পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জেলাওয়াড়ি কাজের খতিয়ান নিতে বৈঠকে ডাকা হল শাসক দল তৃণমূল এবং অধুনা-বিরোধী কংগ্রেস বিধায়কদের। ডাকা হল না বামফ্রন্ট বিধায়কদের। যার জেরে ফের বিভাজনমূলক আচরণের জন্য অভিযোগের আঙুল উঠেছে রাজ্য সরকারের দিকে। পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য প্রাথমিক ভাবে আশ্বাস দিয়েছেন, পরে তিনি আলাদা করে বাম বিধায়কদের ডেকে আলোচনা করবেন।
বর্ধমান, বীরভূম ও পুরুলিয়ার বিধায়কদের নিয়ে বুধবার নিজের দুই দফতরের কাজ পর্যালোচনা করতে গিয়ে সুব্রতবাবুকে অবশ্য অসন্তোষের মুখে পড়তে হয়। তিন জেলাতেই দফতরের কাজ ঠিকমতো এগোয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাসক ও সরকারের প্রাক্তন শরিক দলের বিধায়কেরা। তবে জেলা ধরে এই ধরনের বৈঠকে বাম বিধায়কদের একসঙ্গে না-ডাকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। পুরুলিয়া জেলার প্রকল্পগুলির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিনই মন্ত্রী সুব্রতবাবুকে চিঠি দিয়ে সরকারের ‘পক্ষপাতমূলক মনোভাবে’ ইতি টানার আর্জি জানান। সূর্যবাবু লিখেছেন, পুরুলিয়া জেলাতেই সিপিএম, ফব-র এক জন করে বিধায়ক। বাম বিধায়কদের বৈঠকে না-ডাকার ফলে জনপ্রতিনিধি হিসাবে এলাকার সমস্যা জানানোর গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
তবে মন্ত্রী সুব্রতবাবু চেষ্টা করেছেন বিতর্কে দাঁড়ি টানার। তাঁর বক্তব্য, “আগে তৃণমূল এবং কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁরা জেলায় জেলায় প্রকল্পের হাল নিয়ে তাঁদের মতামত জানাচ্ছেন। পরে বাম বিধায়কদের সঙ্গেও আলোচনা করব।” সরকারি সূত্রের বক্তব্য, একসঙ্গে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বাম বিধায়কদের ডাকলে পারস্পরিক উতোর-চাপানে কাজ পণ্ড হওয়ার আশঙ্কা ছিল। বাম মহলের তরফে আবার পাল্টা মত, প্রকল্প নিয়ে আলাদা আলাদা করে আলোচনা করতে গেলে কাজে অনাবশ্যক বিলম্ব ও জটিলতা তৈরি হতে পারে। তিন জেলার অধিকাংশ বিধায়কই এ দিনের বৈঠকে পানীয় জল ও রাস্তাঘাটের সমস্যা নিয়ে অভিযোগ জানান বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। এলাকায় নলকূপ না-থাকা এবং পাইপলাইনে পানীয় জলের সরবরাহ নিয়েও ক্ষোভ জানান তাঁরা। রাঢ়বঙ্গের জেলাগুলির অনেক জায়গায় আবার পাইপলাইন থাকলেও সেখানে জল সরবরাহ হয় না বলে মন্ত্রীকে জানান কংগ্রেসের বিধায়কেরা। প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনায় রাস্তাঘাট তৈরি হলেও তিন-চার মাস পরেই তার বেহাল দশা হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে। পুরুলিয়ার পাড়ার কংগ্রেস বিধায়ক উমাপদ বাউড়ি পরে বলেন, “২০০৮ সাল থেকে একটি পাইপলাইন প্রকল্পের কাজ চলছে আমার এলাকায়। সেটি এখনও অসম্পূণর্র্ বলে মন্ত্রীকে জানিয়েছি। যেখানে নলকূপ নেই, সেখানে তা বসানোর সঙ্গে সঙ্গে পাইপলাইনের ব্যবস্থার আর্জিও জানানো হয়েছে।” বীরভূমের হাসনের বিধায়ক অসিত মালের বক্তব্য, “জলাধারের অভাবে মারগ্রাম ও লোহাপুরে জল পৌঁছচ্ছে না বলে জানিয়েছি।” অনেক জায়গায় সেতু নেই বলেও অভিযোগ জানান বিধায়কেরা। সংশ্লিষ্ট দুই দফতরের আধিকারিকদের দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূলের কিছু বিধায়কও সরব হয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। বিধায়কদের কাছে তাঁদের এলাকার প্রয়োজনীয় রাস্তার তালিকা চেয়েছেন মন্ত্রী। |