|
|
|
|
সন্ত্রাসের অভিযোগে এসএফআইয়ের অবরোধ |
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলেজে জয় টিএমসিপি-র
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • এগরা ও তমলুক |
রাজ্যে পরিবর্তনের পর কলেজেও পালাবদল হয়েছে। গতবারই পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকাংশ কলেজে জিতেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এ বারও বিরোধীরা মনোনয়নপত্র তুলতে না পারায় জেলার প্রায় সমস্ত কলেজেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলছে টিএমসিপি। এ দিকে, সন্ত্রাস চালিয়েই টিএমসিপি অন্যদের মনোনয়নপত্র তুলতে দেয়নি বলে অভিযোগ বিরোধীদের। প্রতিবাদে বুধবার রাজ্য জুড়ে পথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে এসএফআই। বুধবার বিকেলবেলা পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক শহরের মানিকতলায় হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়ক অবরোধে নেতৃত্ব দেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস ও রাজ্য সভানেত্রী মধুজা সেন রায়। পরে সাংবাদিক বৈঠকে দেবজ্যোতি দাস বলেন, “রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সন্ত্রাস চালিয়ে বাম ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীদের ভোটে দাঁড়াতে বাধা দিচ্ছে। মারধর করছে। নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছে। এ বার থেকে এই ভাবে বাম ছাত্র সংগঠনের
সদস্যরা আক্রান্ত হলেই রাজ্য জুড়ে রাস্তা অবরোধ করা
হবে। এই পরিস্থিতির জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার দায়ী থাকবে।”
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পূর্ব মেদিনীপুরের ১৮টি ডিগ্রি কলেজের মধ্যে গত বছর ১৬টি কলেজে (কোলাঘাটের রবীন্দ্রভারতী মহাবিদ্যালয় ও কাঁথির দেশপ্রাণ মহাবিদ্যালয় বাদে) ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়। এই ১৬টি কলেজের মধ্যে অধিকাংশতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। |
|
এসএফআইয়ের অবরোধ (বাঁ দিকে) ও সাংবাদিক সম্মেলন (ডান দিকে)। ছবি তুলেছেন পার্থপ্রতিম দাস। |
চলতি বছর জেলার ১৭টি কলেজে (কোলাঘাটের রবীন্দ্রভারতী মহাবিদ্যালয় বাদে) ছাত্রসংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ইতিমধ্যে ৮টি কলেজের ভোটপ্রক্রিয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে ৭টিতেই (পালপাড়া, বাজকুল, মুগবেড়িয়া, রামনগর, ময়না, পাঁশকুড়া, হলদিয়া গভর্নমেন্ট কলেজ) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। শুধু কাঁথি প্রভাত কুমার কলেজে ৪৪টি আসনের মধ্যে ৫টি আসনে এসইউসি প্রভাবিত ডিএসও প্রার্থী দিয়েছিল। পাঁচটিতেই অবশ্য হেরে গিয়েছে ডিএসও। এখনও বেশ কিছু কলেজে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে। তবে, অধিকাংশ কলেজেই জেতার মুখে টিএমসিপিকোথাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, কোথাও সামান্য বিরোধিতায়। মহিষাদল গার্লস কলেজে ২৩টি আসনের মধ্যে ১১টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে এসএফআই। সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে তমলুক কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রার্থী দিয়েও ভোট বয়কটের কথা জানিয়েছে ডিএসও। এগরা কলেজে ৩১টি আসনের মধ্যে ২৫টি আসনে ডিএসও ও ৩০টি আসনে সিপি মনোনয়ন তুললেও এখনও তা জমা দেয়নি। আজ, বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এসএফআই এই কলেজে মনোনয়নই তোলেনি। টিএমসিপি সমস্ত আসনে মনোনয়নপত্র তুলেছে। বুধবার ১৭টি আসনে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছে।
এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক পরিতোষ পট্টনায়েকের অভিযোগ, “আমাদের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র তোলায় বাধা দিচ্ছেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কর্মী-সমর্থকরা। এমনকী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর তা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। নিরাপত্তার দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি।” ডিএসও-র জেলা সভাপতি চিন্ময় ঘোড়ইয়ের অভিযোগ, “পাঁশকুড়া ও বাজকুল কলেজে মনোনয়নপত্র তোলার দু’দিনই কলেজের প্রবেশপথ আটকে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ফলে মনোনয়নপত্র তুলতেই পারা যায়নি। কলেজ কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা হয়নি।” চিন্ময়ের আরও অভিযোগ, “তমলুক কলেজে ৩৭টি আসনের মধ্যে ১৬টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু এরপর টিএমসিপি-র কর্মীরা আমাদের ছয় ছাত্রকে তুলে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক মারধর করে। বুধবার ছয় জনকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে ওরা। কলেজে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় আমরা ওই নির্বাচন বয়কট করেছি।” চিন্ময়ের কথায়, “বামফ্রন্ট সরকারের আমলে এসএফআই যে ভাবে কলেজে সন্ত্রাস চালিয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল, একই ভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জেলার অধিকাংশ কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনকে প্রার্থী মনোনয়নে বাধা দিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করছে।”
তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি দীপক দাস অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। দীপক বলেন, “জেলার কলেজগুলিতে নির্বাচনের সুস্থ পরিবেশ রয়েছে। কাঁথি কলেজে ডিএসও প্রার্থী দিয়ে লড়াই করেছে। তমলুক কলেজেও ডিএসও প্রার্থী দিয়েছে। মহিষাদল রাজ ও গার্লস কলেজে এসএফআই প্রার্থী দিয়ে লড়াই করছে। এরপরও ছাত্রসংসদ নির্বাচনে আমাদের জয় নিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে। আসলে ছাত্রদের সমর্থন হারিয়ে ওরা বিভ্রান্তি ছড়াতে চাইছে।” |
|
|
|
|
|