|
|
|
|
পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে মৎস্যবন্দর |
সুব্রত গুহ • পেটুয়াঘাট |
উদ্বোধনের পরে প্রায় দু’বছর কেটে গেল। এখনও স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠল না দেশের বৃহত্তম দেশপ্রাণ মৎস্যবন্দর।
পূর্ব মেদিনীপুরের দেশপ্রাণ ব্লকের পেটুয়াঘাটে রসুলপুর নদীর মোহনায় প্রায় ১১.৮০ হেক্টর জমির উপরে গড়ে ওঠা এই মৎস্যবন্দরে প্রতি দিন গড়ে ২৮০টি ট্রলার মাছ নিয়ে ভেড়ে। কিন্তু মৎস্যবন্দরে ‘অকশন হল’ থাকা সত্ত্বেও মাছ নিয়ে মৎস্যজীবীরা চলে যান দিঘা মোহনায়। মাছ প্রসেসিংয়ের ইউনিটটি গড়ে না ওঠায় অন্য কোনও কাজকর্মও হয় না। কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ টাকার কিছু বকেয়া থাকায় পরিকাঠামোর কাজও সম্পূর্ণ হয়নি। সব মিলিয়ে শুধু মাছ ওঠা-নামানো ছাড়া কোনও ব্যবহারই নেই মৎস্যবন্দরের।
পেটুয়াঘাট ছেড়ে মৎস্যজীবীরা দিঘা মোহনায় চলে যান কেন?
স্থানীয় মৎস্যজীবী অশোক বর, শ্যামল মণ্ডলেরা জানান, পাইকার বা আড়তদারেরা পেটুয়াঘাটে আসেন না বলেই ফের মাছ নিয়ে দিঘায় যেতে হয়। এতে খরচ বেশি। শ্যামলবাবু বলেন, “অনেক সময় বেশি মাছ উঠলে পেটুয়াঘাটে যাই না। সরাসরি দ্ঘিা মোহনায় চলে যাই। তাতেও জ্বালানি খরচ বাড়ে।”
পাইকাররা-ই বা আসেন না কেন পেটুয়াঘাটে? |
|
—নিজস্ব চিত্র। |
দিঘা মোহনার বড় পাইকার শ্যামসুন্দর দাস বলেন, “পেটুয়াঘাটে কোনও পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি। তার উপরে কাঁথি থেকে ভায়া মুকুন্দপুর, শ্যামপুর হয়ে যে রাস্তা আছেদু’টোরই খারাপ অবস্থা। বড় ট্রাক ঢুকতে চায় না ওই রাস্তায়। বরং দিঘা থেকে হলে অন্য রাজ্যে যেতে সুবিধা হয়। তাই আমরা দিঘা মোহনাতেই যাই।”
যাদের তত্ত্বাবধানে ওই মৎস্যবন্দর গড়ে উঠছিল, রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সেই সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগমের আধিকারিক প্রদ্যোৎ পাহাড়ি অবশ্য যোগাযোগের অব্যবস্থার কথা মানতে চাননি। তাঁর মতে, “অকশন হলটিতে এখন ১৫-১৬টা ঘর রয়েছে। বাস্তবে ৫০টির মতো ঘর দরকার। মাছ ঝাড়াই-বাছাইয়ের জন্যও জায়গা দরকার। পরিকাঠামোগত এই সব অসুবিধার জন্যই সমস্যা হচ্ছে। অকশন হলটি দোতলা করা হবে শীঘ্র।” তাঁর বিশ্বাস, “নতুন কিছু চালু হতে সময় লাগে। ধীরে ধীরে মৎস্যবন্দরও প্রাণ পাবে।”
২০০৫ সালের ২৩ জুন রাজ্যের তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধী এই মৎস্যবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, অর্ধেক টাকা দেবে কেন্দ্রীয় সরকার। পরে অবশ্য প্রথম পর্যায়ের বরাদ্দ ৬০ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার পুরোটাই কেন্দ্র দেবে বলে ঠিক হয়। ওই টাকায় ১১০ মিটার ৭৫ মিটার ও ৮৪ মিটার দীর্ঘ তিনটি জেটি, ১৬৯২ বর্গ মিটারের অকশন হল, ১০০ মেট্রিক টন বরফ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বরফকল, ওয়ার্কশপ, পানীয় ও মাছ পরিচ্ছন্ন করার জন্য ২৫ লিটারের দু’টি জলাধার, প্রশাসনিক ভবন, ৪টি গভীর নলকূপ, ত্রিতল অতিথি নিবাস, মাকের্ট কমপ্লেক্স, ডরমেটরি, প্রসেসিং সেন্টার, ফুয়েল পাম্প প্রভৃতি তৈরি করা হবে বলে ঠিক হয়। রাজ্য সরকারের অধীনস্থ সংস্থা পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগম এর নির্মাণকাজ দেখভাল করে। বছর পাঁচেক পরে, ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর মৎস্যবন্দরের উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। কিন্তু প্রথম পর্যায়ের বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি। ১০০ মেট্রিক টন বরফের বদলে বতর্মানে ৫০ মেট্রিক টন বরফ উৎপন্ন হচ্ছে। বাকি ৫০ মেট্রিক টন বরফ উৎপাদনের প্ল্যান্ট তৈরির কাজ চলছে। পিপিপি (পাবলিক-প্রাইভেট-পার্টনারশিপ) মডেলে চারটি প্রসেসিং সেন্টার নির্মাণের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে সবে। পশ্চিমবঙ্গ মৎস্য নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পের বরাদ্দ ৫ কোটি টাকা দীর্ঘ দিন ধরে বকেয়া ফেলে রেখেছে। ফলে বেশ কিছু কাজ আটকে আছে।”
তৃণমূল-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যের নতুন মৎস্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কংগ্রেসের আবু হেনা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন ও দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তরুণ জানার অভিযোগ, “আবু হেনার আমলে মৎস্যবন্দরের কোনও কাজ হয়নি। বারবার এই নিয়ে দাবিসনদ পেশ করেও লাভ হয়নি। ফলে অচলায়তনের সৃষ্টি হয়েছে বন্দরে।”
রাজ্যে কংগ্রেস-তৃণমূল জোট ভেঙে যাওয়ায় আবু হেনা পদত্যাগ করেছেন। নতুন মৎস্যমন্ত্রী কে হবেন জানা নেই। দ্বিতীয় পর্যায়ের বরাদ্দ তো দূরের কথা, প্রথম পর্যায়ের বকেয়া টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আর দেবে কি না, তা নিয়েও সংশয় যথেষ্ট। সব মিলিয়ে দেশপ্রাণ মৎস্য বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা ক্রমশই বাড়ছে। |
|
|
|
|
|