|
|
|
|
ফিরছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা, নালিশ প্রশাসনিক উদাসীনতার
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
রাজ্যের দশা ভাঁড়ে মা ভবানী। অন্তত এমনটাই বারবার দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অবস্থায় ভরসা বলতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প। অথচ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বহু টাকা কার্যত খরচ করতে ‘ব্যর্থ’ হয়ে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে প্রশাসনকে। পশ্চিম মেদিনীপুরেই এমন উদাহরণ রয়েছে বেশ কিছু।
এখন প্রশ্ন হল কোন কোন প্রকল্পে টাকা খরচ করতে পারছে না প্রশাসন। পরিসংখ্যান বলছে, কৃষি উন্নয়নে বরাদ্দ অর্থই খরচ করতে পারছে না জেলা। কেন? জেলার মুখ্য কৃষি আধিকারিক তপন বিশ্বাস বলেন, “প্রকল্প রূপায়নের চেষ্টা চলছে। পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকায় সব সময় সম্পূর্ণ অর্থ খরচ করা যাচ্ছে না।” একই বক্তব্য উদ্যানপালন দফতরের অতিরিক্ত জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক মনতোষ মণ্ডলেরও। তিনি বলেন, “মূলত গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তর থেকেই প্রকল্প উঠে আসে। নিজেদের পরিকাঠামো না থাকায় তার উপরে ভিত্তি করেই চলতে হয়। ফলে কিছুটা সমস্যা হয়।” অথচ ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প ভবিষ্যত’- এই শ্লোগানেই ওলটপালট হয়েছিল ৩৪ বছরের বাম জমানা। ‘ন্যাশনাল ফুড সিকিওরিটি মিশন’ থেকে ২০১১-১২ সালে ৪ কোটি ৭৬ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা পেয়েছিল জেলা কৃষি দফতর। এর আগে ২০১০-১১ আর্থিক বছরে ওই প্রকল্পেরই ৩ কোটি ৪৮ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা খরচ করতে পারেনি তারা। ফলে সব মিলিয়ে গত বছর ওই প্রকল্পে খরচের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ৮ কোটি ২৫ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা। এর মধ্যে খরচ করা গিয়েছে মাত্র ২ কোটি ৪০ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা। চলতি বছরে ৬ মাসেও এই প্রকল্পে ১ টাকাও খরচ করতে পারেনি কৃষি দফতর। শুধুমাত্র ‘কমিটেড এক্সপেণ্ডিচার’ (অর্থাৎ প্রকল্পের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে, কাজও চলছে, কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় টাকা দেওয়া হয়নি।) দেখানো হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনার ক্ষেত্রেও একই হাল কৃষি দফতরের। অভিযোগ, কৃষি দফতরের উদাসীনতাতেই বরাদ্দ কোটি কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জেলা। ব্যাহত হচ্ছে কৃষির উন্নয়ন। অথচ, ওই টাকায় সহজেই মাটিতে অনুখাদ্য দিয়ে, কলিচুন দিয়ে মাটির স্বাস্থ্য ভাল করা যেত, ক্ষারত্ব কমানো যেত। বাড়ত ফলনও। এছাড়াও কৃষকদের কম খরচে বীজ, কৃষি সরঞ্জামও দেওয়া যেত।
শুধু এই নয়, খরা মোকাবিলায় ২০১০-১১ আর্থিক বছরে ৫৫৬৯টি পাম্প সেট কেনার জন্য ৬ কোটি ৬৮ লক্ষ টাকা পেয়েছিল জেলা। স্ব-সহায়ক দল বা সমবায়কে ওই পাম্প সেট কিনে দেওয়ার কথা ছিল। সেই টাকাও খরচ করতে পারেনি জেলা। মাত্র ৮৯৭টি পাম্প সেট কেনা হওয়ায় প্রকল্পেরও ৪ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা ফিরিয়ে দিতে হয়।
উদ্যানপালন দফতরেরও হাল একই। কেন্দ্রীয় হর্টিকালচার মিশন থেকে গত বছর ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা পেয়েছিল জেলা। খরচ হয়েছে ৮ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা ৬ হাজার টাকা। বাকি ৩ কোটি ২৬ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকায় বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছে। ফলে ওই টাকা ফেরাতে হয়নি। কিন্তু কোনও প্রকল্প তৈরি করতে না পারায় ১ কোটি ৬৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দিতে হয়েছে। ন্যাশনাল মিশন অন মেডিসিনাল প্লান্টস প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার ৩ কোটি ৫৬ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছিল। খরচ হয়েছে ৬০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনাতেও বরাদ্দ হয়েছিল ৩ কোটি ৬৩ লক্ষ ৯৯ হাজার টাকা। পড়ে রয়েছে ২ কোটি ৭ লক্ষ ১৬ হাজার। অথচ, এই টাকায় ফলের বাগান তৈরি, সেচের জন্য পুকুর খনন-সহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ করা যেত।
বাগান তৈরি করলে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ ছাড় পাওয়া যায়। এমনকী পুরনো বাগান পরিষ্কার করে সুন্দর করার জন্যও সরকারি সাহায্য মেলে। কিন্তু প্রশাসনিক উদাসীনতায় সেই সুযোগ হারাচ্ছেন জেলার সাধারণ মানুষ। দফতরের ব্যাখ্যা, কর্মী সঙ্কটের কারণেই এই সমস্যা। ব্লকে ব্লকে একজন করে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের কথা থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১৪টি ব্লকে তা রয়েছে। ফলে গ্রাম থেকে প্রকল্প তুলে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এই প্রকল্পের কাজও মুখ থুবড়ে পড়বে বলে আশঙ্কা।
পরিকাঠামোগত সমস্যা ও প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্যই এভাবে কোটি কোটি টাকা পড়ে রয়েছে দু’টি দফতরে। ফলে নতুন বরাদ্দ তো মিলছেই না, উল্টে খরচ করতে না পারায় ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বরাদ্দ অর্থ। |
|
|
|
|
|