|
|
|
|
বিহারের কৃষি রোডম্যাপের সূচনা করলেন প্রণব
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা |
প্রতিটি বাজেটেই তিনি অর্থশাস্ত্রবিদ কৌটিল্যকে স্মরণ করতেন, আজ কৌটিল্য-ভূমি বিহারে দাঁড়িয়েও তার ব্যতিক্রম হল না। বিহারের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির উন্নয়নে রাজ্য সরকারের তৈরি আগামী পাঁচ বছরের কৃষি রোডম্যাপের সূচনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সেই কৌটিল্যের দূরদৃষ্টিরই উল্লেখ করলেন। তাঁর কথায়, “প্রতিটি বাজেট পেশের সময় আমি তাঁর নাম উল্লেখ করেছি। কারণ তাঁর প্রাসঙ্গিকতা।”
দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিতে স্বনির্ভর হওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “১২০ কোটি মানুষের দেশে খাদ্যের প্রয়োজনেই এই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা জরুরি।” তাঁর মন্তব্য, “কৃষিতে উন্নয়ন করার জন্য পূর্ব ভারতের গাঙ্গেয় উপত্যকায় এই কাজ শুরু হওয়া উচিত। তার প্রথম গন্তব্য হওয়া উচিত বিহারই।” উল্লেখ্য, এই কৃষি-উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই কয়েক বছর আগে তখনকার অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণববাবুই দেশের পূর্বাঞ্চলে দ্বিতীয় কৃষি-বিপ্লবের লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দ ঘোষণা করেন। আর সেই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতেই নড়েচড়ে বসে পূর্ব ভারতের অন্যতম কৃষিপ্রধান রাজ্য বিহার, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। এবং এই কেন্দ্রীয় ঘোষণা ও বরাদ্দের কথা মাথায় রেখেই নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ধরে পূর্বের সব রাজ্যকেই পিছনে ফেলে এগিয়ে যান নীতীশ। এই কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “নীতীশ কুমার এই কাজটি করছেন।” |
রোডম্যাপের সূচনা অনুষ্ঠানে মুখোমুখি প্রণব ও নীতীশ। ছবি: জয়প্রকাশ |
তাঁর কৃষি রোড ম্যাপের প্রশংসা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “২০০৮ সালে প্রথম বিহারের কৃষি রোড ম্যাপ দেখে আমি উৎসাহিত হই। কেন্দ্রীয় বাজেটে সেটি উল্লেখ করে এই খাতে ৪০০ কোটি টাকা বিহারকে দেওয়া হয়েছিল।” দ্বিতীয় রোড ম্যাপের উদ্বোধন করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “বিহারে কৃষির উন্নতি করে এসজিডিপি ১১ শতাংশে পৌঁছে দিয়েছেন নীতীশ কুমার। এবার তিনি ১৩ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছেন।” কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য নীতীশ কুমারের দায়বদ্ধতারও প্রশংসা করেছেন রাষ্ট্রপতি। দ্বিতীয় কৃষি রোড ম্যাপটিতে ২০১৭ পর্যন্ত, পাঁচ বছরের জন্য রাজ্যের কৃষি-পরিকল্পনা করা হয়েছে। রাজ্যের ১৮টি বিভাগকে এর সঙ্গে যুক্ত করে কৃষি বিজ্ঞানীদের পরামর্শ মেনে এই রোড ম্যাপ তৈরি হয়েছে। প্রথম কৃষি রোড ম্যাপে ১৫১ শতাংশ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি হয় বলে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮০ শতাংশ। ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৯৩.৯০ লক্ষ টন এবং গমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৫.৭৫ লক্ষ টন ধার্য করা হয়েছে। এ ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
কৃষি ক্ষেত্রকে নীতীশ কুমার যে সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করছেন তার উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি এ দিন বলেন, “রাজনৈতিক নেতাদের ছেলেরা রাজনীতি করেন। তাহলে কৃষকের ছেলে কেন কৃষি কাজে যুক্ত হবে না। আসলে আমরা এই কাজটিকে এখনও যোগ্য সম্মান দিতে পারিনি। নীতীশকুমার সেই কাজটি করছেন।” রাষ্ট্রপতি হওয়ার আগে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বিহারে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। প্রসঙ্গত, এনডিএ জোটের শরিক হয়েও নীতীশ কুমারের দল জেডিইউ রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়েছিল। সেই সময়েই তিনি বিহারে আসার জন্য প্রণববাবুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও নীতীশ কুমার তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি যে কথা রেখেছেন সেই কথা উল্লেখ করে উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুশীল কুমার মোদী বলেন, “রাষ্ট্রপতি তিন মাসের মধ্যে বিহারের আমন্ত্রণ রক্ষা করেছেন।”
নীতীশ কুমার এদিন তাঁর সংক্ষিপ্ত ভাষণে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে বারবার বিহারের উন্নয়নের জন্য পরামর্শ চান। নীতীশ বলেন, “প্রণবদা আমাকে সব সময় পরামর্শ দিয়েছেন। আমি চাই তিনি আমাদের আরও পরামর্শ আর আশীর্বাদ দিন। কৃষি রোড ম্যাপ নিয়ে আমাদের অগ্রগতির প্রতিটি খবরই আমি দিতে থাকব।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল দেবানন্দ কোঁয়ারও।
পটনা থেকে আজ দ্বারভাঙ্গা যান রাষ্ট্রপতি। রাতে পটনা ফিরে আসেন। কাল এখান থেকেই তিনি মুম্বই যাবেন। |
|
|
|
|
|