পাহাড়ে খামখেয়ালি ছকে আরও জোরালো কোচ-বিদায়ের বাজনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
লাজং এফসি- ২ (বৈথান, লালরামলুয়াহা)
মোহনবাগান- ০ |
পাহাড়েই কি বিদায়-টিকিট হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে? নাকি পরের শুক্রবার যুবভারতীতে প্রয়াগ ম্যাচের পরেই শেষের কবিতা পড়ে ফেলবেন সন্তোষ কাশ্যপ?
ফেড কাপ বিপর্যয়ের পরে আই লিগের প্রথম ম্যাচেই লাজংয়ের বিরুদ্ধে ০-২ হারের পর সবুজ-মেরুন সদস্য-সমর্থকদের মাথায় এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত ক্লাব সূত্রের যা খবর, দুর্গাপুজোর আগে কোচ-বিসর্জন সম্ভবত হচ্ছে না। তবে বাগানে বিপর্যয়ের ধারা অব্যাহত থাকলে দশমীর পরেই কাশ্যপ-বিসর্জনের ঢাক বাজতে পারে গঙ্গাপারের তাঁবুতে।
দলের চরম বিপর্যয় কাটাতে ‘মুশকিল আসান’ হয়ে ওডাফা-টোলগেদের সঙ্গে শিলং গিয়েছিলেন মোহন-সচিব অঞ্জন মিত্রও। কিন্তু তাঁর সামনেও দল মুখ থুবড়ে পড়ায় বেশ কিছু নতুন বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। শোনা যাচ্ছে, সন্তোষ কাশ্যপ প্র্যাক্টিসে ৪-৪-২ ছকে খেলালেও এ দিন ম্যাচে নেমেছিলেন ৪-২-৩-১ ছকে। সামনে একা ওডাফা। মাঝমাঠে মণীশ মৈথানির দু’পাশে স্নেহাশিস ও টোলগে। ব্লকার রাকেশ মাশি ও ডেনসন দেবদাস। আক্রমণে বল বাড়ানোর কাজটা ছিল মৈথানির। যা আদৌ মসৃণ হয়নি। আর এখানেই চটেছেন কর্তারা। অসন্তোষ ফুটবলারদের মধ্যেও। কেন হঠাৎ করে নতুন ছকে দল সাজালেন কোচ? এমনকী মাঝমাঠ থেকে বল সাপ্লাই সে ভাবে না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ ওডাফা ড্রেসিংরুমে ফিরে চিৎকার-চেঁচামেচিও করেছেন বলে খবর। বাগানের সমস্যা আরও বাড়িয়েছে রহিম নবির কুঁচকির চোট। প্রশ্ন উঠছে, এই পরিস্থিতিতে কোভারম্যান্সের ভারতীয় দলে অন্যতম অস্ত্র জুয়েল রাজাকে প্রথম দলে রাখা হল না কেন? উত্তর মেলেনি। কোচ-কর্মকর্তা কাউকেই এ দিন ফোনে রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি। তবে ফুটবলার-কর্তারা প্রকাশ্যে কোচের খামখেয়ালিপনা নিয়ে মন্তব্য না করলেও, টুইটারে সোচ্চার হয়েছেন বেশ কিছু সবুজ-মেরুন ফুটবলার। যার ধাক্কায় পালে হাওয়া লাগছে কোচ-বিদায়ের। রবিবার বিকেলে মোহনবাগান দল শহরে ফিরলেই জরুরি বৈঠকে বসছেন সচিব। |
|
ওডাফা ওকোলি |
গত মরসুমে ৩৪ ম্যাচে ৩৬ গোল।
চলতি মরসুমে ৪ ম্যাচে ২ গোল। |
ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে মোট ২৬৮ ম্যাচে ২৬২ গোল |
|
টোলগে ওজবে |
গত মরসুমে ৫০ ম্যাচে ২৯ গোল।
চলতি মরসুমে ৩ ম্যাচে ৩ গোল। |
ভারতীয় ক্লাব ফুটবলে মোট ৯৭ ম্যাচে ৬৯ গোল |
|
শিলংয়ের জওহরলাল নেহরু স্পোর্টস কমপ্লক্সে ১৪ হাজার দর্শকের সামনে এই ম্যাচে নিজের অস্তিত্ব প্রমাণের লড়াই ছিল মোহন-কোচের। ফেড কাপে ব্যর্থতার পরে মোহনবাগানে কতটা পরিবর্তন হয়েছে, তা দেখানোর ছিল সন্তোষের। কিন্তু পরীক্ষার ফার্স্ট পেপারেই ডাহা ফেল তিনি। দলের ফর্মেশন নিয়ে কোচের আলটপকা সিদ্ধান্তের জেরে পালতোলা নৌকা আরও বেসামাল। কোচের ভুল অবশ্য চোট সারিয়ে ফেরা টোলগে এবং ওডাফা প্রথমার্ধে যথেষ্ট সচল থেকে শোধরানোর চেষ্টা করেছিলেন। বেশ কয়েকটা গোলের সুযোগও এসেছিল মোহনবাগানের সামনে। কিন্তু লাজং গোলকিপার লালথুম্মাইয়া রালতের তৎপরতায় গোলের মুখ খোলেনি। তিন কাঠির তলায় দুরন্ত রালতে ম্যাচের সেরার পুরস্কারও তুলে নিলেন।
ওডাফা-টোলগে তবু মাঝেমধ্যে ঝলসেছেন, কিন্তু মোহন-ডিফেন্সকে প্রায় আগাগোড়া নড়বড়ে দেখিয়েছে। শুরুর দিকে যাও বা জোড়া-তাপ্পি দিয়ে রক্ষণের ফাঁকফোকর ভরাটের চেষ্টা চলছিল, বিরতির পরে ইচেদের কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ে। সেই সুযোগে সুশীলের কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে প্রথম গোল বৈথানের। ম্যাচের একেবারে শেষ দিকে ফের হেডে গোল করিম-জমানায় বাগানেই সাড়া ফেলে দেওয়া লালরামলুয়াহার। বিপর্যয়ের ময়নাতদন্ত করতে বসে গত মরসুমে কর্তাদের গড়া মোহনবাগানের টেকনিক্যাল কমিটির অন্যতম সদস্য সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “এই দলটায় ডিফেন্সের পাশপাশি মাঝমাঠেও লিড করার কোনও ফুটবলার নেই। বড় দলে যেটা ভীষণই দরকার। যতই ফরোয়ার্ড লাইন দুর্ধর্ষ হোক না কেন।” প্রাক্তন বাগান কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের আবার ব্যাখ্যা, “ডিফেন্সে তো প্রচুর গলদ আছেই। তার ওপর একের পর এক হারে দল আরও চাপে পড়ে যাচ্ছে।”
|
মোহনবাগান: অরিন্দম, আইবর, নির্মল, ইচে, ফেনাই, মাসি (জুয়েল), ডেনসন, স্নেহাশিস (স্ট্যানলি), মৈথানি, টোলগে (সাবিথ), ওডাফা। |