আত্মসমর্পণকারী কেএলও-দের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্যোগ
মাওবাদীদের সমাজের মূল স্রোতে ফেরানোর প্রক্রিয়া আগেই শুরু হয়েছে। এ বার বাম-আমলে আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিদের পুনর্বাসন-প্রক্রিয়ার জট ছাড়াতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বুধবার কোচবিহারে আলোচনার পরে এমনই দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “দার্জিলিং, কোচবিহার ও জলপাইগুড়িতিন জেলার জেলাশাসকদের কাছে কেএলও জঙ্গিদের পুনর্বাসন প্রকল্পের ব্যাপারে তথ্য-পরিসংখ্যান তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রকল্পের সুবিধা কারা পেয়েছেন, কত জন পাননি, কেন পাননিসেই তথ্যও জানাতে বলেছি। সেই সঙ্গে আত্মসমর্পণকারী কেএলও-দের অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শিলিগুড়িতে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরে তাঁদের অভাব-অভিযোগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে।” পাশাপাশি, মন্ত্রী জানান, আত্মসমর্পণকারীদের আর্জি, অভিযোগ ও জেলাশাসকদের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে একটি নোট তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমা দেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর বক্তব্য, “এখনই কোনও আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি না। ওঁদের সাহায্য দেওয়ার নামে হয়রান করতে পারব না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করা হবে।”
৯০-এর দশকের শেষ থেকে ২০০২ পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায় দাপিয়ে বেড়াত কেএলও। অপহরণ, খুন, তোলাবাজি, নাশকতা-সহ নানা অভিযোগ ছিল ওই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। তবে ২০০৬ সালের মধ্যে কেএলও জঙ্গি, ‘লিঙ্কম্যান’দের একটা বড় অংশ আত্মসমর্পণ করেন। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জেলার অন্তত ২০০ জন আত্মসমর্পণকারীকে মূলস্রোতে ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দেয় তৎকালীন সরকার। প্রশাসন সূত্রের খবর, তাঁদের মধ্যে জনা পঞ্চাশ ব্যাঙ্ক ঋণ, অনুদান পান। কয়েকজনকে ট্রাক্টর দেওয়া হয়। বাকিরা কোনও সরকারি সাহায্য পাননি বলে গৌতম বর্মা, উত্তম রায়, জয়ন্ত বর্মনের মতো আত্মসমর্পণকারী কেএলও-দের অভিযোগ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁরা বলেছেন, “আগের সরকারের আমলে মাসের পরে মাস ঘুরেও সরকারি সাহায্য পাইনি। নতুন সরকার আসার পরে দেড় বছর কেটেছে। এখনও কিছু হল না। এ ভাবে বাঁচা যায় না।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, কেএলও-র আত্মসমর্পণকারী জঙ্গিদের একাংশের গতিবিধির বিষয়ে মহাকরণের কর্তারা প্রায় সকলেই ওয়াকিবহাল। ইতিমধ্যেই টম অধিকারী, মালখান সিংহ-সহ বেশ কয়েকজন কেএলও জঙ্গি ফের নিখোঁজ হয়ে গিয়েছেন। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, আত্মগোপনকারী কেএলও-এর স্বঘোষিত ‘চিফ’ জীবন সিংহ ওরফে তমির দাসকে নতুন করে সংগঠন গোছানোয় সাহায্য করতেই জঙ্গল-জীবনে ফিরে গিয়েছেন আত্মসমর্পণকারীদের একাংশ। উপরন্তু, দোরে দোরে ঘুরেও সাহায্য না পেয়ে আরও অনেকে কেএলও-র আত্মগোপনকারী জঙ্গিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে সরকারকে রিপোর্ট দিয়েছেন গোয়েন্দারা। সরকার গঠনের পরে একাধিক বার উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়া মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও পুলিশ-প্রশাসন ও দলের নেতাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পৌঁছেছে। সরকারি ও বেসরকারি--উভয় সূত্রে পাওয়া তথ্যের নিরিখেই আত্মসমর্পণকারী কেএলও জঙ্গিদের সমস্যা নিয়ে ভাবছে সরকার।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে জেনেছি, শুধু জলপাইগুড়িতেই পুনর্বাসন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকা দরকার।” তাঁর সংযোজন, “আগের সরকার বন্দোবস্ত করলে আত্মসমর্পণকারীদের হয়রানি হত না।”
কেএলও জঙ্গিরা আত্মসমর্পণ করার পরেও দীর্ঘ দিন সরকারে ছিলেন বামেরা। তা হলে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি কেন? কোচবিহারের সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন প্রাক্তন বনমন্ত্রী অনন্ত রায় বলেন, “অনেককেই ট্রাক্টর-সহ নানা অনুদান, সাহায্য করা হয়েছে। বাকিদের সাহায্য দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছিল। তবে যত দূর জানি, সেই ফাইল নানা জায়গায় আটকে থাকায় জটিলতা তৈরি হয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.