জামশেদপুরের অভিশপ্ত মাঠে লাইনচ্যূত হয়েছিল দল। যাত্রী বিক্ষোভের মতোই কোচের ওপর খড়গহস্ত হয়েছিলেন স্পনসররা। কিন্তু কলকাতায় ফিরতেই সেই প্রয়াগ ইউনাইটেড ফের হাইওয়ের মসৃণ রাস্তায় দৌড়োচ্ছে। তাও কি না ভাঙা দল নিয়েই। সঞ্জয় সেনের দর্শনে, তারুণ্যের নবজাগরণ ঘটে গেল যুবভারতীতে।
মহা-তারকাদের ভিড়ে চরম অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়ে যাচ্ছিল তারুণ্যের শক্তি। র্যান্টি-কার্লোস-সুব্রত-গৌরমাঙ্গির ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার জেরে প্রয়াগের বাকি ফুটবলারদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তৈরি হচ্ছিল সংশয়ের মেঘ। রক্ষণে গৌরমাঙ্গি থাকলেই যেন গোল হবে না! মাঝমাঠে কার্লোস থাকলেই যেন পাসের অভাব হবে না! র্যান্টি আছেন মানেই প্রত্যেক ম্যাচে গোল নিশ্চিত। আর সুব্রত পাল? তিন কাঠির নীচে দাঁড়ালেই বুঝি কেল্লা ফতে!
বুধবার কিছুটা হলেও সেই অন্ধ বিশ্বাসের হাত থেকে মুক্তি পেল প্রয়াগ। আই লিগ শুরুর ঠিক আগে বাপি-বলদীপ-ইশান-শঙ্কররা প্রমাণ করে দিলেন, র্যান্টি ছাড়াও গোল করা যায়। কার্লোস ছাড়াও মাঝমাঠের দখল নেওয়া যায়। সুব্রত ছাড়াও পেনাল্টি বাঁচানো যায়। আর পিছিয়ে থেকেও জয়ের পতাকা উড়ানো যায়।
ম্যাচ শুরুর তেরো মিনিটের মধ্যেই এরিয়ানের প্রথম গোল। রঘু নন্দীর মূলধন মাইকেল টায়োর সৌজন্যে। ফেডারেশন কাপের ব্যর্থতা, কোচ-বিতর্ক আর স্পনসর-ক্লাবকর্তা বিবাদ সে সময় যেন সব কিছুই ঘাড়ে চেপে বসেছিল লালকমলদের। নইলে একটা অতি-সাধারণ সেন্টার একেবারে দেখে শুনে টায়ো গোলে হেড করছেন দেখেও, রাবিন্দর-ধনচন্দ্র সিংহরা দাঁড়িয়ে থাকেন? এত অসহায় পরিস্থিতি যে ম্যাচ আধ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরে প্রথম গোলের সুযোগ পায় প্রয়াগ। তবে সেটা কাজে দিল না শুধু ভিনসেন্টের গোল নষ্টের অভ্যাসে।
বিরতির পরেই অবশ্য নিমেষের মধ্যে বদলে গেল প্রয়াগের চেহারা। যে দলে র্যান্টিদের অভাব চোখ টানছিল, সে দলই বিদ্যুতবেগে ছোটা শুরু করল। ড্রেসিংরুমে সঞ্জয়ের ‘ভোকাল টনিক’ কিন্তু অন্যতম একটা ফ্যাক্টর হতে পারে! তবে কারণ যাই হোক না কেন, লক্ষ্মীলাভ হল প্রয়াগেরই। তুলুঙ্গার সেন্টার থেকে বেলোর হেডে প্রথমে গোল শোধ। তার পর লালকমলের সেন্টার থেকে বিনিথের হেডে ২-১। মাত্র কুড়ি মিনিটের ব্যবধানে প্রয়াগের দু’গোল ম্যাচের রং বদলে দিল। আর এ সবের মধ্যে বাড়তি পাওনা ইশানের একটা দুরন্ত পেনাল্টি বাঁচানো। ম্যাচের পরে সঞ্জয় বলছিলেন, “এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পরে ২-১ জেতা সহজ নয়। কিন্তু আমার তরুণ ফুটবলাররা সেটা করে দেখিয়েছে। আই লিগের আগে এখন আমার কাছে অনেক বিকল্প খুলে গেল।”
প্রয়াগ কোচ অনেক ঝুঁকি নিয়েই তারকাদের বিশ্রামে পাঠিয়ে দ্বিতীয় দল নামিয়েছিলেন। বুধবারের সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সঞ্জয় সসম্মানে উত্তীর্ণ তো হলেনই পাশাপাশি বিশেষ কিছু অস্ত্রের সন্ধানও করে ফেললেন। যা আই লিগের মহা-যুদ্ধে অসম্ভব কাজে লাগতে পারে! |