সংস্কার প্রচারে আসতে পারেন আনন্দ শর্মা
ইউপিএ ছেড়ে সরকার ফেলুন, ডাক মমতার
উপিএ সঙ্গীদের এ বার কেন্দ্রের পাশ থেকে সরে এসে উল্টে তাদের বিরোধিতা করার ডাক দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা পেনশন-বিমা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কারমূলক কাজে ছাড়পত্র দেওয়ার পরে তৃণমূল নেত্রীর হুঁশিয়ারি, এই সরকার লক্ষ্মণরেখা পেরিয়েছে। দেশের স্বার্থে এ বার এদের যাওয়া দরকার। কিন্তু কী ভাবে? তাঁর আবেদন, আসুন, অনাস্থা প্রস্তাব আনি। সে কাজে মুলায়ম-মায়াবতীকে ছাড়া যে সিদ্ধিলাভ হবে না, সেটা ভাল ভাবেই জানেন মমতা। তাই এই দু’জন-সহ ইউপিএ-র সব সমর্থক দলের প্রতি তাঁর বার্তা, “মানুষের বৃহত্তর স্বার্থে সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করুন। দেশ আপনাদের দিকে তাকিয়ে।”
প্রথমে বাম, তার পরে মমতা। গত আট বছর ধরে বিমা ও পেনশন ক্ষেত্রে আর্থিক সংস্কারের সিদ্ধান্ত এই দুই বাধায় বাক্সবন্দি করে রাখতে হয়েছিল মনমোহন সিংহকে। কিন্তু গত মাসে তৃণমূল সরে যাওয়ার পরে আর দেরি করতে চাননি মনমোহন। ঠিক দু’সপ্তাহের মাথায় আজ পেনশন ক্ষেত্রের জন্য বিদেশি লগ্নির দরজা খুলে দেওয়া হল, বাড়ানো হল বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা, ছাড়পত্র দেওয়া হল মমতার বিরোধিতায় আটকে থাকা ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিলটিকেও।
চরম আঘাতেরই কি প্রহর গুনছেন তৃণমূল নেত্রী। ছবি: নিজস্ব চিত্র
আর তার পরপরই এল মমতার হুঁশিয়ারি। ফেসবুকে এক বার্তায় তিনি জানিয়েছেন, “আজকের সিদ্ধান্তের পর পরিষ্কার, কেন্দ্র লক্ষ্মণরেখা পেরিয়ে গিয়েছে।” বলেছেন, “সরকার যানা জরুরি হ্যায়, দেশ কো বচানে কে লিয়ে... (দেশ বাঁচাতে এই সরকারের চলে যাওয়া প্রয়োজন)।” ইউপিএ-র সমর্থনকারী দলগুলির প্রতি মমতার বার্তা, “সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে দেশকে বাঁচাতে ওই দলগুলি যেন কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে আসে।”
গত সোমবার দিল্লির যন্তরমন্তরে জনসভায় এসে মমতা জানিয়েছিলেন, যে সব দল কেন্দ্রের জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, তাদের নিয়ে তিনি একটি ফেডারেল ফ্রন্ট গঠন করবেন। আজ সংস্কারের দ্বিতীয় দফার ধাক্কায় সেই প্রক্রিয়াও যে গতি পাবে, এমন দাবি তুলেছেন রাজনৈতিক ক্ষেত্রেরই কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, ১৯ জন সাংসদ নিয়ে মমতার একার পক্ষে ইউপিএ সরকারকে বিপাকে ফেলা সম্ভব নয়। বিশেষ করে সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টি যত দিন সরকারের সঙ্গে রয়েছে। তাই আজ কলকাতা থেকে ফেসবুকে তিনি যে বার্তা দিয়েছেন, সেখানে ইউপিএ-র সমর্থক দলগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আলাদা ভাবে। তাঁরা সমর্থন তুলে নেওয়ার পরে কাগজেকলমে সরকার যে এখন সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে, সে কথা জানিয়ে মমতা অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথাও বলেছেন। বলেছেন, “সংখ্যালঘু সরকারের বিরুদ্ধে
অনাস্থা প্রস্তাব আনব। বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে আবেদন জানাব, যাতে সংখ্যালঘু সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন।” আরও বলেছেন, “এই সরকারের এমন সিদ্ধান্ত অনৈতিক ও নীতিবহির্ভূত। বিমা এবং পেনশন ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আসায় আমআদমির সঞ্চয় ঝুঁকির মুখে পড়তে চলেছে।” তাঁর প্রশ্ন, “ইউপিএ সরকারের প্রকৃত উদ্দেশ্য কি দেশকে বেচে দেওয়া? আমরা একসঙ্গে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করব। সরকারকে এই ধরনের সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করতে দেব না।”
