স্থাপনায় মা সারদা
দুর্গাঘটের ১২৫
দেবীপক্ষের শুরু। ১৮৮৮-র ৬ অক্টোবর (২১শে আশ্বিন ১২৯৫) প্রতিপদ। ১৩/২ গুরুপ্রসাদ চৌধুরী লেন, শ্রীম (মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত বা মাস্টারমশাই)-এর পৈতৃক বাড়ির দোতলার ঘরে মা সারদা তামার তৈরি মঙ্গলচণ্ডী বা দুর্গাঘট স্থাপন করেন, শ্রীরামকৃষ্ণের পট প্রতিষ্ঠা করেন এবং নিত্য পুজোর ব্যবস্থা করেন। মহাষ্টমীর দিন মা সারদা এই দুর্গাঘটের বিশেষ ভাবে পুজো করেন এবং পুজোর পরে সমাধিস্থ হন। সেই থেকে সেই তামার তৈরি দুর্গাঘট শ্রীম-র পৈতৃকবাটী, যা এখন কথামৃতভবন নামেই বেশি পরিচিত, মহাষ্টমীর দিন নিষ্ঠা সহকারে পূজিত হয়ে আসছে। সেই দুর্গাঘট পুজো এ বার ১২৫ বছরে পড়ল।
শ্রীম-এর প্রপৌত্র দীপক গুপ্ত বলছিলেন, “প্রতি বছর মহাসপ্তমীর দিন সন্ধেয় ঘটটি মাথায় নিয়ে খালি পায়ে হেঁটে পরিবারের সদস্যরা এবং ভক্ত-অনুরাগীরা গঙ্গায় যান। গঙ্গায় ঘটটি পরিশোধন করে এসে আরতি করে তার স্ব-জায়গায় আবার স্থাপন করা হয়। মহাষ্টমীর দিন মহাসমারোহে মা দুর্গা এবং শ্রীরামকৃষ্ণের পুজো হয়।” এই
ঘটপুজোর শুরু থেকে স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রীরামকৃষ্ণের অন্যান্য শিষ্য এবং গৃহীভক্তগণ প্রতি বছর আসতেন। কথামৃতভবন আজ শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধীন। আজও মহাষ্টমীর দিন মিশনের সন্ন্যাসীরা ও গৃহীভক্তরা আসেন। তাঁদের উপস্থিতিতে মহাসমারোহে ঘটপুজো হয়, জানালেন দীপকবাবু। শ্রীম সকলকে প্রায়শ বলতেন, স্বয়ং জ্যান্ত দুর্গা শ্রীশ্রীমা এই পুজোর ব্যবস্থা করেছিলেন।
মা সারদা শ্রীম
১৮৮৬-র ৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীম প্রথম কামারপুকুরে গিয়েছিলেন। কামারপুকুর থেকে ফিরে ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি কাশীপুরে শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে গিয়ে দু’টি ইচ্ছে প্রকাশ করেন। একটি, শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে তিনি কামারপুকুর যেতে চান। অপরটি, বাড়িতে দুর্গাপুজো করা। প্রথমটি হয়ে ওঠেনি। শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীমকে বলেছিলেন, সে (দুর্গাপুজো) তোমার হয়ে যাবে।
শ্রীরামকৃষ্ণের শরীর চলে যাওয়ার পরে সারদা মা তীর্থভ্রমণে গিয়েছিলেন। তীর্থভ্রমণ সেরে ফিরে শ্রীম-র বাড়িতে কিছু দিন ছিলেন। তার পরে বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতে কিছু দিন থেকে কামারপুকুর ফিরে যান। ১৮৮৮-তে পুজোর মুখে আবার তিনি শ্রীম-র বাড়িতে আসেন। সূচনা হয় ১২৫ বছরের এই দুর্গাঘট পুজোর। প্রসঙ্গত, কথামৃতভবনের এই ঠাকুরঘরে শ্রীরামকৃষ্ণের পাঞ্জাবি, মোলেস্কিনের র্যাপার, চুমকি ঘটি, পাদুকা, শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদার কেশরাশি ও নখরাজি, মা সারদার ব্যবহৃত জপের মালা, সিঁদুর কৌটা, পদচিহ্ন সযত্নে রক্ষিত আছে, নিত্য পুজো হয়। আরও উল্লেখযোগ্য, সারদা মা দুর্গাঘট স্থাপন ও পুজো শুরুর পরেই শ্রীম-র মনে ‘কথামৃত’ রচনার অনুপ্রেরণা জাগে।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.