|
|
|
|
পারাদীপে সরে যাওয়ার সম্ভাবনা |
অশান্তির পরে কমেছে পণ্য ওঠানামা, সমস্যায় হলদিয়া
জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় • কলকাতা |
গত এক পক্ষ কাল ধরে চলতে থাকা অশান্তি-অস্থিরতা হলদিয়া বন্দরের ভবিষ্যতের উপরে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। পণ্য আমদানি ও রফতানিকারী অনেক সংস্থার কাছেই হয়তো আর হলদিয়া নয়, অচলাবস্থা চলতে থাকলে গন্তব্য হতে পারে ওড়িশার পারাদীপ বা ধামড়া। বন্দরের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই এখন এই আশঙ্কা করছেন।
সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে হলদিয়ায় অশান্তি শুরু হয়েছে। লক্ষ্যণীয় ভাবে, সেই মাসেই কমেছে এখানে মাল ওঠানামার পরিমাণ। যে সব সংস্থা এই বন্দর ব্যবহার করে, তারা এখন ওড়িশার বন্দরগুলিকে বেছে নেওয়ার কথা ভাবছে। তাতে তাদের মাল পরিবহণের খরচ হয়তো বাড়বে। কিন্তু অশান্তির জন্য দিনের পর দিন মাল আটকে থাকার যে ঝুঁকি, তাই নিয়েই আশঙ্কায় সকলে। ইতিমধ্যেই ২৫ হাজার কোকিং কোল-বাহী একটি জাহাজ হলদিয়া না এসে চলে গিয়েছে বিশাখাপত্তনমে। আরও জাহাজ দক্ষিণমুখী হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষের একাংশেরই।
কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক সূত্রে পাওয়া তথ্যই বলে দিচ্ছে কী ভাবে হলদিয়া বন্দরে মাল খালাসের পরিমাণ কমছে। পাশাপাশি বাড়ছে পারাদীপে মাল খালাসের হার। অশান্তির ফলে যে শিল্পমহলে ভুল বার্তা যাবে, তা কলকাতা তথা হলদিয়া বন্দরের চেয়ারম্যান সম্প্রতি রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলেন। তার পরেও হলদিয়া শান্ত হয়নি। এর মধ্যে আজ, বৃহস্পতিবার কলকাতায় হলদিয়া বন্দরে পণ্যখালাসকারী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন বন্দরের চেয়ারম্যান।
হলদিয়া বন্দরের কাজের অবস্থা এখন কেমন? বন্দর সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসে অগস্টের তুলনায় এক ধাক্কায় পণ্য ওঠানামার পরিমাণ ৬ লক্ষ টন কমে গিয়েছে (২৪ লক্ষ টন থেকে কমে ১৮ লক্ষ টন, যা হলদিয়ার ইতিহাসে রেকর্ড পরিমাণ কম)। গোলমাল শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে। তার পর ২২ সেপ্টেম্বর থেকেই ২ এবং ৮ নম্বর বার্থে কাজ বন্ধ। গত ১০ দিনে বন্দরের লোকসান হয়েছে ১ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা। অনেকেই মনে করছেন অশান্তির জেরেই কমেছে পণ্য পরিবহণ। যদিও বন্দরের চেয়ারম্যান মণীশ জৈনের বক্তব্য, বিশ্বজুড়ে চলা আর্থিক মন্দার জন্যও হলদিয়া বন্দরে পণ্য কমেছে। |
বিস্তারিত... |
যে সব ইস্পাত ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তাদের কোকিং কোল, নন-কোকিং কোল, লাইম স্টোন এত দিন হলদিয়া বন্দর দিয়ে আনত, তাদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে বিশাখাপত্তনম, পারাদীপ কিংবা ধামড়া বন্দর মারফত পণ্য আনার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে।
এমনকী, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে আগ্রহী এক শিল্পপতিও ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা কয়লা পারাদীপ কিংবা ধামড়া বন্দরে আনার পরিকল্পনা করেছেন।
গত তিন বছর ধরে হলদিয়া বন্দরে অশোধিত তেলের আমদানি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইন্ডিয়ান অয়েল পারাদীপ বন্দর থেকে সরাসরি পাইপ লাইনে হলদিয়া শোধনাগারে তেল নিয়ে আসছে। তাতে প্রায় বছরে ১২০-১৪০ লক্ষ টন পণ্য হারিয়েছে হলদিয়া। এখন হলদিয়া মূলত নির্ভরশীল কোকিং কোল, লাইম স্টোন প্রভৃতি ড্রাই-বাল্ক পণ্য আমদানির উপরে। ইস্পাত ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি জন্য এই সব পণ্য আমদানি করা হয়। স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বা সেল তাদের বার্নপুর, দুর্গাপুর এবং বোকারোর ইস্পাত কারখানার জন্য হলদিয়া বন্দর দিয়ে বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ টন কোকিং কোল এবং লাইম স্টোন আমদানি করে।
সেলের এক পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা বলেন, “সহজে রেলের রেক পাওয়া যায় বলে হলদিয়া বন্দর দিয়ে পণ্য নিয়ে আসা সুবিধাজনক। কিন্তু গোলমালের জেরে বিকল্প ভাবতেই হচ্ছে। কাছাকাছি বিশাখাপত্তনম এবং পারাদ্বীপ বন্দর মারফতও আমাদের পণ্য আমদানি হয়।”
হলদিয়া বন্দরের অন্য আমদানিকারী সংস্থা টাটা স্টিল। সংস্থার যে কর্তা হলদিয়া বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহণের দায়িত্বে, সেই এস সিনহা বলেন, “পুরো পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। তবে এখনও হলদিয়া বন্দর দিয়েই আমরা কোকিং কোল কিংবা লাইম স্টোন নিয়ে আসছি।”
হলদিয়ায় না এলে জাহাজের যাওয়ার বেশি সম্ভাবনা পারাদীপ বন্দরে। সেখানকার কর্তারা কী ভাবছেন? পারাদীপ বন্দরের ট্র্যাফিক ম্যানেজার সরোজ মিশ্র বলেন, “এটা আমাদের কাছে সুবিধাজনক পরিস্থিতি।” তাঁর বক্তব্য, পারাদীপের নাব্যতা অনেক বেশি। আবার হলদিয়ার রেলের রেক পাওয়ার সুযোগ বেশি। “ফলে নানা দিক ভেবে আমদানিকারী সংস্থাগুলি যদি হলদিয়ার পণ্য আমাদের এখানে আনে, তা হলে মন্দ কি?”
পারাদীপ বা ধামড়া বন্দরে যদি পণ্য চলে যায়, তা মোকাবিলায় হলদিয়া বন্দরের প্রস্তুতি কতটা? বন্দরের এক কর্তা বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার পণ্য চলে যাওয়াটা হয়তো অনুরোধ-উপরোধ করে ঠেকানো যেতে পারে। কারণ বন্দর বাঁচাতে, কর্মীদের বেতন দেওয়ার কথা বলে সরকারি সংস্থাকে এত সহজে যেতে দেওয়া যায় না। কিন্তু বন্দরের আধুনিকীকরণে যে ধরনের বাধা আসছে, তাতে বেসরকারি লগ্নিকারীরা হলদিয়া বন্দরের উপর নির্ভর করে আর কিছু পরিকল্পনা করবেন কি না সন্দেহ। ওড়িশার বন্দরগুলি সেই সুযোগটা নেবে। |
|
|
|
|
|