আলো-বিভ্রাটের শিকার এ বার ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা
মন আর্জেন্তিনা সফরে কখনও এসেছেন বলে মনে পড়ে না ব্রাজিলের ফুটবলারদের। প্রথমে বিমান-দুর্যোগ, পরে ফ্লাডলাইট-বিভ্রাটে ম্যাচই পণ্ড। ফিফা অনুমোদিত আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে এমন কাণ্ড দেখে রাগে ফুঁসছেন ব্রাজিল কোচ মানো মেনজেস। বুধবার রাতে (ভারতীয় সময়ে বৃহস্পতিবার ভোরে) ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা ম্যাচ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর তিনি বলেই বসলেন, “বিশ্বের সেরা দুটো দল খেলছে, অথচ এ রকম অব্যবস্থা! এটা কি ইয়ার্কি হচ্ছে নাকি?”
যুবভারতীতে গত বছর আর্জেন্তিনা-ভেনেজুয়েলা ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলনে যখন ভেনেজুয়েলার কোচ সেজার ফারিয়াসকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কলকাতা শহরটাকে কেমন লেগেছে, তখনই লোডশেডিং হয়ে গিয়েছিল। ঘটনার নিন্দা হয়েছিল বিশ্বের মিডিয়ায়। এ বার আর্জেন্তিনাতেই বিদুৎ-বিপর্যয়ে খেলা বন্ধ!

৪ অক্টোবর ২০১২। আলো কম। মাঠ ছাড়ছে ব্রাজিল।
ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল উত্তর আর্জেন্তিনার রেসিস্তেন্সিয়া শহরের সেন্তিনারিও স্টেডিয়ামে। ২৫ হাজার দর্শকের গ্যালারি একেবারে ভরপুর। দুই দলের ফুটবলাররা যখন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার জন্য লাইন আপ করেন, তখনও অর্ধেক আলো জ্বলেনি। ততক্ষণে স্টেডিয়ামের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় লড়াই করে চলেছেন। কিন্তু গন্ডগোলটা এমনই যে, তাঁদের ফ্লাডলাইটের নিভে যাওয়া আলো ফের জ্বালাতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যাওয়া সত্ত্বেও শেষরক্ষা হল না। দুই দলের ফুটবলাররা তা-ও ৪৫ মিনিট ধরে গা গরম করলেন। তার পরেও যখন নিভে যাওয়া আলো জ্বলল না, তখন চিলির রেফারি এনরিক ওসেস ঘোষনা করে দেন, আর ম্যাচ করা যাবে না। পরে রেফারি বলেন, “আলোর অবস্থা এমনই ছিল যে বলই দেখতে পাচ্ছিলাম না। দুই গোলকিপাররাও এক কথা বলল। আয়োজকরা ঠিক করে বলতে পারলেন না কতক্ষণে আলো জ্বলবে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হয়নি।” ম্যাচ অবশ্য বাতিল হয়নি। পিছিয়ে গিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা কবে হবে এখনও ঠিক হয়নি।

২৩ সেপ্টম্বর ২০১২: রিয়াল ম্যাচে আলোর খোঁজে দর্শকরা।
২০০৪-এর ৮ সেপ্টেম্বর ঠিক এমনই ঘটনা ঘটেছিল কলকাতার যুবভারতীতে। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ভারত-জাপান ম্যাচে। ম্যাচের মাঝখানেই হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যায়। বিদ্যুৎ পর্ষদের কর্তারা জানান, ইঁদুরে তার কেটে দেওয়ায় আলো নিভে গিয়েছিল। সে সময় গোটা ফুটবল বিশ্ব ছি-ছি করেছিল কলকাতাকে। এ বার ভারতীয় ফুটবলের মক্কা পাশে পেল আর্জেন্তিনার এই শহরকেও। গত মাসে স্প্যানিশ লিগে রিয়াল মাদ্রিদের একটি ম্যাচ মাঠ অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় শুরুই হতে পারেনি। সে দিক থেকে দেখলে, শুধু কলকাতাই এই কেলেঙ্কারির একমাত্র সাক্ষী নয়।
কিন্তু বুধবার কেন এমন হল? আয়োজকদের বক্তব্য, স্টেডিয়ামে ঢোকার সময় ‘সেলেকাও’ টিম বাস একটি ইলেকট্রিক ট্রেলার বা জেনারেটরে ধাক্কা মারে। তারপরই স্টেডিয়ামের অর্ধেক আলো নিভে যায়। ভাঙা জেনারেটরের অবস্থা দেখে বিদ্যুৎকর্মীরা প্রথমেই জানান, সমস্যা মেটাতে অনেক সময় লাগবে। হলও তাই।
আলো-আঁধারির ম্যাচ
যুবভারতীর খতিয়ান
৮ সেপ্টেম্বর ২০০৪: ভারত বনাম জাপান। কারণ- ইঁদুর আলোর তার কেটে দিয়েছিল।
২৫ মে ২০০৪: মোহনবাগান-চিরাগ ইউনাইটেড (কলকাতা লিগ)। কারণ বিদ্যুৎ-বিপর্যয়।
২ সেপ্টেম্বর ২০১১: আর্জেন্তিনা-ভেনেজুয়েলা ম্যাচের পর সাংবাদিক সম্মেলন। কারণ বিদ্যুৎ বিপর্যয়।
২০ নভেম্বর ২০১১: মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল (আই লিগ)। কারণ পুরো ফ্লাডলাইট ব্যবস্থাই মান্ধাতা আমলের।
৮ সেপ্টেম্বর ২০১২: ইস্টবেঙ্গল-বিএনআর (কলকাতা লিগ)। কারণ আলোর সংস্কার সম্পূর্ণ না হওয়ায়।
বিশ্ব ফুটবলে
১ জুন ২০১২: ঘানা-লেসোথো (বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনের ম্যাচ, আক্রা)। কারণ বিদ্যুৎ বিপর্যয়।
২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২: রায়ো ভায়েকানো-রিয়াল মাদ্রিদ (লা লিগা, ভায়েকাস) কারণ অন্তর্ঘাত
৮ সেপ্টেম্বর ২০০৪: আলো নিভে যাওয়ায় হতাশ জিকো।
উপস্থিত ফিফা প্রতিনিধি গিলেরমো টিফোনি বলেন, “শ’দুয়েক আন্তর্জাতিক ম্যাচে কাজ করলেও এমন ঘটনা দেখিনি। বিকল্প জেনারেটর রাখা উচিত ছিল। সেটাও ওরা রাখেনি। যা হল সেটা খুবই লজ্জাজনক।” ব্রাজিল কোচ বলছেন, “ব্রাজিল-আর্জেন্তিনার মতো দলকেও যদি এই সমস্যায় পড়তে হয়, খুব মুশকিল। এই ম্যাচটার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সব বৃথা গেল। আবার নতুন প্রস্তুতি নিতে হবে।”
এ বারের পুরো আর্জেন্তিনা সফরটাই ব্রাজিলের কাছে মনে না রাখার মতো। দেশ ছাড়ার পর থেকেই একের পর এক বিপত্তি। মঙ্গলবার রাতে রেসিস্তেন্সিয়া আসার চার্টার্ড বিমান তুমুল ঝড়ের মধ্যে পড়ে নির্দিষ্ট আকাশপথ ছেড়ে প্রায় ৩০০ মিটার সরে গিয়েছিল। বিমানের ক্যাপ্টেনের তৎপরতায় কোনও রকমে বড়সড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পান নেইমাররা। তার পর এই কাণ্ড! এমন সফর আর নিশ্চয়ই চাইবেন না তাঁরা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.