সম্পাদকীয় ২...
স্বপ্নসম লোকযাত্রা
যে রাজনৈতিক দলটি সদ্য এ দেশে জন্মলাভ করিল, এখনও তাহার নামকরণ হয় নাই, এখনও তাহার সামগ্রিক চরিত্র নির্ধারিত হয় নাই, কিন্তু দেশব্যাপী বিতর্কের ফুলকি সে ইতিমধ্যেই জ্বালাইয়া দিতে পারিয়াছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লিতে তাঁহাদের নূতন দলের শুভ মহরত শেষ হইলে ঘোষণা করিাছেন, এই দল আগামী নির্বাচনে লড়িতে প্রস্তুত। লড়াই-এর জন্য কার্যক্রম চাই। সুতরাং যৎপরোনাস্তি ক্ষিপ্রতার সহিত ভবিষ্যৎ অ্যাজেন্ডাও পেশ হইয়াছে। গোল বাধাইয়াছে এই অ্যাজেন্ডাই। অ্যাজেন্ডা যেমন বলিতেছে মধ্যযুগীয় ব্রিটিশ সমাজদার্শনিক টমাস মোর ভিন্ন এমন রাষ্ট্রকল্পনা আর কেহ করেন নাই। কেজরিওয়াল-বর্গের প্রস্তাবিত নূতন ইউটোপিয়ার অন্তর্গত: দেশের সমস্ত মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা, সকলের জন্য শিক্ষা, সাধারণ মানুষের দ্বারা দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ, জনসম্মতি ব্যতিরেকে কোনও জমি অধিগ্রহণে নিষেধ, জন-লোকপাল নির্বাচন ইত্যাদি। মুশকিল হইল, এই লক্ষ্যগুলির কোনওটিই বাস্তবসম্মত নয়, আধুনিক রাষ্ট্রের পক্ষে কোনওটিই সাধনযোগ্য, এমনকী স্বপ্নদর্শনের যোগ্যও নয়। এই ‘রাজনীতি’ লইয়া কি নির্বাচনী যুদ্ধ সম্ভব? তাহার অপেক্ষাও বড় কথা, এত অবাস্তব অ্যাজেন্ডা-সহ নির্বাচনে লড়িবার অর্থ কি সাধারণ মানুষকে ইচ্ছাপূর্বক বিপথে চালিত করা নয়?
এখানে অবশ্য একটি কথা আছে। নির্বাচনে সাফল্য-সম্ভাবনা না থাকিলে কোনও দলের পক্ষে নির্বাচনে লড়িতে যাওয়াই উচিত নহে, কিংবা কোনও কার্যক্রম অলোকসম্ভব বলিয়াই সেই কার্যক্রম রাজনীতিতে পাতে দিবার যোগ্য নহে, ইত্যাদি ভাবনা কিন্তু নেহাতই বিংশ-শতকীয়, প্রাচীনপন্থী। এমন দল কিংবা এমন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাহ্যিক সাফল্য না থাকিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইহার এক প্রকার অন্তর্নিহিত সাফল্যের সম্ভাবনা থাকিয়াই যায়: একটি সুদূর স্বপ্নের লক্ষ্য বা মানদণ্ড নির্মাণ করিবার সাফল্য। এমন একটি সুদূর লক্ষ্য যদি রাজনীতির নির্বাচনী প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়, সে ক্ষেত্রে অন্য দলগুলিকেও কোনও না কোনও ভাবে সেই লক্ষ্য বা স্বপ্নের মোকাবিলা করিতেই হয়, এবং এই ভাবেই রাজনীতির আদর্শ উদ্দেশ্য স্বপ্ন সম্ভাবনার চৌহদ্দি ধীরে ধীরে প্রসারিত হইতে থাকে। যদি নির্বাচন-যুদ্ধে ক্রমাগতই উঠিয়া আসে দুর্নীতি-বিরোধিতা ও রাজনৈতিক সততার মাপকাঠির বিষয়টি, সে ক্ষেত্রে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা ও অনুচরদেরও সতর্ক না হইয়া উপায় থাকে না, নিজেদের যথাসম্ভব সামলাইয়া চলা ভিন্ন পথ খোলা থাকে না। পশ্চিম বিশ্বের বহু দেশে, আমেরিকায় বা জার্মানিতে, গ্রিন পার্টি ঠিক এই কাজটিই করিয়া দিয়াছে। নিজেরা প্রত্যক্ষ ভাবে সফল না হইয়াও রাজনীতিতে একটি পরোক্ষ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখিয়াছে। ভারতের সদ্যোজাত দলটিও যে সে ভাবেই কৃতী হইবে না, এখনই বুক ঠুকিয়া কে তাহা বলিতে পারে?
নিবার্চনী রাজনীতিতে সাফল্যের আশা অবশ্য যথেষ্টই কম। বিজেপি-র সহিত এই নূতন দলের সম্পর্ক কেমন দাঁড়ায়, তাহার উপর অনেকাংশে নির্ভর করিবে ইহার ভাগ্য। তবু বলিতেই হয়, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, প্রশান্ত ভূষণ, কিংবা যোগেন্দ্র যাদবরা অণ্ণা হজারের সহিত দূরত্ব তৈরি করিয়া সুবুদ্ধির কাজ করিয়াছেন। সিভিল সোসাইটি কিংবা গণপরিসরের মাধ্যমে অনেক জরুরি কাজই করা যায়, তবে তাঁহারা যে ধরনের সরাসরি রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা লইয়া অগ্রসর হইতে চাহেন, সে ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁহাদের পক্ষে পলিটিক্যাল সোসাইটি কিংবা রাজনৈতিক পরিসরেই অংশ লওয়া জরুরি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.