এই নিয়ে যে তৃণমূল নেতৃত্ব এর মধ্যেই জেডিইউ নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে কথা বলেছেন, তা আজ দলীয় সূত্রে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, মমতা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন আরও দুই মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক এবং জয়ললিতার সঙ্গেও। চাইছেন, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে এই লড়াইতে বিভিন্ন অ-কংগ্রেসি ও অ-বিজেপি দলগুলি তাঁর নেতৃত্বে একজোট হোক। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির বিরোধিতা করে ইউপিএ থেকে বেরিয়ে আসা বাবুলাল মারান্ডির সঙ্গেও কথা হয়েছে মমতার। তিনি আরও চাইছেন, কেন্দ্রের এই সব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মুখ খুলুন সপা নেতৃত্ব। সমর্থনও তুলে নিন।
আগামী মাসেই লখনউয়ে ইউপিএ সরকারের একাধিক জনবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করার কথা রয়েছে মমতার। সেই সভায় মুলায়ম বা তাঁর ছেলে তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ সিংহ যাদব উপস্থিত থাকবেন, এমন আশ্বাস মেলেনি। উল্টে বার্তা দেওয়া হয়েছে, মমতা যে হেতু জেডিইউ নেতা শরদ যাদবের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, তাই ওই সভা থেকে দূরেই থাকতে চান তাঁরা। যদিও তৃণমূল শিবিরের দাবি, আজ সরকার পেনশন-বিমা ক্ষেত্র নিয়ে সিদ্ধান্তের নেওয়ার পরে রাজনৈতিক দূত মারফত ফের একবার বার্তা পাঠানো হয়েছে মুলায়মের কাছে। মমতা ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছেন, দেশের সব কৃষক এক। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি এলে যেমন পশ্চিমবঙ্গের কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি হবে উত্তরপ্রদেশেরও।
মমতার মতোই বিরোধিতার সুর আজ বিজেপির গলাতেও। বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহা সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান। তাঁর নেতৃত্বে কমিটি বিমা ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ বিদেশি লগ্নির সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল। এ দিন বিজেপির বক্তব্য, ওই কমিটির ১৩ জন কংগ্রেস সাংসদ এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত ছিলেন। অথচ
আজ মন্ত্রিসভা ৪৯ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিল। মুখপাত্র প্রকাশ জাভরেকড় বলেন,
“এটা বিস্ময়কর।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায
দুপুরে
লুঠ চলছে লুঠ। আর তা
ঢাকতে ঝুট চলছে ঝুট।
রাতে
সরকার যানা জরুরি হ্যায়, দেশ কো বচানে কে লিয়ে...
(দেশ বাঁচাতে এই সরকারের চলে যাওয়া প্রয়োজন)।
তবে মূলত সংস্কারমুখী দল হিসেবে পরিচিত বিজেপি বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে সরকারকে সরাসরি আক্রমণে যেতে পারছে না। রাজনৈতিক সূত্র বলছে, এক সময় তারাই বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব এনেছিল। এই পরিস্থিতিতে তাই তারা কিছুটা হলেও উভয় সঙ্কটে। এক দিকে দল বলছে, বিমা ও পেনশন ক্ষেত্রে সব শ্রেণির স্বার্থ সুরক্ষিত থাকলে তারা সংস্কারের বিরোধী নয়। আবার অন্য দিকে মমতা-মুলায়ম কিংবা বামেরা বিদেশি বিনিয়োগের বিরুদ্ধে সরব হয়ে কংগ্রেসের বিরোধিতার হাওয়া তুললে সেই ঐক্যে চিড় ধরাতে চাইছে না বিজেপি।
আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বিমা ও পেনশনের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়ে বলতে গিয়ে জানান, তিনি ওই বিলগুলি সংসদের দুই বিরোধী নেতাকেই দেখিয়েছিলেন। তাঁর আরও বক্তব্য, “বিজেপি সভাপতিও সংস্কারের বিরুদ্ধে নন।” বিজেপি নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, চিদম্বরম এ কথা বলে আসলে বিরোধী শক্তির এই অদৃশ্য জোটকে ভাঙতে চাইছেন। দলের এক নেতার কথায়, “আমরা সেই ফাঁদে পা দিতে চাই না।” বরঞ্চ বিজেপি শিবির দাবি করেছে, পেনশন ও বিমা ক্ষেত্রে সব শ্রেণির স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে হবে। দল মনে করছে, পেনশনে সব সুপারিশ মেনে নেওয়া হলেও বিমার ক্ষেত্রে যে তা সম্ভব হয়নি, তা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন চিদম্বরম। দল এখন সেই খামতি খুঁজে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আগামী দিনে আক্রমণে নামার পরিকল্পনা নিতে চলেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.