পেশায় ভ্যানচালক বাবা তাঁর বিয়ের জন্য দেনা করেছিলেন। এখনও বাজারে দু’লক্ষ টাকা ধার। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়ায় বছরখানেক ধরে তিনি বাপেরবাড়িতে। রয়েছে পাঁচ বছরের একটি মেয়েও। আর এ সব কারণেই মুম্বইতে পরিচারিকার কাজের প্রলোভনে পা দিয়ে দুই যুবকের সঙ্গে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছেন তিনি। কাটোয়া থেকে পুলিশ আটক করার পরে এমনটাই দাবি করলেন বাংলাদেশি এক তরুণী।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে আটক করা হয় বছর বাইশের ওই তরুণীকে। তাঁর বাড়ি বাংলাদেশের যশোর জেলার মনিরামপুর থানার চালঝড়া গ্রামে। মঙ্গলবার স্থানীয় চালকিডাঙা গ্রামের দুই যুবক আসরাজুল শেখ ও মামুদ শেখের সঙ্গে মুম্বই যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়েন। ওই রাতে বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে বারাসতে এক জনের বাড়িতে আশ্রয় নেয় তারা। বৃহস্পতিবার হাওড়া স্টেশন থেকে একটি এক্সপ্রেস ট্রেনে চাপে।
কাটোয়া থানায় বসে ওই তরুণীর দাবি, সুদে-আসলে বাংলাদেশি মুদ্রায় এখন প্রায় দু’লক্ষ টাকা দেনা তাঁর বাবা দাউদ হোসেনের। মহাজনেরা বাড়িতে গিয়ে তাগাদা দেয়। রাস্তা-ঘাটে বাবাকে হেনস্থাও করে। |
পুলিশ জেনেছে, চালঝড়ার পাশের গ্রাম চালকিডাঙার আসরাজুলের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পরে সে-ই ওই তরুণীকে মুম্বইতে পরিচারিকার কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই কাজ করলে থাকা-খাওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশি মুদ্রায় মাসে ১২ হাজার টাকা করে পাওয়ার প্রলোভনও দেখায়। ওই তরুণী বলেন, “আমি প্রতি মাসে বাবার হাতে কয়েক হাজার টাকা করে পাঠাতে পারতাম। তা দিয়ে বাবা দেনা শোধ করতে পারত। আমার মেয়েটাও ভাল ভাবে বড় হতে পারত। এই লোভেই মুম্বইয়ের উদ্দেশে বেরিয়েছিলাম। ঢাকা যাচ্ছি বলে বাড়ি থেকে বেরোই।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাওড়া থেকে ওই তরুণী সাধারণ কামরার তিনটি টিকিট কেটে দুই যুবকের সঙ্গে একটি এক্সপ্রেসে চড়ে। কিন্তু ট্রেন ছাড়ার আগে কামরায় রেলপুলিশ উঠতে দেখে যুবক দু’টি পালায়। ওই তরুণীও হতচকিত হয়ে ট্রেন থেকে লাফিয়ে নেমে পড়েন। তার পরে প্ল্যাটফর্ম ধরে কিছুটা এগিয়ে একটি ট্রেন ছাড়তে দেখে তাতেই চেপে বসেন। ট্রেন ছেড়ে দেয়। কাটোয়া থানায় বসে ওই তরুণী বলেন, “কয়েক ঘণ্টা পরে ট্রেন ফাঁকা হয়ে গেল। কয়েক জন পুরুষ শুধু বসেছিলেন। ভয়ে কাঁদছিলাম। দু’জন এগিয়ে এসে জিজ্ঞাসা করায় তাঁদের সমস্ত ঘটনা বলি। বাংলাদেশে বাড়িতে ফোন করব বলে জানাই।” তিনি জানান, কাটোয়ায় ট্রেন থামার পরে স্টেশন পেরিয়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি দোকান দেখিয়ে দেন ওই দু’জন।
ওই দোকানের মালিক সুবিক্রম রায় বলেন, “আগে আমার ফোনের বুথ ছিল। এখন নেই। ওই মহিলা আমার কাছে এসে ঘটনার কথা জানান। আমার মোবাইল থেকে বাংলাদেশে ফোন করেন। আবার বিপদে পড়তে পারেন আশঙ্কা করে কাটোয়া থানায় খবর দিই।” খবর পেয়ে কাটোয়ার এসডিপিও ধ্রুব দাস, সিআই শচীন্দ্র পুড়িয়া ও কাটোয়া থানার ওসি সনৎ দাস গিয়ে তাঁকে আটক করেন। জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা সন্ধ্যায় বলেন, “ওই মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ হেফাজতে নিয়ে সিআইডি-কে দিয়ে যে দুই যুবকের সঙ্গে তিনি এ দেশে এসেছিলেন তাঁদের ছবি আঁকানো হবে।” |