নাট্যকর্মী বিমল চক্রবর্তীকে হেনস্থা এবং হুমকির ঘটনায় বরাহনগর থানার পুলিশ শনিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। এ দিন রাত পর্যন্ত পুলিশ এ-ও জানাতে পারেনি, কারা বিমলবাবুকে হেনস্থা করেছিল।
পুলিশের কাছে ডায়েরিতে বিমলবাবু জানিয়েছেন, বাজারে মাছ বিক্রেতাদের বসতে না দেওয়ার প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধরের হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ডানলপের ইউবি কলোনি বাজারের কয়েক জন মাছবিক্রেতা গত ১ অক্টোবর ধর্মতলার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বামফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। ২ অক্টোবর সকালে স্থানীয় কয়েক জন যুবক ওই মাছবিক্রেতাদের উপরে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। কেন তাঁরা ফ্রন্টের সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন, তার কারণ ওই যুবকেরা জানতে চায়। বাজার থেকে তাঁদের উঠে যেতে বলা হয়। বিমলবাবুর বক্তব্য, নবকুমার পাখিরা নামে এক মাছবিক্রেতাকে মেরেধরে ওই যুবকেরা বাজার থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করছিল। তখন প্রতিবাদ করেন তিনি। তার পরেই ওই যুবকেরা তাঁকে ঘিরে ধরে গালিগালাজ করে, মারধরের হুমকি দেয়। |
বিমলবাবুর উপরে এই হেনস্থার ঘটনাকে কার্যত ‘হামলা’ বলেই মনে করছেন বিশিষ্ট জনেরা। ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে তাঁরা অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসের সামনে একটি সভাও করেন। সভায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, বিভাস চক্রবর্তী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সশরীরে না থাকলেও নিজের প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। সভায় তা পাঠ করা হয়। ‘রাজ্য জুড়ে মস্তানবাহিনীর অবাধ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে’ বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সমস্ত সাংস্কৃতিক-কর্মীর এই জঘন্য ঘটনার প্রতিবাদ করা উচিত। নাগরিক সমাজেরও উচিত প্রতিবাদ করা। কে কোন মিছিলে যোগ দেবেন বা দেবেন না সেটা তাঁর গণতান্ত্রিক অধিকার।”
বিমলবাবুর পাড়া, ইউবি কলোনিতে আগামী ১১ অক্টোবর আরও এক দফা প্রতিবাদসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সাংস্কৃতিক কর্মী ও কলাকুশলীরা। নাট্যকার চন্দন সেন বলেন, “প্রয়োজনে রাজ্যপালের কাছে গিয়ে স্মারকলিপিও দেব।” এ প্রসঙ্গে বিভাস চক্রবর্তী এ দিন বলেন, “বিমলের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। তবে বিমলকে উপলক্ষ করে যেন কোনও রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা না হয়, সেটাও একই সঙ্গে দেখা দরকার।” যে যুবকেরা বিমলবাবুকে হেনস্থা করেছে, তারা শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা বরাহনগর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান রামকৃষ্ণ পাল বলেন, “বাজারে পরিষেবা বন্ধ রেখে ওই বিক্রেতারা সমাবেশে যান। তাই আমাদের দলের কর্মীরা পরের দিন ওই বিক্রেতাদের আর বসতে দিতে চায়নি। তখন সিপিএমের কয়েক জন হার্মাদের সঙ্গে বিমলবাবুও এলে দলীয় কর্মীদের সঙ্গে বচসা বাধে।”
পুলিশ এখনও অবধি ঘটনার কোনও কিনারা করতে পারল না কেন? উত্তরে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, বিমলবাবু কোনও এফআইআর করেননি। কিন্তু জেনারেল ডায়েরি হলেও তো তদন্ত হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে তা করা হল না কেন, তার জবাব দেননি ওই কর্তা। অভিযোগকারী বিমলবাবু অবশ্য বলেন, “বরাহনগর থানার পুলিশ আমাকে আশ্বাস দিয়েছে, ওই ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। পুলিশের উপরে আমার আস্থা রয়েছে।” |