সারা বছরের জন্য জিন্স, টি-শার্ট বা কুর্তা যতই ‘ফিট’ হোক না কেন পুজোর চারটে দিন জমিয়ে শাড়ি পরার মজাটাই আলাদা। তাই কিশোরী থেকে ষাটোর্ধ্ব, পুজোর আগে শাড়ির দোকান দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন সকলেই।
সারা বছর পাশ্চাত্য পোশাকই পড়েন কলেজ পড়ুয়া নন কোম্পানি কবিগুরু এলাকার তোর্সা রায়। কিন্তু তাঁকে দেখা গেল সিটি সেন্টারের একটি শপিং মলে শাড়ি কিনতে। তাঁর কথায়, “সারা বছর তো আর শাড়ি পরা সম্ভব হয় না। তাই পুজোর চার দিন চুটিয়ে শাড়ি পড়ার আনন্দ উপভোগ করি।”
তাঁর উপলব্ধি, ‘‘পুজোর আড্ডায় শাড়ির এক আলাদা আভিজাত্য রয়েছে।” শুধু তোর্সাই নন, গৃহকর্ত্রী থেকে চাকুরিরতা পুজোয় সকলেরই প্রথম পছন্দ শাড়ি।
অল্পবয়সীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সাধারণত ঊজ্জ্বল রঙের সঙ্গে হাল্কা শাড়িই তাদের পছন্দ। মধ্য বয়স্কারা আবার ফিউশন কাজের ওপর কাজ করা শাড়ি পছন্দ করেন। ট্রাডিশনাল অথচ হাল্কা শাড়ি তুলনায় তাঁদের বেশি পছন্দ। তরুণী রিমি সেন বললেন, ‘‘পুজো ক’দিন নানা ধরনের পোশাক পরি। তবে অষ্টমীর সকালে শাড়ি মাস্ট।”
ষাটোধ্বর্র্ রমলা হালদার জানালেন, সেই ছোট থেকে শাড়ি পরছেন। তখন তো শাড়ির এত রকম ফের ছিল না। তিনি খুশি, এখন শাড়ি নিয়ে নানা রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন প্রস্তুতকারকরা। তিনি বললেন, “এ বার একটা হাল ফ্যাশনের গিচা শাড়ি কিনেছি।” |
তবে বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, দুর্গাপুজোয় তাঁতের শাড়ির চাহিদা আজও কমেনি। পাশাপাশি, তাঁতের শাড়িতে সুতির বাহারি অ্যাপ্লেক, কাঁথা স্টিচের কাজ করা শাড়ির বিক্রি ভালই। এছাড়া গত কয়েক বছরের মতো এ বারও কাঞ্জি কটন, কোঠা, তসর, শিফন, জর্জেট, ক্রেপ, মলমল, বাটিক, হ্যান্ড পেন্টিং, আড়িওর্য়াক আর জারদৌসি শাড়ির চাহিদা রয়েছে। সিল্কের মধ্যে বাজার মাতাচ্ছে কাঞ্জিভরম, কোলাম, হায়দ্রাবাদের ইক্কত, মুগা, পিওর সিল্কের মধ্যে নিমজুরি সিল্ক, কলমকারী সিল্ক। কাশ্মিরী রেশম ওয়ার্ক, সিল্ক বুটিকে গুজরাটি স্টিচের বাজারও মন্দ নয়। তবে সিটি সেন্টারের শপিং মলের এক স্টোরের কর্মী অবিনাশ যাদবের দাবি, “এ বছর ট্র্যাডিশনাল শাড়ির চাহিদা রয়েছে। সঙ্গে ফ্যান্সি ডিজাইনার শাড়িও বিক্রিও বেশ ভাল।”
তবে শাড়ি কেনার আগে কয়েকটি বিষয় মাথা রাখা দরকার। বেনাচিতি বাজারের ব্যবসায়ী সুমন মণ্ডলের বক্তব্য, “যাঁরা রোগা তাঁদের জন্য সুতি, তসর বা কোঠা শাড়ি ঠিক আছে। আর যাঁরা একটু মোটা তাঁরা সিল্ক, শিফন, জর্জেট বা চিকনের কাজ করা শাড়ি পরতে পারেন। তাহলে তুলনামুলক রোগা মনে হবে। আবার যাঁরা লম্বা, তাঁদের জন্য চওড়া পাড়ের শাড়ি আদর্শ।”
চণ্ডীদাস বাজারের বস্ত্র বিক্রেতা বিনয় পালের কথায়, “যাঁরা ফর্সা তাঁরা হাল্কা থেকে গাঢ়, যে কোনও রঙের শাড়ি পরতে পারেন। শ্যামলা বর্ণের মহিলারা ঘন নীল, ঘন সবুজ, সাদা, হাল্কা গোলাপী, উজ্জ্বল হলুদ রঙের শাড়ি পরতে পরুন।” |