|
|
|
|
প্রায় অবসরের বয়সে চাকরি হল বরপেটার কৈলাশবাবুর |
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি |
বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে তিনি অবশেষে সরকারি চাকরি পেলেন! ভাগ্যিস অবসরের সময় সীমা বেড়ে ৬০ হয়েছে। না হলে অল্পের জন্য এবারেও ফস্কে যাচ্ছিল সেই মহার্ঘ্য সরকারি চাকরি। নিয়োগপত্র বলছে, এখনও অন্তত ১ বছর ১১ মাস সরকারি চাকুরিতে বহাল থাকবেন বরপেটার কৈলাশ তালুকদার। ১১ বছর ধরে লড়তে লড়তে মাত্র ১ বছর ১১ মাসের চাকরি জীবন পড়ে রয়েছে তাঁর।
অসমের বরপেটা জেলার সর্থেবারির বাসিন্দা কৈলাশ তালুকদারের বয়স এখন ৫৮ ছাড়িয়েছে। বিস্তর তরুণ যখন চাকরির আশায় হা-পিত্যেশ করে ঘুরছে, তখন এমন বেখাপ্পা বয়সে কেউ চাকরিতে ঢোকে না কী? এ তো অবসর নেওয়ার সময়! কর্মক্ষেত্র তো বটেই, আশপাশের গ্রামেও প্রায় দর্শনীয় ব্যক্তিত্ব হয়ে গিয়েছেন কৈলাশবাবু। ১৯৮৫ সালে সর্থেবাড়ি আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে যখন এলডিএ পদে যোগ দিয়েছিলেন তিনি, তখন কৈলাশবাবু নিশ্চিতভাবেই জানতেন, ভবিষ্যতের হিল্লে হয়ে গেল। স্কুল সরকারি হলে তাঁরও সরকারি চাকরিটি পাকা। কিন্তু দশ বছর চাকরি করার পরে স্কুল যখন সরকারের অধীনে এল, তখন বাকি কয়েকজনের সঙ্গে কৈলাশবাবুকেও ছাঁটাই করা হয়। রাজ্যের বহু স্কুলেই একই ঘটনা ঘটে। ছাঁটাই হয়ে দিন কয়েক গোমড়া মুখে ঘুরে বিকল্প পেশা খুঁজে নিয়েছেন বাকিরা। কিন্তু কৈলাশবাবুর জেদ চেপে যায়। তাঁর মতো আরও অনেকেই মিলিতভাবে গুয়াহাটি হাইকোর্টে আবেদন জানান। দাবি করা হয়, ছাঁটাই হওয়া সব শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে নিয়োগ করতে হবে। ২০০১ সালের ৩১ মার্চ আদালতে জয়ী হন তাঁরা। হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, ছাঁটাই কর্মীদের যোগ্যতা যাচাই করে তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ করতে হবে।
আদালতে জিতে কৈলাশবাবু ভেবেছিলেন, মার দিয়া কেল্লা। কিন্তু তার পরের ধাপটা ছিল আরও কঠিন। যার পোশাকি নাম ‘লাল ফিতের ফাঁস’। আদালতের রায় বের হওয়ার পরে কৈলাশবাবুর হাতে নিয়োগপত্র পৌঁছে দিতে রাজ্যের শিক্ষা দফতরের লাগল সাড়ে এগারো বছর। প্রায় এক যুগ। এই সময়ের মধ্যে নিয়োগপত্রের আশায় থাকা অনেকেই মারা গিয়েছেন। কিন্তু কৈলাশবাবুর কপাল ভাল। তিনি চাকরিটি পেলেন। তাঁর কথায়, “আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। একদিন হঠাৎ বরপেটা জেলা স্কুল ইনস্পেক্টরের অধীনে চেংলিমারি হাই মাদ্রাসার এলডিএ পদে চাকরির ডাক পেয়ে ভাবলাম কী করা উচিত? শেষ পর্যন্ত ভাবলাম, যে চাকরির জন্য এত লম্বা লড়াই, সেই লড়াইকে অন্তত সম্মান জানানো প্রয়োজন। আমার নতুন করে পাওয়ার বা হারানোর কিছু ছিল না।” মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দফতর থেকে নিয়োগপত্রটি সংগ্রহ করে গত ২৪ সেপ্টেম্বর কাজে যোগ দিয়েছেন কৈলাশবাবু। |
|
|
|
|
|