প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা
ওষুধ ছড়িয়ে লুঠ পুরী এক্সপ্রেসে, ভ্রমণার্থীরা শঙ্কিত
মাদক খাইয়ে ট্রেনের এক বা দু’জন যাত্রীকে আচ্ছন্ন করে চুরি আকছার হয়। এ বার একটি বাতানুকূল কামরার প্রায় পুরোটাতেই ওষুধ ছড়িয়ে লুঠপাট হল রাতের হাওড়া-পুরী এক্সপ্রেসে। পুজোর মুখে এই ঘটনায় বাঙালি পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সেই সঙ্গে ফের প্রশ্ন উঠেছে রেলের যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়েও।
মঙ্গলবার রাতে হাওড়া থেকে পুরী এক্সপ্রেস ছেড়েছিল ঠিক সময়েই। চুরির ঘটনা ঘটে ভুবনেশ্বর ও খুরদা রোড স্টেশনের মধ্যে। দুষ্কৃতীরা ওই বাতানুকূল (খানিকটা প্রথম শ্রেণি, বাকিটা দ্বিতীয় শ্রেণি) কামরার বেশ কয়েক জন যাত্রীর টাকা ও মালপত্র হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। যাত্রীরা পুরী স্টেশনে নেমে রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় নামে ওই কামরার এক যাত্রী বুধবার পুরী থেকে ফোনে বলেন, “ভুবনেশ্বর স্টেশন ছেড়ে বেশ কিছুটা যাওয়ার পরেই ঘুমের ওষুধ ছড়ানো হয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। কারণ তার পরেই কামরার অধিকাংশ যাত্রী গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তবে কয়েক জন খানিকটা আচ্ছন্ন হয়েও জেগে ছিলেন। তাঁরাই দেখতে পান, কিছু দুষ্কৃতী হাতে টর্চ নিয়ে যাত্রীদের পকেট থেকে মানিব্যাগ, মোবাইল ফোন তুলে নিচ্ছে। এক মহিলার গলার হার টেনে নেওয়ার সময় তিনি জেগে উঠে চিৎকার করায় দুষ্কৃতীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।”

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য
পুরীতে নেমে নির্মাল্যবাবু এবং অন্য যাত্রীরা জিআরপি থানায় অভিযোগ জানান। নিতাই ঘোষ নামে ওই ট্রেনের অন্য এক যাত্রী জানান, লুঠপাটের পরেই কামরার টিকিট পরীক্ষককে সব জানানো হয়। যাত্রীরা ওই কামরার অ্যাটেন্ড্যান্টের বিরুদ্ধেও এফআইআর করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, অ্যাটেন্ড্যান্টের সাহায্য ছাড়া বাতানুকূল কামরার দরজা খুলে ওঠা সম্ভব নয়।
রেলের বক্তব্য, পুরী এক্সপ্রেস যাতায়াত করে পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশার মধ্যে। ফলে মাঝপথে ট্রেনের প্রহরায় থাকা জিআরপি বদলে যায়। একই ভাবে ট্রেনটি রেলের দু’টি জোনের মধ্যে যাতায়াত করে। দক্ষিণ-পূর্ব রেল থেকে ছেড়ে ট্রেনটি চলে যায় পূর্ব-মধ্য রেলে। ফলে পাল্টে যায় আরপিএফ-ও। রেলকর্তাদের বক্তব্য, এই বদলের দরুন অনেক সময়েই দু’টি দলের মধ্যে বোঝাপড়ার অভাব থাকে। তাতে দুষ্কৃতীরা সুযোগ পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীরা তারই সুযোগ নিয়েছিল কি না, দুই জোনের রেলকর্তারা তা খতিয়ে দেখছেন।
প্রায় গোটা কামরায় ওষুধ ছড়ানোর অভিযোগ এলেও পূর্ব মধ্য রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “তিন জনের মালপত্র চুরি হয়েছে। জিআরপি তদন্ত করছে।” রেল পুলিশের বক্তব্য, ঘটনাটি যে-সময়ে এবং যত ক্ষণ ধরে ঘটেছে বলে যাত্রীরা জানাচ্ছেন, সেটা তাদের ভাবিয়ে তুলেছে। পুলিশ জেনেছে, ট্রেনটি ভুবনেশ্বর স্টেশনে ঢুকেছিল ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। সেখান থেকে ছাড়ে ৫টা ১৫ মিনিটে। আর খুরদা রোডে পৌঁছয় ৫টা ৪৫ মিনিটে। ৩০ মিনিটের মধ্যে কী ভাবে আচ্ছন্ন করে লুঠপাট চালানো হল, এবং তার মধ্যে আচ্ছন্ন যাত্রীরা কী ভাবে জেগেও গেলেন, সেটাই প্রশ্ন পুলিশের। প্রাথমিক তদন্তের পরে রেল পুলিশের অনুমান, ওষুধ ছড়ানো হয়নি। তবে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর পিছনে একটি দল রয়েছে বলে মনে করছেন রেল ও পুলিশের কর্তারা। দিন দশেক আগে ওই একই জায়গায় চেন্নাই মেলে দ্বিতীয় শ্রেণির একটি বাতানুকূল কামরা থেকে অনেকের মালপত্র খোয়া যায়। যারা সেই ঘটনায় যুক্ত ছিল, সেই দুষ্কৃতীরাই পুরী এক্সপ্রেসে লুঠপাট চালিয়েছে বলে পুলিশের সন্দেহ।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার অজয়কুমার বর্মা ট্রেন চলাচলের সঙ্গে যুক্ত সব কর্মীকে বাড়তি সতর্কতার নির্দেশ দিয়েছেন। ওই রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “যাঁরা ট্রেনে বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকেন, তাঁদের আরও সতর্ক করে দেওয়ার জন্য ইলেট্রিক্যাল, মেকানিক্যাল, কমার্শিয়াল দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.