নদিয়ার কৃষ্ণনগরের রায়পাড়ায় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পণ্যাগার নিগমের গুদাম। মজুত রয়েছে ইফকো এবং অন্য বেসরকারি সার কোম্পানির কয়েক হাজার মেট্রিক টন সার। সার ভর্তি সারি সারি প্লাস্টিকের ব্যাগ। গুদামে সার মজুত করে নিশ্চিন্তে রয়েছে ইফকো (ইন্ডিয়ান ফার্মার্স ফার্টিলাইজার কো-অপারেটিভ লিমিটেড)। কিন্তু ভয়ে কাঁপছেন গুদামের দায়িত্বে থাকা অফিসার!
কেন? গত ২৩ অগস্ট মাঝরাতে গুদামে মজুত সারের প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বিমার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় শর্ট সাকিট থেকে আগুন লেগে বা বৃষ্টিতে প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা সার নষ্ট হলে কী হবে? টাকা তো মেটাতে হবে নিগমকেই। অথচ নিগমের কলকাতার সদর দফতরে বিমা নবীকরণের উদ্যোগই নেই। |
বাঁকুড়ার গোবিন্দনগরে ওই নিগমের অন্য একটি গুদামে বিভিন্ন সামগ্রীর সঙ্গে মজুত রয়েছে রাজ্যের অত্যাবশ্যক পণ্য নিগমের সাত হাজার কুইন্টাল চাল। সেখানে মিড-ডে মিলের চালও রয়েছে। বন্যায় বা আগুন লেগে সেই চাল নষ্ট হলে কী হবে, ভেবে অস্থির গুদামের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক। বাঁকুড়ার গুদামে মজুত পণ্যের বিমার অঙ্ক তিন কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। সেখানেও বিমা নবীকরণ হয়নি। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পণ্যাগার নিগমের ৩০টি গুদামে মজুত পণ্যের বিমার মূল্য ১৫৪ কোটি টাকার বেশি। বিমা নবীকরণ হয়নি কোনও ক্ষেত্রেই। |
|
কী কী আটকে |
ছোট-বড় মেরামতি |
রক্ষী, সাফাইকর্মীদের বেতন |
বিদ্যুৎ, ফোনের বিল |
গুদামে কী থাকে |
চাল, গম, অন্যান্য শস্য, সার |
ত্রাণের কম্বল, ত্রিপল, চিঁড়ে, গুড় |
বাজেয়াপ্ত সামগ্রী |
জনগণনার নথি, বই |
ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের বই |
বিভিন্ন সংবাদপত্র সংস্থার নিউজপ্রিন্ট |
কী হতে পারে |
আগুন, বন্যা বা অন্য বিপর্যয়ে পণ্য নষ্ট হলে নিগমকেই পুরো টাকা মেটাতে হবে |
|
এই অব্যবস্থা কেন? নিগম সূত্রের খবর, গত ১ অগস্ট থেকে নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) পদটি খালি। তাই সমস্যা বাড়ছে। যুগ্মসচিব পদমর্যাদার এক অফিসারকে এমডি-র দায়িত্ব সামলাতে বলা হয়েছে ঠিকই। তবে সদর দফতরে তাঁর উপস্থিতি অনিয়মিত। স্থায়ী এমডি নিযুক্ত না-হলে নিগমের বাণিজ্য বৃদ্ধির পরিকল্পনা, নতুন গুদাম তৈরি এবং অন্যান্য কাজ গুরুত্ব পাবে না। ছোট-বড় অনেক কাজই আটকে আছে। গুদাম মেরামত থেকে শুরু করে রক্ষীদের বেতন বা আয়কর ফাইলের কাজ এগোচ্ছে না। কর্মী-বিক্ষোভের ভয়ে নিগমের সচিব মৌসুমী মান্ডি সদর দফতরে আসাই বন্ধ করেছেন বলে অফিসার ও কর্মীদের অভিযোগ। ফোনে যোগাযোগ করা হলে সচিব বলেন, “আমি কিছুই বলব না।” শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্থায়ী ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিযুক্ত না-হওয়া পর্যন্ত এক যুগ্মসচিবকে ওই নিগমের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।”
বিমা নবীকরণে টালবাহানা কেন? পণ্যাগার নিগম কি তা হলে রুগ্ণ হয়ে পড়েছে? বিমা নবীকরণের টাকা নেই? রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে নিগমের সদর দফতরের কর্মীদের দাবি, রুগ্ণ তো নয়ই। বরং গত আর্থিক বছরেও সংস্থার লাভ হয়েছে তিন কোটি টাকারও বেশি। তবে নিগমের এক শ্রেণির অফিসার-কর্মীর অভিযোগ, রাজ্যের অধিগৃহীত এই লাভজনক সংস্থা স্রেফ পরিচালনার অভাবে রুগ্ণ হওয়ার পথে। পালাবদলের পরে নতুন সরকার বারে বারেই ঘোষণা করেছে, পরিবহণ-সহ বিভিন্ন সংস্থাকে ভর্তুকি দিতেই কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। পরিবহণ, দুধ বা অন্যান্য সমবায় সংস্থায় সময়মতো বেতন দিতেই হাঁপিয়ে উঠছে অর্থ দফতর। অন্যান্য নিগম বা সংস্থা যখন সরকারের ভর্তুকির উপরে নির্ভরশীল, তখন এই সংস্থা লাভ করছে। কিন্তু প্রশাসনিক জটিলতায় এই নিগমও লোকসানের কবলে পড়তে চলেছে। তাঁরা বলছেন, বিমা নবীকরণে গড়িমসির ফলে কোনও বিপর্যয়ে পণ্য নষ্ট হলে টাকা গুনতে হবে নিগমকেই। তখন সংস্থার রুগ্ণ হয়ে পড়াটা আর আটকানো যাবে না।রাজ্যের শিল্প পুনর্গঠন দফতরের অধীন ‘পাবলিক এন্টারপ্রাইজ’ বিভাগের এক আমলা জানান, ওই নিগমে লাভের একটি অংশ পেয়ে থাকে রাজ্য। কর্মীদের বেতন, বোনাস, গ্র্যাচুইটি, প্রভিডেন্ট ফান্ড সবই দেয় নিগম। ওই আমলার আশঙ্কা, “এমন একটি লাভজনক সংস্থা শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিক উদাসীনতাতেই না লাটে উঠে যায়!” |