বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল যখন, জমজমাট একটা যুদ্ধ প্রত্যাশিত। ভারত ছিটকে যাওয়ায় দেশে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে আগ্রহ অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। তবু সন্ধেয় টিভি খুলে বসেছিলাম এই ভেবে যে, এশিয়ার দু’টো টিম খেলছে। পাকিস্তান আগের দিন অস্ট্রেলিয়াকে ও ভাবে উড়িয়ে দিল। প্রতিপক্ষ টিমটা আবার শ্রীলঙ্কা যারা কি না আমার ফেভারিট তো বটেই, টুর্নামেন্টে সবচেয়ে ধারাবহিকও। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে দেখলাম, দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের কোনও গল্প নেই। শ্রীলঙ্কা ঘরের মাঠে চ্যাম্পিয়নের মতোই খেলল। ওদের জেতার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ট্রফিটাও হয়তো নেবে। আর পাকিস্তান? পরিকল্পনার অভাবে সেই ‘করিডোর অব আনসার্টেনিটি’-তে ঢুকে পড়ার পুরোনো কাহিনী। বিশ্বকাপে ভারতকে যাদের জন্য ছিটকে যেতে হল, বৃহস্পতিবার থেকে তারাও নেই টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এ দিন ম্যাচের মাঝামাঝিই তো পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, কে জিতছে। |
একটা ব্যাপার শুধু বুঝে পাচ্ছি না। একটা টিম কী ভাবে এত অগোছালো থেকে বিশ্বকাপ সেমিফাইনাল খেলতে নামে? উমর গুলদের বোলিংয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা খুঁজে পাইনি। তৃতীয় ওভার থেকে পিচে বল ঘুরছে। এখানে পেসারদের গতির হেরফেরটা মারাত্মক কাজে দেয়। মালিঙ্গা ক’টা বল জোরে করেছে এ দিন গুণে বলে দেওয়া যায়। মালিঙ্গা-ম্যাথেউজ সবাই স্লোয়ার করে গেল। আর সেখানে গুল? অবাক হয়ে দেখলাম ক্রমাগত ইয়র্ক করার চেষ্টা করছে। যেমন বোলিং, তেমনই ব্যাটিং। অনেকে ভাবতে পারেন, টি-টোয়েন্টিতে ১৪০ রান জেতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ নয়। কিন্তু প্রেমদাসার যা উইকেট দেখলাম, তাতে পাকিস্তানের টার্গেটটা ১৪০ ছিল না। ওটা ছিল ১৮০-র সমান।
তিনটে কারণ দেখছি হাফিজদের এ ভাবে ছিটকে যাওয়ার পিছনে। প্রথমটা আগেই বলেছি। গেমপ্ল্যান কথাটা যেন হাফিজরা কোনও দিন শোনেইনি। এর সঙ্গে যোগ হবে দলে ভাল নেতার অভাব। এবং মাথামুণ্ডুহীন ব্যাটিং অর্ডার। বুঝে পাচ্ছি না ঠিক কোন যুক্তিতে পাঁচটা ম্যাচ ধরে একই ব্যাটিং অর্ডার রেখে দিল পাক টিম ম্যানেজমেন্ট। টি-টোয়েন্টিতে ‘প্রেডিক্টেবল’ হয়ে গেলেই মুশকিল। ওদের ব্যাটিং অর্ডার দেখে মনে হচ্ছিল, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক থেকে একটা অর্ডার ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। এবং নামতা পড়ার মতো ম্যাচের পর ম্যাচে সেটাই মানা হচ্ছে। কেন উমর আকমলের মতো ব্যাটসম্যানকে ওপরে তোলা হবে না? |
কলম্বোয় আফ্রিদি। উইকেট নেওয়ার এই উচ্ছ্বাস
অবশ্য ম্যাচ শেষে ম্লান হয়ে গেল। ছবি: এএফপি |
ধোনি দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে অশ্বিনকে পরে এনেছিল বলে দেশজুড়ে সমালোচনা হচ্ছে। একই ঝড়ের মুখে হাফিজকেও পড়তে হতে পারে। বিশেষ করে উমর যখন গত এক বছর ধরে পাকিস্তানের সেরা ব্যাটসম্যান। অথচ এ দিন নামল শোয়েব মালিক আউট হওয়ার পর। ম্যাচের এগারোতম ওভারে। রজ্জাককেও দিনের পর দিন বাইরে রাখা হচ্ছে। কেন হচ্ছে, বলতে পারব না। আফ্রিদিকে নিয়ে একটা ফাটকা খেলা যেত। বিশেষ করে আস্কিং রেট যখন ঘাড়ের উপর চেপে বসেছে। সেটাও হল না। বদলে কী দেখলাম? হেরাথ, মেন্ডিসের সামনে রীতিমতো হিমসিম খাচ্ছে পাক ব্যাটিং। কোন বলটা ভেতরে আসবে, কোনটা বাইরে যাবে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।
একে মাস্টারপ্ল্যান বলে কিছু নেই। তার মধ্যে ‘লিডার’-এর অভাব। শ্রীলঙ্কাকে দেখুন। মাহেলা আর সঙ্গকারা দু’-দু’টো দুর্ধর্ষ ক্যাপ্টেন টিমে। চটজলদি সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হচ্ছে না। পাকিস্তানে সে ভাবে কেউ নেই। হাফিজের মধ্যে অধিনায়কত্বের মশলা কতটা আছে সন্দেহ। টস জেতার সুবিধাটাও পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। ফায়দাও তুলেছে। মাহেলা (৪২) আর দিলশান (৩৫) ঠিকই করে রেখেছিল, যে থেকে যাবে, সে টানবে ষোলো-সতেরো ওভার। পাকিস্তানের ভাগ্য ভাল শ্রীলঙ্কানরা চালানো শুরু করে একেবারে শেষ দিকে। নইলে লজ্জায় মুখ আরও পুড়ত আফ্রিদিদের। |