নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
লাগাতার ‘হামলা’য় জেরবার সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধান শেষমেশ পদত্যাগ করলেন। ঘটনাটি আরামবাগের বাতানল পঞ্চায়েতের। গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিডিওর কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন প্রধান বনলতা পাত্র। গত ২২ সেপ্টেম্বর পঞ্চায়েত অফিসে বৈঠক চলাকালীন কিছু লোক সেখানে ঢুকে প্রধানকে গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। তাঁকে খুনের হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছিল। পদত্যাগপত্রে অবশ্য ‘বিশৃঙ্খলাকারী’দের রাজনৈতিক পরিচিয় উল্লেখ করে নালিশ জানাননি প্রধান। তিনি বলেন, “কারা অশান্তি করেছিল, ব্লক প্রশাসন তা জানে। একাধিক বার সে সব ঘটনার সাক্ষীও থেকেছে। এই পরিস্থিতিতে কোনও মহিলা প্রধানের পক্ষে কাজ করা যায় না। তাই পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দফতরে যাওয়া বন্ধ করেছি।” প্রধানের পদত্যাগপত্র অবশ্য এখনও গৃহীত হয়নি। আরামবাগের বিডিও প্রণব সাঙ্গুই বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আইনগত পদ্ধতি মেনে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”
এ দিকে, প্রধান না আসায় পঞ্চায়েতের দৈনন্দিন কাজে সমস্যা দেখা দিয়েছে। একশো দিনের কাজ-সহ নানা প্রকল্পের টাকা আটকে গিয়েছে। শংসাপত্রটুকুও মিলছে না। প্রধানের অবর্তমানে টেন্ডার ডাকতে না পারায় প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা পড়ে আছে বলে পঞ্চায়েত সূত্রের খবর। বুধবার এলাকায় ২২ জন বৃদ্ধ এবং বিধবা বিডিও অফিসে এসে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁরা ভাতা পাচ্ছেন না।
আরামবাগ ব্লকের ১৫টি পঞ্চায়েতের মধ্যে বাতানলই বৃহত্তম। ১৯টি সংসদ নিয়ে গঠিত। বছর খানেক ধরেই এখানে তৃণমূল নানা ভাবে অশান্তি সৃষ্টি করে পঞ্চায়েতের কাজকর্মে বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ ছিল। অনিয়মিত ভাবে যাতায়াত করছিলেন প্রধান।
২২ তারিখ গোলমাল প্রসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতা মদন পোড়েল বলেন, “আমাদের সমর্থক কিছু শ্রমিক ওই দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু দলগত ভাবে তা সংগঠিত করা হয়নি।” পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দলতন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
আরামবাগে সব ক’টি পঞ্চায়েতই বাম পরিচালিত। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই সিপিএম প্রধানদের উপরে তৃণমূলের হুমকি, অত্যাচার শুরু হয় বলে অভিযোগ। একাধিক পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন প্রধান-সহ বাম সদস্যেরা। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়। এ ব্যাপারে তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “মানুষকে দীর্ঘ দিন ধরে শোষণ করেছে ওরা। বঞ্চিত করেছে অনেককে। সরকারি টাকা নয়ছয় করেছে। এখন মানুষ সে সব কথা তুলছে। পুরনো হিসেব চাইছে। তা দেখে সিপিএম ভয় পেয়েছে। সে জন্যই পঞ্চায়েতে আসতে ওদের আপত্তি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে গোলমালের অভিযোগ তুলে আসলে ওরা উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিতে চায়।”
সিপিএম নেতা মোজাম্মেল হোসেনের বক্তব্য, “কে কী করছে, মানুষ সবই দেখছেন। এর ফল ওদের ভুগতেই হবে।” |