প্রথম বার পা রাখবে দুগ্গা, খুশি অন্বেষা-মেঘারা
ঘুম চোখ কচলাতে কচলাতেই ছোটরা ছুটছে মণ্ডপের বাঁশ বাঁধা দেখতে। কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে বড়রাও মণ্ডপের সামনে খানিকক্ষণের জন্য দাঁড়িয়ে পড়ছেন। পুকুরঘাটে তো গ্রামের মেয়ে-বউরা পুজোর দিন-ক্ষণ নিয়ে আলোচনায় মশগুল।
এমনটাই তো হওয়ার কথা। এই প্রথম গ্রামে পুজো হচ্ছে। ওঁদের কত দিনের ইচ্ছে, এ বার সত্যি হতে চলেছে! বরাবর বহু দূরের গ্রাম থেকে ভেসে আসা ঢাক ও মাইকের শব্দ শুনে পুজোর দিন কেটেছে সারেঙ্গার পানচুড়, গুনিয়াদা, বেলাটিকরি ও বাঁশকোপা গ্রামের বাসিন্দাদের। কখনও সখনও বড়দের হাত ধরে ছোটদের সেই সব পুজো মণ্ডপ ঘুরে আসার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও বাড়ির মেয়ে-বউরা রাতে সন্ধিক্ষণের পুজো দিতে যেতে পারেননি। কিংবা দিনের বেলায় পুষ্পাঞ্জলি দিতে যেতে পেরেছেই বা ক’জন? আফশোস তো ছিলই। এ বার তাই চার গ্রামের মাথারা এক হয়ে নিজেরাই পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। চারটি গ্রামের নামে পুজো কমিটির নাম ঠিক করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি চাঁদা তোলার কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। ঠিক হয়েছে, পানচুড় স্কুল মাঠে পুজো হবে। সেখানে এখন মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে। কুমোরকে প্রতিমা তৈরির বায়নাও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ষষ্ঠীর দিন থেকেই মণ্ডপ চত্বরে আদিবাসী নাচ, গান থেকে কীর্তন- কী কী হবে তার তালিকা তৈরি চলছে।
সবাই মাতবে এই মণ্ডপেই। ছবি: উমাকান্ত ধর।
কংসাবতী নদী লাগোয়া শাল-মহুয়ার জঙ্গল ঘেরা ওই চারটি গ্রামে ২২টি পাড়ায় প্রায় ৭০০ পরিবারের হাজার চারেক মানুষের বাস। গ্রামের ভিতর দিয়ে চলে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার রাস্তা। বিদ্যুৎও রয়েছে। শুধু দুর্গাপুজো ছিল না। পুজো পরিচালন কমিটির প্রধান, গুনিয়াদা গ্রামের বাসিন্দা শ্যাম মণ্ডলের কথায়, “আমাদের চারটি গ্রামের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও দুর্গা পুজো ছিল না। তাই দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের সকলেরই দুর্গাপুজো করার ইচ্ছা ছিল। কিছুদিন আগে চার গ্রামের বাসিন্দারা বসে এ বার পুজো করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।” তিনি জানান, পুজোর বাজেট ধরা হয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা। চারটি গ্রামের সব সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে চাঁদা তুলে পুজোর খরচ তোলা হচ্ছে।
পানচুড় গ্রামের বাসিন্দা, গড়গড়িয়া সুভাষ হাইস্কুলের শিক্ষক নিত্যানন্দ মণ্ডল বলেন, “আমাদের গ্রামের কাছাকাছি পুজো মণ্ডপ বলতে ৫ কিলোমিটার দূরের তপ্ত-দামদি, জামবনি প্রভৃতি গ্রামে যেতে হত। বাড়ির ছোটদের নিয়ে সেখানে ঠাকুর দেখতে যেতাম। দিনের আলো ফুরনোর আগেই বাড়ি ফিরে আসতে হত। তাই পুজোর আনন্দ থেকে একপ্রকার আমরা বঞ্চিতই ছিলাম।” বাড়ির মহিলাদের আক্ষেপও কি কম ছিল? পানচূড় গ্রামের কল্পনা মণ্ডল, গুনিয়াদা গ্রামের সুলেখা মণ্ডল, বাঁশকোপা গ্রামের মৌসুমী মল্লিক, বেলাটিকরি গ্রামের মিতালী মাথুরীদের আক্ষেপ, “দূরত্বের জন্য সন্ধ্যা আরতি দেখতে যাওয়া কিংবা রাতে সন্ধিপুজোতেও আমরা এতদিন ওইসব পুজো মণ্ডপে যেতে পারতাম না।” এ বার দুঃখ ঘুচতে চলেছে বলে তাঁদের উচ্ছ্বাস যেন ছোটদের খুশিকে ছাপিয়ে যেতে চাইছে। তাঁদের কথায়, “এ বার তো নিজেদের পুজো। ভক্তিভরে পুজো দেব, রাত জেগে অনুষ্ঠানও দেখব।” উৎসব মানে তো ছোটদেরই মজা যেন বেশি। তাই আছর আটেকের সুশোভন মণ্ডল, শুভ প্রামাণিক, সুস্মিতা মণ্ডলেরা বলছে, “প্রতি বছর নতুন জামা-কাপড় পরেও দুর্গাপুজোয় ঠিক মতো আনন্দ পেতাম না। এ বার সারাদিন মণ্ডপে থাকব। খুব মজা হবে আমাদের।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.