এ যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। তাতে পর্যুদস্ত হচ্ছেন সৎকারে আসা পরিজনেরা। এই অভিযোগ খোদ নিমতলা মহাশ্মশানের বিরুদ্ধে। মৃতদেহ সৎকারে শ্মশানের তরফে এক-এক জনের থেকে এক-এক রকম টাকা নেওয়ার অভিযোগ পরিজনদের। এমন হওয়ার কথা নয় বলেই দাবি কলকাতা পুরসভার। পুরসভার অধীন সাতটি শ্মশানের জন্য রয়েছে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম।
কী সেই নিয়ম? বড় ও ছোট মৃতদেহের জন্য পৃথক ‘রেট’। কাঠের চুল্লির রেজিস্ট্রেশন ফি ২২০ ও ৫০ টাকা। বৈদ্যুতিক চুল্লিতে তা যথাক্রমে ২৫০ ও ১৩০ টাকা। পুরসভার নির্ধারিত এই রেজিস্ট্রেশন ফি-ই নেওয়ার কথা। ক্ষোভ রয়েছে রেজিস্ট্রেশন ফি-র বদলে পাওয়া রসিদ নিয়েও। সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস থেকে দেওয়া রসিদের তিনটি কপির প্রথমটি অফিস কপি। অন্য দু’টি কার্বন কপির একটি পরিজনেরা সংলগ্ন কাঠগোলায় দেখালে মিলবে কাঠের বিল। তৃতীয়টি ‘ডেথ সার্টিফিকেট’-এর ফ্রি কপি পাওয়ার জন্য। মৃত ব্যক্তি কলকাতা পুর-এলাকার বাসিন্দা হলে সেদিনই পাওয়া যাবে ডেথ সার্টিফিকেট। পুর-এলাকার বাইরের মৃতদেহের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুরসভা বা পঞ্চায়েতকে দেখালে মিলবে ডেথ সার্টিফিকেট। পরিজনদের বক্তব্য, দু’টি কপির কোনটিতেই টাকার অঙ্ক লেখা থাকে না।
সম্প্রতি কামারডাঙার বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র ঘোষের মৃতদেহ দাহ করাতে আসা পরিজনদের অভিযোগ, রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ তাঁরা দিয়েছেন ৩৬০ টাকা। দু’টি কপির কোনটিতেই টাকার উল্লেখ নেই। ওই দিনই কাকিমাকে দাহ করাতে আসা সঞ্জয় ধানুকার অভিজ্ঞতা, “রেজিস্ট্রেশনের জন্য পাঁচশো টাকা দিয়েছি। কাঠের জন্য তিন হাজার টাকা।” রঞ্জিত ঘোষ নামে অন্য এক জন বলেন, “কাঠগোলা থেকে বডি দেখে বলে কোন বডিতে কত জল আছে। তার জন্য কত কাঠ লাগবে।” নারায়ণবাবুর পরিবারের দাবি, “কাঠের জন্য দু’হাজার টাকা চায়। পুর-নির্দেশিকার কথা তুললে ১৩১২ টাকা নেয়।” অভিযোগ আছে শ্মশানে পুরসভা নিযুক্ত ডোমেদের অতিরিক্ত টাকা আদায় নিয়েও।
ফলত আঙুল উঠছে সংশ্লিষ্ট কাঠের গোলার ভূমিকা নিয়েও। কলকাতা পুরসভার নিয়ম, বৈদ্যুতিক চুল্লির ক্ষেত্রে পাটকাঠি-সহ অন্যান্য জিনিস বাবদ খরচ ১৩৮ টাকা। কাঠের চুল্লির ক্ষেত্রে খরচ যথাক্রমে ১৩১২ টাকা ও ৯৯২ টাকা। শিশুদের ক্ষেত্রে ৬০৭ টাকা। ২০১০-এর ১ মার্চ থেকে তিন বছরের জন্য লাগু ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা আছে, এর বেশি টাকা শবযাত্রীদের থেকে নেওয়া যাবে না। এ-ও বলা আছে, নির্দেশিকাটি সকলের নজরে পড়ার মতো স্থানে ঝোলাতে হবে। কোনও আদেশই যে মানা হচ্ছে না, তা কার্যত স্বীকার করছেন কর্মীরাই। কেন? সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসের তরফে কোনও সদুত্তর মেলেনি। আর কাঠগোলার পক্ষ থেকে এই বিষয় নিয়ে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
কলকাতা পুরসভার স্পেশাল অফিসার (স্বাস্থ্য) এবং ইন-চার্জ (শ্মশানঘাট) দেবাশিস সেন এই সব অভিযোগের উত্তরে বলেন, “নিমতলা ঘাট থেকে বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি ডোমেদের ব্যাপারে। বাকি বিষয়গুলি জানা ছিল না। আজই সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস ও কাঠগোলায় নির্দিষ্ট রেট-বোর্ড বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে লিখে ঝুলিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি। রসিদের কার্বন কপির স্পষ্টতা বিষয়েও নির্দেশ দেব। এর অন্যথা করলে সাসপেন্ড করা হবে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের। প্রয়োজনে কাঠগোলার দরপত্রও বাতিল করা হবে।” |