|
|
|
|
সারানো হবে রাস্তাও |
ভসরাঘাট সেতু নির্মাণে ১৭০ কোটি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ভসরাঘাট সেতু নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ করল সরকার। প্রায় ১৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেহাল রাস্তা সংস্কারেও উদ্যোগী হয়েছে সরকার। রাস্তা সংস্কারে বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় ১২৬ কোটি টাকা। সবই হবে বিআরজিএফের (ব্যাকওয়ার্ড রিজিওন গ্রান্ট ফান্ড) টাকায়। ১৮ মাসের মধ্যে যাবতীয় কাজ শেষের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। প্রতি মাসে সংশ্লিষ্ট দফতরকে কাজের অগ্রগতির রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। জেলা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন আধিকারিক প্রণব ঘোষ বলেন, “দ্রুত গতিতে কাজ শেষ করার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। রাজ্যে নির্দেশ মতো জেলাতে প্রতি মাসেই বৈঠক করে কাজের অগ্রগতি সম্বন্ধে খোঁজ নিয়ে রাজ্যকে সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
নয়াগ্রাম ও কেশিয়াড়ির মাঝখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে সুবর্ণরেখা। বর্ষাকালে নয়াগ্রাম ব্লকটি সদর শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত বলা-ই ভাল। কারণ, নদীতে জল থাকায় মেদিনীপুর আসতে হলে দীর্ঘ পথ ঘুরে গোপীবল্লভপুর হয়ে যাতায়াত করত হত নয়াগ্রামের মানুষ। তাতে যেমন দীর্ঘ সময় লাগত, তেমন অর্থও ব্যয় হত। অথচ, কেশিয়াড়ি হয়ে সহজেই মেদিনীপুর আসা যায়। কিন্তু ভসরাঘাটে স্থায়ী সেতু না থাকায় বর্ষায় এছাড়া কোনও পথই ছিল না। একই ভাবে কেশিয়াড়ি, বেলদা, দাঁতনের মানুষকে নয়াগ্রাম যেতে হলে একই সমস্যায় পড়তে হত। স্বাভাবিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিত নদী। তাই নদীর উপরে সেতুর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। কিন্তু স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মেনে স্থায়ী সেতু নির্মাণের উদ্যোগ দেখা যায়নি। বর্ষা পেরোলে কেবল অস্থায়ী সেতু তৈরি নির্মাণ করত জেলা পরিষদ। আবার বর্ষায় জলের তোড়ে সেতু ভেসে যেত। তাই সেতুর নাম ছিল ‘ফেয়ার ওয়েদার ব্রিজ’। অর্থাৎ আবহাওয়া ভাল থাকলেই সেতু থাকবে, নাহলে নয়। গ্রীষ্মে ওই সেতু দিয়েই বাস চলাচলও করত। বহু বছর আগে সুবর্ণরেখা ব্যারাজ প্রকল্পেরও প্রস্তাব গৃহীত হয়। তার জন্য অফিসও করা হয়েছিল। নিয়োগ করা হয়েছিল কর্মী ও আধিকারিক। কিন্তু সেই প্রকল্প আদৌ বাস্তবায়িত হবে কি না, সংশয় থেকেই যায়। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভসরাঘাটে সেতু তৈরির কথা ঘোষণা করেন। ‘ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্ট’ তৈরির পর দেখা যায়, সেতু নির্মাণেয় ১৭০ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু কবে সেই সেতু হবে, কোন সংস্থা সেতু নির্মাণ করবে তা নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়। অবশেষে সেতু নির্মাণে ১৬৯ কোটি ৪৯ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। প্রশাসন জানিয়েছে, শীঘ্রই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে যাবে।
অন্য দিকে, রাস্তা সংস্কারেও অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার একাধিক রাস্তার বেহাল দশা। রাস্তার উপরে তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। খানাখন্দে ভরা রাস্তা দিয়েই গাড়ি চলছে দ্রুত গতিতে। যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। তাই রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বাস মালিক থেকে বিধায়ক এবং সাধারণ মানুষও সরব হয়েছেন বারবার। এ বার ২২৫.৭৬ কিলোমিটার রাস্তা তৈরির জন্য বিআরজিএফ থেকে অর্থ বরাদ্দ করল সরকার। পাঁশকুড়া থেকে ঘাটাল পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটার রাস্তা, সবং থেকে মোহাড় পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার রাস্তা, ক্ষীরপাই থেকে রামজীবনপুর ৯ কিলোমিটার রাস্তা, খড়্গপুর বাইপাসে ১৮ কিলোমিটার রাস্তা, লোধাশুলি থেকে দহিজুড়ি হয়ে কুপাননাদ পর্যন্ত ৩৯ কিলোমিটার রাস্তা, মুণ্ডমারি থেকে পিংলা হয়ে পরমানন্দপুর-ময়না ১০ কিলোমিটার রাস্তা, কেশপুর থেকে চন্দ্রকোনা পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রাস্তা সহ-বেশ কয়েকটি রাস্তা সংস্কার করা হবে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, পুজোর আগেই যাতে রাস্তার কাজগুলি শেষ করা যায় সে জন্য দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে। সেতু নির্মাণের কাজও দ্রুত গতিতে শেষ করার চেষ্টা হবে। রাজ্য সরকার অবশ্য জানিয়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়ে গিয়েছে। ১৮ মাসের মধ্যে যাবতীয় কাজ শেষ করতে হবে। কাজের অগ্রগতি জানতে প্রতি মাসেই রিপোর্ট পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। |
|
|
|
|
|