ত্রিফলা আলো লাগানোর বরাতে অনিয়ম নিয়ে পুরসভার বিশেষ অডিট এখনও শেষ হয়নি। তার আগেই ঠিকাদারদের বিলের ৭৫ শতাংশ মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন মেয়র। শনিবার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অডিট চলুক না। বিল মেটাতে কোনও বাধা নেই।” বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলরদের অভিযোগ, বিশেষ অডিট শেষ হওয়ার আগেই বিল মিটিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিন্দনীয়। ‘দুর্নীতি’ ঢাকতেই ক্ষমতার এই ‘অপব্যবহার’। পুরসভা সূত্রের খবর, টেন্ডার প্রক্রিয়া এড়াতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার কাজকে ৬০০টি’রও বেশি ভাগে ভাগ করে বরাত দেওয়া নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। কাজটা যে নিয়ম মেনে হয়নি, তা লিখিত ভাবে জানিয়ে দেয় পুরসভার অর্থ দফতর। ডিজি (আলো) গৌতম পট্টনায়কের বিরুদ্ধে নিয়ম ভাঙার অভিযোগ ওঠে। ঠিকাদারদের বিল আটকে দেন পুর কমিশনার খলিল আহমেদ। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় হয় পুরসভার অধিবেশন। কংগ্রেস ও বাম কাউন্সিলররা মেয়রের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখান। রাজ্যপালও এ নিয়ে পুর প্রশাসনের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠান।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বিষয়টি নিয়ে মেয়র পারিষদের বৈঠকে শো-কজ করা হয় ডিজি (আলো)-কে। জবাবে সন্তুষ্ট না হয়ে গৌতমবাবুকে ডিজি’র পদ থেকে সরিয়ে দেন পুর কমিশনার। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য পুরসভার মুখ্য অডিটর বিপ্লব গুহরায়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিপ্লববাবুকে ওই দায়িত্ব দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলা হয়। অথচ পুরসচিবালয়ের এক অফিসার জানান, তিনি এখনও কাজই শুরু করেননি। তার মধ্যেই মেয়র ঠিকাদারদের বিল মেটানোর উদ্যোগ নেন। এর পর পুরসভার মুখ্য অডিটরের কাছে বিল মেটানো নিয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়।
বিপ্লববাবুর কথায়, “আমার কাছে প্রস্তাব এসেছিল। আমি আমার কথা জানিয়েছি।” একটা কাজে অনিয়ম নিয়ে অডিট চলাকালীন তার বিল মেটানো যায় কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিপ্লববাবু বলেন, “আমি কিছু বলব না।” যদিও ওই প্রস্তাবে তিনি সম্মতি দিয়েছেন বলে পুর সূত্রে জানা গিয়েছে। সেই অনুমোদনে সম্মতি দেন পুরসচিব রীতেন্দ্র বসুরায়ও। পরে যুগ্ম কমিশনার সইদুল ইসলামের হাত ঘুরে সেটি জমা পড়ে পুর কমিশনার ও মেয়রের কাছে। ওই লিখিত নির্দেশ হাতে পেয়েই ঠিকাদারদের বিল মেটাতে জোর তৎপরতা শুরু হয় আলো দফতরে। পরিস্থিতি দেখতে এ দিন সেখানে হাজির হন সদ্য অপসারিত ডিজি (আলো) গৌতম পট্টনায়কও। এ দিকে, অনিয়মের অভিযোগে যে ফাইল পুর কমিশনার নিজেই আটকে রেখেছিলেন, এখন তাতেই কেন সম্মতি দিলেন, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন পুরসভার অন্দরে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে খলিল আহমেদ বলেন, “ছুটিতে আছি।” মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “টাকার অভাবেই বিলের পুরোটা দেওয়া যাচ্ছে না। বাকি ২৫ শতাংশ টাকা পরে দেওয়া হবে।”
কংগ্রেস কাউন্সিলর মালা রায় বলেন, “বরাতে অনিয়মের পাশাপাশি বেশি দামে ত্রিফলা আলো কেনার অভিযোগও ছিল। বিষয়টি নিস্পত্তির আগেই ঠিকাদারদের বিল মেটানো প্রমাণ করে, দুর্নীতিকেই প্রশয় দিলেন মেয়র।” |