোহনবাগানের ইতিহাসে সেই প্রথম ত্রিমুকুট এসেছিল একই মরসুমে আইএফএ শিল্ড, রোভার্স আর ডুরান্ড কাপ জেতায়। সঙ্গে বরদলৈ ট্রফি। আমাদের সেই সাঙ্ঘাতিক ভাবে উঠে দাঁড়ানোটা সম্ভব হয়েছিল কোচ প্রদীপদার জন্য। প্রথমত, আমাদের কোথায়-কোথায় ভুল হচ্ছিল সেটা খুব ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয়ত, প্রদীপদা গোটা টিমটাকে দারুণ ভাবে তাতিয়ে তুলেছিলেন। মনোবল বাড়ানোর কাজটা সেই সময় ধীরেনদার মতো কর্মকর্তারাও করেছিলেন।
আমার মনে হয়, নবিদের টিমটাকেও ওই ভাবে চাঙ্গা করে তোলা সম্ভব। ২০০২-এ আমার কোচিংয়েও তো মোহনবাগান জাতীয় লিগের প্রথম ম্যাচেই হেরেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভারতসেরার ট্রফিটা আমরাই জিতেছিলাম। সেই বিরাট দায়িত্ব এখন অবশ্যই সন্তোষ কাশ্যপের কাঁধে। ফুটবলারদের কী কী অসুবিধে হচ্ছে সেটা তো কোচকেই খুঁজে বার করতে হবে।
মোহনবাগানের এই দলটায় ডিফেন্সকে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ফুটবলার নেই। মাঝমাঠে এমন কেউ নেই, যে ম্যাচটার গতিটা ঠিকঠাক বুঝতে পারে। আর এই খামতিগুলো কাশ্যপকেই মেরামত করতে হবে। নিজের কোচিংজ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, ম্যাচ রিডিং দিয়ে। অরুণ ঘোষও তো চুয়াত্তরে আমাদের মোহনবাগানকে কোচিং দিয়ে লিগে খারাপ করার পরেও ডুরান্ডে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিলেন।
মোহনবাগান দলের এই বিপর্যয়ের সময় যেটা একেবারেই করা উচিত নয় তা হল, কোনও ফুটবলারের সম্পর্কে অনাস্থা প্রকাশ। এই দুঃসময়ে ফুটবলারদের সামনা-সামনি তো বটেই, এমনকী আড়ালেও দোষারোপ করা মানে দলের মনোবল আরও তলানিতে পাঠিয়ে দেওয়া। এই ব্যাপারটাও কোচ হিসেবে কাশ্যপকেই সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। ফুটবলারদের সঙ্গে প্রত্যেক ম্যাচের আগে আলোচনা করতে হবে। তবে সেই টিম-মিটিং যেন হয় কোচিং স্টাফের সঙ্গে ফুটবলারদের। কর্মকর্তাদের সেখানে না থাকাই উচিত। তবে কর্মকর্তাদেরও একটা বিরাট দায়িত্ব আছে। সেটা ফুটবলারদের উদ্বুদ্ধ করার। সাহস যোগানোর।
মুম্বই থেকে আসা সন্তোষকে ময়দানি ফুটবলের ‘ভাষা’টা বুঝতে হবে। এর আগেও অনেক ভিনদেশি বা বিদেশি কোচ মোহনবাগানে ব্যর্থ হয়ে বিদায় নিয়েছে। প্রদীপদারও কিছুটা সমস্যা হয়েছিল হাবিব-আকবর-শ্যামকে নিয়ে। বুদ্ধি করে প্রদীপদা তিন সুপারস্টারকেই কাজে লাগিয়েছিলেন। তবে একা কাশ্যপ বা শুধু টোলগে-ওডাফাকে দোষ দেব না। ওই যে শুরুতেই লিখেছি এখন পুরো মোহনবাগান টিমটাকেই সঠিক রাস্তা চেনাতে হবে। |