বছর চল্লিশ পরে ফের মণিপুরে ফিরল বিশ্বের ক্ষুদ্রতম জলচর পরিযায়ী পাখি।
খবর নিশ্চিত হওয়ার পরে উৎফুল্ল মণিপুর বনবিভাগ ও পক্ষীপ্রেমীরা। সম্প্রতি মণিপুরের কাংলা এলাকার সরোবরে ছোট্ট হাঁসগুলির দেখা পেয়ে উৎসাহীরা ছবি তুলেছিলেন। ছবি দেখে বনকর্তা ও পরিবেশবিদ সামুংগৌয়ের সন্দেহ হয়, এটি স্থানীয় পাখি নয়। তিনি বন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে কাংলা এলাকায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখেন, ‘কটন পিগমি গুজ’-এর ঝাঁক কাংলার জলাশয়ে ঘুরছে। ডিমও পাড়ছে। পাখিগুলির পরিচয় নিশ্চিত করতে তিনি তাদের ছবি তুলে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যপ্রাণী বিভাগের বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠান। ওয়াইল্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনালের গ্লোবাল স্পেশিস-এর প্রোগ্রাম অফিসার অ্যান্ডি সিমেস জানিয়েছেন, “পাখিগুলি সত্যিই ‘কটন পিগমি গুজ’। যাদের বৈজ্ঞানিক নাম ‘নেট্টাপুস কোরোমানডেলিয়ানাস’। স্থানীয়রা এই ছোট হাঁসগুলিকে পেটাকোট বলে ডাকে। উচ্ছাসিত মণিপুরের বনকর্তা জানান, “৪০ বছর আগে, শেষ বার পেটাকোটের ঝাঁক মণিপুরে এসেছিল। তার পর থেকে, কেবল এরাই নয়, অন্য বেশ কিছু প্রজাতির পরিযায়ী পাখিও মণিপুরকে এড়িয়ে চলছিল।” |
উল্লেখযোগ্য ভাবে লোকটাক সরোবরেও কমে গিয়েছে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা। তবে এই বছর শীতের আগেই বিশ্বের ক্ষুদ্রতম জলচর পরিযায়ী পাখিদের মণিপুর পাড়ি তাই বিশেষ খবর বই কি। তাদের চারণ, প্রজননের নানা তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ছোট্ট হাঁসগুলির ওজন হয় একশো থেকে দেড়শো গ্রাম। সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর অবধি এদের ডিম পাড়ার সময়। গাছের কোটরে, ৮ থেকে ১৫টি ডিম পাড়ে কটন পিগমি। দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় এদের দেখা মেলে। তবে অস্ট্রেলিয়ায় এদের সংখ্যা একেবারেই কমে গিয়েছে। মণিপুরি লোককথা অনুযায়ী, পেটাকোটের ঝাঁক আসা মানেই বন্যা আসা। এই বছর বর্ষায় বন্যা দেখেছে রাজ্যবাসী। পেটাকোটের দর্শনে ফের অকাল বন্যার আশঙ্কা শুরু হয়েছে। আগে পেটাকোটদের ডিম পাড়ার সুবিধার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা গাছের ডালে মাটির হাঁড়ি ঝুলিয়ে রাখতেন। কাংলার জলাশয়ে এই পাখির দেখা মেলায় সামুংগৌ জলাশয়ের আশপাশের গাছ কাটার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য প্রশাসনিক কর্তাদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। |