সচেতনতার প্রচারে ভাদু গান হাতিয়ার দোগাছিয়া পঞ্চায়েতে
ডেঙ্গির ব্যাপারে সচেতন করতে ভাদু গানকে হাতিয়ার করল পূর্বস্থলীর দোগাছিয়া পঞ্চায়েত। শুধু ডেঙ্গি নয়, একশো দিনের কাজ-সহ নানা প্রকল্পে সাফল্যের দিক বাসিন্দাদের কাছে তুলে ধরতেও এই গানের সাহায্য নিয়েছে তারা।
পূর্বস্থলী ১ ব্লকের শেষ প্রান্তে রয়েছে এই দোগাছিয়া পঞ্চায়েত। এখানকার নানা গ্রামে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষের বাস। তাঁদের অধিকাংশই কৃষিজীবী। দরিদ্র এই এলাকায় লোক সংস্কৃতির চর্চা বহু পুরনো। গ্রামবাসীদের দাবি, তিন দশক আগেও এখানকার ভাদু, রায়বেশে, ঢোলসানাই, শিল্পীদের খ্যাতি ছিল। রায়বেশে, ঢোলসানাই শিল্পীরা হারিয়ে গেলেও এখন এই এলাকায় রয়ে গিয়েছেন ভাদু গানের শিল্পীরা। ভাদ্র-আশ্বিনে রাস্তায় ঘুরে গান করেন তাঁরা।
—নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ভাদু শিল্পীদের সংখ্যা প্রায় ৫০ জন। সম্প্রতি এলাকায় ডেঙ্গি নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়। বহু মানুষ পঞ্চায়েতে গিয়ে জানান, এলাকায় মশাবাহিত রোগ ছড়াচ্ছে। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েতের সাহায্যের জন্য আবেদন জানান তাঁরা। তবে পঞ্চায়েত সদস্যদের দাবি, এলাকার স্বাস্থকেন্দ্রগুলিতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখনও মশাবাহিত রোগ তেমন আকার নেয়নি এলাকায়। রাজ্যের নানা জায়গায় ডেঙ্গির প্রকোপের কথা শুনেই এলাকাবাসী খানিকটা আতঙ্কে ভুগছেন বলে ধারণা হয় পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের। এই আতঙ্ক কাটাতে প্রধান প্রণব রায়চৌধুরী কয়েক জনের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেন, সাধারণ মানুষের ভুল ভাঙাতে ভাদু গানের সাহায্য নেওয়া হবে। পাশাপাশি, একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস যোজনা, বার্ধক্য ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী গঠন-সহ নানা ব্যাপারে পঞ্চায়েত থেকে সাধারণ মানুষ কী সাহায্য পেতে পারেন, তা-ও ভাদু গানের মাধ্যমে প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০ জন ভাদু শিল্পীকে এ জন্য গান বাঁধার আবেদন জানানো হয়। পঞ্চায়েতের পরামর্শে সচেতনতা প্রচারে রাজি হন শিল্পীরা।
সম্প্রতি দোগাছিয়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয় এলাকার বাসিন্দাদের। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা এই সভায় ভাদুশিল্পীরা গানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জানান, জ্বর হলে ভয়ের কিছু নেই। হাতের কাছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা করান। বাড়িতে মশারি টাঙান। বাড়িতে কোনও পাত্রে জল জমিয়ে রাখবেন না। এ সবের পাশাপাশি, নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে গরিব পরিবারের মহিলাদের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর বিকল্প নেই। ওই শিল্পীরা গেয়ে ওঠেন,
‘ভুলো না গো মহিলারা
আছে আমাদের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী গড়া
স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী খুললে পরে
মিটবে মোদের সংসারে জ্বালা।”

পঞ্চায়েতের হরিসভা এলাকার শিল্পী গোপাল সর্দার বলেন, “মানুষকে বোঝানোর দায়িত্ব নিয়ে পথে নেমেছি। আশা করি, সফল হব।” আর এক শিপ্লী সুদেব রায়চৌধুরীর কথায়, “সচেতনতা প্রচারের জন্য নতুন নতুন গান বাঁধা হচ্ছে। রোজ সন্ধ্যায় নতুন নতুন গানের মহড়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে আমরা বোঝাতে পারব বলেই বিশ্বাস।”
স্থানীয় বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েত এক দিকে সচেতনতার প্রচার করছে। অন্য দিকে, লোকশিল্পীদের এ কাজের মাধ্যমে উৎসাহ দিচ্ছে। এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।” প্রধান প্রণববাবু বলেন, “এলাকার চাঁদপুর, ভাতুড়িয়া, কোঁড়াপুর, যশপুর-সহ নানা এলাকায় ভাদুশিল্পীদের নিয়ে সভা করব। সচেতনতা শিবিরে এলাকাবাসীর চোখ খুলবে বলেই আশা রাখছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.