বিধানসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পরে বারবার দলের কর্মীদের ঔদ্ধত্য ছেড়ে সাধারণ মানুষের কথা ধৈর্য ধরে শুনতে বলছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এ বার নতুন শাসকদলের কর্মীদেরও একই ভাবে সতর্ক করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। টেনে আনলেন সিপিএমের পরিণতির কথাও।
বৃহস্পতিবার গলসির হাইস্কুল মাঠে দলীয় সভায় মুকুলবাবু বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচন জানুয়ারিতে হতে পারে বা মে মাসে। তার আগে মানুষের কাছে যেতে হবে। আমাদের বিনীত হতে হবে। মানুষের সঙ্গে সমস্ত কিছু আলোচনা করুন। মনে রাখবেন, দম্ভের জন্য সিপিএমকে মানুষ ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। আমাদের মধ্যে যেন সেই দম্ভ না আসে, সে দিকে নজর রাখতে হবে। দেখতে হবে কোনও মতেই যেন সিপিএম জায়গা ফিরে না পায়।”
তথাকথিত ‘জনমুখী’ রাস্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই ইউপিএ-২ সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে তৃণমূল। এ দিনও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, এফডিআই চালু ইত্যাদি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদেই সভা ডাকা হয়েছিল। কিন্তু এই পদক্ষেপ রাজ্যে কতটা জনগ্রাহ্য হয়েছে বা আদৌ হয়েছে কি না, তার প্রথম বড় পরীক্ষা হবে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে। এর মধ্যে জায়গায় জায়গায় তৃণমূলের দলীয় কোন্দল রাজ্য নেতৃত্বের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বহু ক্ষেত্রে দুর্ব্যবহার, দাদাগিরি, তোলাবাজির অভিযোগও উঠছে। সে সব মাথায় রেখেই সম্ভবত নিচুতলার কর্মীদের আগাম সতর্ক করতে চাইছে তৃণমূল।
|
মুকুলবাবু অবশ্য দাবি করেন, তাঁদের কর্মীরা রাজ্যে কোথাও বিরোধীদের উপরে চড়াও হচ্ছেন না। তাঁর বক্তব্য, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্লোগান তুলেছিলেন, বদলা নয় বদল চাই। তাই সিপিএমের অত্যাচারের কোনও বদলা নেওয়া হয়নি।” তাঁর প্রশ্ন, “সিপিএম বলছে, হিংসা কমাও, ভোট করাও! আমি ওদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, কে এত দিন ধরে রাজ্যে হিংসা ছড়িয়েছিল?” তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে রাজ্যে কোথাও গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ বা পুরসভায় প্রধানেরা ঢুকতে পারছেন না এমন অভিযোগ উঠেছে কি না, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
খোলাখুলি আক্রমণ শুরু হয়েছে কংগ্রেসের বিরুদ্ধেও। মুকুলবাবুর হুঁশিয়ারি, “সিপিএম-কংগ্রেস দুই পুরনো ভাই ফের এক হয়েছে। মনে রাখবেন, ওরা যৌথ ভাবে আক্রমন শানাবে! আমাদের সে দিকে নজর রাখতে হবে।” পাশাপাশি তাঁর দাবি, “এই পঞ্চায়েত নির্বাচনেই ওই দু’টি দল রাজ্যের মানচিত্র থেকে মুছে যাবে। সেটা ঠেকাতে ওরা যত দিন সম্ভব ভোট আটকে রাখার চেষ্টা করছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন যে ভারতের নির্বাচন কমিশনের এক্তিয়ারে নয়, সেটাও ভুলে গিয়েছে!” কিন্তু যে জনপ্রিয়তা তাঁদের রাজ্যের মসনদে বসিয়েছে তা ধরে রাখা যে সহজ কাজ নয়, তা-ও কার্যত মনে করিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষনেতা। তাঁর কথায়, “জনতা কিন্তু জনার্দন। তার সব দেখে। মনে রাখবেন, মানুষই শেষ সিদ্ধান্ত নেবেন।” |