আর্থিক নয়ছয়ের নালিশ
বেনজির ওষুধ-সঙ্কট এনবিএমসি’তে
ষুধ কেনা নিয়ে দুর্নীতি আটকাতে আর হাসপাতালে ওষুধের অভাব মেটাতে স্যালাইন, ওষুধ কেনার নতুন নিয়ম চালু করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। কয়েক মাস কাটতে-না-কাটতেই সেই ওষুধ-নীতির ফাঁকফোকর গলে নজিরবিহীন ওষুধ-সঙ্কটের দেখা দিয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে স্বীকার করা হয়েছে, হাসপাতালে স্যালাইনের ভাঁড়ার প্রায় শূন্য, অ্যান্টিবায়োটিকের অবস্থাও তথৈবচ। বাবুয়ানন্দ উপাধ্যায়, মনোজিৎ সরকারদের মতো বহু বিপিএল তালিকাভুক্ত রোগীর অভিযোগ একের পর এক সুপারের দফতরে জমা পড়ছে। অভিযোগ, বিপিএল তালিকাভুক্ত হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিক এমনকী সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্সের তালিকাভুক্ত অনেক ওষুধ বাইরে থেকে কিনে দিতে বলা হচ্ছে। অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্যভবনেও। তার পরেই বিষয়টি নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয়েছে। এই ওষুধ-সঙ্কটের সূত্র ধরেই কেঁচো খুঁড়তে কেউটের মতো উঠে এসেছে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগ। স্বাস্থ্যভবনের পারচেজ বিভাগের কর্তাদের অভিযোগ, টাকা থাকা সত্ত্বেও ওষুধ প্রস্তুত ও সরবরাহকারী সংস্থাকে তা মেটাননি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ফলে তারা সরবরাহ বন্ধ করেছেন। উপরন্তু পাওনা যে মেটানো হয়নি এবং ওষুধ আসা যে বন্ধ হয়েছে তা স্বাস্থ্যদফতরকে জানানোর প্রয়োজনও মনে করেননি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাতেই সমস্যা চরমে উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাসের বক্তব্য, “এইরকম একটা অবস্থা একেবারেই কাম্য নয়। এর মোকাবিলা কড়া হাতে করা হবে। যাঁরা এই অবস্থা তৈরির জন্য দায়ি তাঁরা শাস্তি পাবেন। আমরা বিষয়টা তদন্ত করে দেখছি।” স্বাস্থ্যদফতরের দাবি, এপ্রিলের শেষ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৫১ লক্ষ টাকার ওষুধ ও স্যালাইন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে সরবরাহ হয়েছে। তাদের কাছে ওষুধ কেনাকাটার জন্য আলাদা করে ২ কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা ছিল। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ তার মধ্যে মাত্র ২ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা মিটিয়েছে। বাকি টাকা কোথায় আছে, কেন ব্যয় হয়নি, সে সব সম্পর্কে স্বাস্থ্যভবনকে পুরোপুরি ধোঁয়াশায় রাখা হয়েছে। অন্য দিকে, পুরো দোষই স্বাস্থ্যকর্তাদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। সুপার সব্যসাচী দাস কড়া ভাষায় পাল্টা সমালোচনা করে বলেন, “এত দূরের একটা রাজ্যের সংস্থাকে বরাত দেওয়াটাই অন্যায় হয়েছে। দূরত্বের কারণে ওই সংস্থা উত্তরবঙ্গে মাল দিতে আসতে চাইছে না। আমরা বার বার স্যালাইনের অভাবের কথা স্বাস্থ্যভবনকে জানিয়েছিলাম। ওখানকার কর্তারা তাতে গা করেননি। বলেছেন, এটা টিজিং প্রবলেম। এইটুকু সহ্য করতে হবে।” স্বাস্থ্যদফতরকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তাঁর পাল্টা দাবি, “আমার কাছে সব কাগজপত্র আছে। দেখিয়ে দিতে পারি যে আমাদের ৪৬ লক্ষ টাকার স্যালাইন ও ওষুধ পাঠানো হয়েছিল। তার পুরো টাকাটাই মেটানো হয়েছে। যাবতীয় সমস্যার মূলে আসলে দূরের রাজ্যের সংস্থাকে বরাত দেওয়ার ভুল নীতি।” এর পাল্টা স্বাস্থ্যকর্তারা আবার বলছেন, “সুপার ঠিক বলছেন না। ২ কোটি ৯৪ লক্ষ টাকার বেশি এক টাকাও তাঁরা মেটাননি। সেটাই স্যালাইন আর ওষুধ সরবরাহ বন্ধের জন্য দায়ি। এখন বিষয়টা নিয়ে হইচই শুরু হওয়ায় গত বুধবারই তড়িঘড়ি তাঁরা চেকগুলো সই করেছে।” তাঁরা আরও বলেন, “উত্তরবঙ্গের কর্তারাই সময়মতো ওষুধের অর্ডার দেননি। আমাদের কিছু জানাননি।” স্বাস্থ্য দফতরেরই দু’পক্ষের এই লড়াইয়ের মধ্যে স্যালাইন আর ওষুধের সমস্যা সমাধানের অবশ্য কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, নিখরচায় যে ১৪২ টি ওষুধ সরবরাহ করার কথা তার মধ্যে ৭০ শতাংশ ওষুধই এখন হাসপাতালে অমিল। সাপে বিষের প্রতিষেধকও পর্যাপ্ত নেই। স্যালাইন-এর পাশাপাশি সিপলোফক্সাসিন, মেট্রোনিডাজলের মতো অ্যান্টিবায়োটিক মাত্র তিন দিন হল স্থানীয় ভাবে কিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ জরুরি ভিত্তিতে কলকাতার একটি সংস্থা থেকেও প্রায় ৫ লক্ষ টাকা খরচ করে স্যালাইন কেনা হচ্ছে। তাতে আগামী ৩ সপ্তাহ যাবে। তার মধ্যে সরবরাহ স্বাভাবিক না-হলে অবস্থা জটিল হয়ে যাবে বলে কর্তৃপক্ষ মনে করছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.