|
|
|
|
মঞ্চেই আপত্তি দীনেশের |
তিস্তা নিয়ে মমতার সমালোচনায় জয়রাম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সমর্থন প্রত্যাহারের দু’সপ্তাহ পরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে নাম না করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করল কেন্দ্র। আজ ভারত-বাংলাদেশের এক আলোচনাচক্রে তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গ তুলে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, “আঞ্চলিক দলগুলি ভারতের বিদেশনীতির ক্ষেত্রে সঙ্গতিহীন ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিদেশনীতিকে কয়েদ করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। বিষয়টি ভয়াবহ।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে জয়রামের বিষয়টি নিয়ে মৃদু বাদানুবাদও হয়।
জয়রামের মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন রাজ্যের পুর ও নগোরন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, “হাসিনাকে বাংলাদেশে জেতানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তিস্তা চুক্তি করতে হবে, আবার ওবামাকে জেতাতে গিয়ে এফডিআই-কে সমর্থন করতে হবে এটা হতে পারে না।
এই মানসিকতা থেকেই স্পষ্ট, বিদেশি শক্তির হাতে দেশকে বিক্রি করে দিচ্ছে এই সরকার।”
তিস্তা এবং বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর চলছে। কিন্তু এত দিন বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি সরকারের শীর্ষ কর্তারা। মমতা সরে যাওয়ার পর এ বার তাই আর্থিক সংস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশ নীতির প্রশ্নেও কংগ্রেস যে সাহসী হতে চলেছে, আজ তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জয়রাম। তাঁর কথায়, “যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আমরা চাইছি যত দ্রুত সম্ভব বিষয়টির (তিস্তা চুক্তি) সমাধান হোক।” তাঁর যুক্তি, “বাংলাদেশকে তিস্তা চুক্তি রূপায়ণ নিয়ে কথা দেওয়া রয়েছে। সেই প্রতিশ্রুতি আমাদের রাখতে হবে। দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারতের নিরাপত্তার প্রশ্নে ঢাকা যা করেছে তার প্রতিদান দেওয়া দরকার।”
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ‘এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রান্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ আয়োজিত এই সম্মেলনটিতে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদীও। জয়রাম যখন বলছেন, তখন দীনেশ প্রতিবাদ করে বলেন, ‘তিস্তা চুক্তি জাতীয় বিষয়। তাতে আঞ্চলিক সিলমোহর দেওয়া ঠিক নয়’। যার জবাবে জয়রাম বলেন, ‘তিস্তা-চুক্তিকে টেনে আঞ্চলিক বিষয় হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে’। এর পর কথা না-বাড়িয়ে উঠে যান দীনেশ। জয়রাম বলেন, “আলফা-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ যে ভাবে আমাদের সাহায্য করেছে, তার প্রতিদান না দেওয়াটা অকৃতজ্ঞতা।” |
আঞ্চলিক দলগুলি ভারতের বিদেশনীতির সঙ্গে সঙ্গতিহীন
ভূমিকা নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিদেশনীতিকে কয়েদ
করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। বিষয়টি ভয়াবহ।
জয়রাম রমেশ |
হাসিনাকে জেতাতে পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে
তিস্তা চুক্তি করতে হবে, ওবামাকে জেতাতে
এফডিআই-কে সমর্থন করতে হবে এটা হতে পারে না।
ফিরহাদ হাকিম |
|
এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতি সংক্রান্ত উপদেষ্টা গহর রিজভি। তাঁর কথায়, “ভারত যদি তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি রূপায়ণ করতে পারে, তা হলে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ বদলে যাবে। ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কও এক ধাপে অনেকটা এগিয়ে যাবে।” গত বছর মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরেই তিস্তা-চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত তা করা সম্ভব হয়নি। মমতাকে রাজি করানোর জন্য কেন্দ্রের পক্ষ থেকে একাধিক বার দূত পাঠানো হয়েছে। কিন্তু বরফ গলেনি। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, যে ভাবে চুক্তির খসড়া তৈরি হয়েছে, তা রূপায়িত হলে রাজ্যকে অনেক বেশি জল দিয়ে দিতে হবে বাংলাদেশকে। ক্ষতিগ্রস্থ হবে উত্তরবঙ্গ। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মমতা নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে একটি রিপোর্ট তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তার কাজ এখনও শেষ হয়নি।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের নির্বাচন এগিয়ে আসছে। তিস্তা এবং সীমান্ত চুক্তি করতে না পারায় শাসক আওয়ামি লিগের উদ্বেগ বাড়ছে। সে দেশের ঘরোয়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমনই যে, ভারতের সঙ্গে তিস্তা বা সীমান্ত চুক্তি করতে পারলে আওয়ামি লিগ অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থায় থাকতে পারবে।
সরকারের এক কর্তার বক্তব্য, তিস্তা চুক্তি নিয়ে টালবাহানার ফলে বাংলাদেশের ভারত-বিরোধী গোষ্ঠীর হাতই শক্ত হচ্ছে। সম্প্রতি দীপু মণিও বলেছেন, “তিস্তা নিয়ে বাংলাদেশে এক চূড়ান্ত আশা তৈরি হয়েছে। ভারত যদি তা পূরণ করতে না পারে, তা হলে আমাদের সম্পর্ক খুব বড় রকমের ধাক্কা খাবে।” |
|
|
|
|
|