বর্ষা-বিদায় এখনই নয়, বোঝাল দাপুটে বৃষ্টি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
দেশের অন্যান্য প্রান্তে বর্ষা-বিদায়ের পালা শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা যে এখনই বিদায় নিচ্ছে না, বৃহস্পতিবারের বৃষ্টিই তা বুঝিয়ে দিল।
এমন ভাবে আকাশ কালো করে বৃষ্টি নেমেছিল এবং বৃষ্টির আগে যে-ভাবে ঝোড়ো হাওয়া বইছিল, যাতে মনে হয়েছিল, বঙ্গোপসাগরে বোধ হয় কোনও শক্তিশালী নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পর্যবেক্ষণ জানাচ্ছে, নিম্নচাপ নয়, দক্ষিণবঙ্গের উপরে থাকা একটা নিম্নচাপ অক্ষরেখাই কাণ্ডটা ঘটিয়েছে। দেড় ঘণ্টায় দক্ষিণ কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে ৪৬ মিলিমিটার। আকাশ অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় কলকাতার মাথায় এসেও প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বেশ কয়েকটি বিমান নামতে পারেনি। এয়ার ইন্ডিয়া ও জেটের দু’টি বিমান চেষ্টা করেও নামতে না-পেরে মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। অন্য বিমানগুলি কিছু ক্ষণ চক্কর কেটে কলকাতায় নামে।
কিন্তু কোনও নিম্নচাপ অক্ষরেখা কি এই ভাবে এতটা বৃষ্টি নামানোর ক্ষমতা ধরে?
আবহবিদেরা বলছেন, বছরের এই সময়টায় কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় বর্ষা সক্রিয় থাকলে এমন বৃষ্টি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। কেন? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, দেশের উত্তর ও পশ্চিম অংশ থেকে বর্ষা বিদায় নিয়েছে। সেখান বাতাস এখন ঠান্ডা। দক্ষিণবঙ্গে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে তাই ঠান্ডা বাতাস রয়েছে। মৌসুমি বায়ু এবং নিম্নচাপ অক্ষরেখার ফলে জলীয় বাষ্প ঢুকছে দক্ষিণবঙ্গে। ফলে নিচু স্তরের বাতাস তুলনায় গরম। দুই বাতাসের টানাপোড়েনে ঘন হয়েছে মেঘ। সেই মেঘ যেখানে ভেঙেছে, সেখানেই নেমেছে বৃষ্টি।
অর্থাৎ মৌসুমি বায়ু এ তল্লাট থেকে বিদায় না-নেওয়া পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই দু’ধরনের বায়ুপ্রবাহের মধ্যে এমন সংঘাত লেগেই থাকবে। এবং তার ফলে বৃষ্টিও হবে। গোকুলবাবু বলেন, “দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা এখনও সরেনি। এখনই তা সরছেও না।” |
বর্ষা এ বার শুরু থেকেই খামখেয়ালিপনা করে চলেছে। কেরলে সে পৌঁছেছিল বেশ কয়েক দিন দেরিতে। আবার বিদায়ও নেবে দেরি করে। বর্ষার প্রচলিত ক্যালেন্ডার অনুযায়ী দক্ষিণবঙ্গ থেকে বর্ষা বিদায় নেওয়ার কথা ৮ অক্টোবর। কিন্তু সেটা শুধু কাগজে-কলমে। ১০ বছর ধরে বর্ষা ওই ক্যালেন্ডার মানছে না। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পেরিয়ে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত চলছে তার দাপট। এ বারেও তার পুনরাবৃত্তি হবে বলেই মনে করছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এক আবহবিদের কথায়, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম ভারতে বর্ষা এ বার নির্দিষ্ট মেয়াদের থেকে ২৪ দিন বেশি থেকেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণবঙ্গে মৌসুমি বায়ু পুরো অক্টোবর মাসটা থেকে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
এ দিনের বৃষ্টি, আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস এবং বর্ষার বিদায়ে দেরি হওয়ার খবর পুজো কমিটিগুলির কাছে দুঃসংবাদ বয়ে এনেছে। শহরের বড় বড় পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা বারবার করে ফোন করছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরে। বৃষ্টি বন্ধ হয়ে কবে ঝকঝকে রোদ উঠবে, এটাই জানতে চাইছেন তাঁরা। কিন্তু আবহাওয়া দফতর তেমন সুখবর শোনাতে পারেনি। তারা জানিয়ে দিয়েছে, মৌসুমি বায়ু বিদায় না-নেওয়া পর্যন্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
তবে মাঠে ধান কিংবা অন্য ফসলের উপরে এই বৃষ্টির কোনও প্রভাব পড়বে না। সেপ্টেম্বরে দক্ষিণবঙ্গে যে-পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে, তাতে ভূগর্ভের জলস্তরও অনেকটা উপরে উঠে এসেছে। সেচ দফতরের জলাধারগুলিতেও জলস্তরের বৃদ্ধি আশানুরূপ। বোরো চাষের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। |