নিজেদের হেফাজতে থাকা এক অভিযুক্ত যুবককে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর অভিযোগ উঠল লালবাজারের গোয়েন্দা দফতরের বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই যুবকের প্রতিবন্ধী বাবা। সঞ্জীবকুমার জৈন (৩৭) নামে ওই যুবক আশঙ্কাজনক অবস্থায় ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
পুলিশ অবশ্য ওই যুবককে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) পল্লবকান্তি ঘোষ বলেন, “সঞ্জীবকে কেউ মারধর করেনি। তিনি আগে থেকেই মৃগী রোগে আক্রান্ত। ১৪ সেপ্টেম্বর লালবাজারে অন্য আসামিদের সামনেই সঞ্জীব আচমকাই কাঁপতে শুরু করেন। মাটিতে পড়ে যান। তার পরেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করে বাড়িতে খবর দেওয়া হয়।” সঞ্জীবের বাবা অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের মৃগী নেই।
কী অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় সঞ্জীবকে? পুলিশের অভিযোগ, সঞ্জীব (ওরফে বিনোদ বাগচী ওরফে পিন্টু সিংহ) ১২ কোটি টাকার শেয়ার-প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত। এই ঘটনায় সঞ্জীব-সহ আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও দুই অভিযুক্ত পলাতক। ২০১০ সালে বৌবাজার থানায় ওই প্রতারণার মামলাটি দায়ের হয়েছিল। তার ভিত্তিতেই পুলিশ গত ৭ সেপ্টেম্বর সঞ্জীবকে গ্রেফতার করে। পরদিন তাঁকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁকে ন’দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
বালি থানার হপ্তাবাজার এলাকায় ভবতারণ গাঙ্গুলি লেনে বাড়ি সঞ্জীবের। বাড়ির সামনেই তাঁদের একটি মুদির দোকান রয়েছে। বুধবার সকালে তাঁর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সঞ্জীবের বাবা, সত্তর বছরের বৃদ্ধ রতনচন্দ্র জৈন তাঁদের দোতলার বাড়ির একতলার ঘরে শুয়ে রয়েছেন। চার দিকে ছড়ানো সঞ্জীবের ফটো। রতনবাবু জানান, ৬ সেপ্টেম্বর সকালে পুলিশ এসে ছেলেকে লালবাজারে দেখা করতে বলে। সেই মতো পরদিন স্ত্রী শালিনীকে নিয়ে লালবাজারে যান সঞ্জীব। রাত ৯টা নাগাদ ফোন করে সঞ্জীবকে গ্রেফতারের খবর রতনবাবুকে জানিয়েছিলেন শালিনী।
সঞ্জীবের কাকা মানিকচন্দ্র জৈনের অভিযোগ, “১৪ সেপ্টেম্বর লালবাজার থেকে ফোন করে জানানো হয়, ছেলের অবস্থা খারাপ। তাঁকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।” খবর পেয়েই হাসপাতালে যান সঞ্জীবের ভাগ্নে বিবেক জৈন ও অন্য আত্মীয়েরা। তাঁদের কথায়, চিকিৎসক তাঁদের জানান, সঞ্জীবের মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে রয়েছে। তিনি অচৈতন্য অবস্থায় রয়েছেন। অবিলম্বে তাঁকে বড় হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করাতে হবে। মানিকবাবুর অভিযোগ, এর পরেই ‘ড্যানি’ নামের এক পুলিশ অফিসার জামিনের কাগজে সই করতে বলেন বিবেককে। কিন্তু তিনি রাজি হননি। পরে পরিবারের কথা মতো সঞ্জীবকে বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। এখন তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে ভর্তি রয়েছেন বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন।
রতনবাবু এ দিন বলেন, “১১ সেপ্টেম্বর পুলিশ ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে তল্লাশি চালাতে আসে। ওকে আমাদের সঙ্গে কথা বলতে দিচ্ছিল না। তারই মধ্যে সুযোগ পেয়ে ছেলে বলে, ‘বাবা ওরা আমাকে খুব মারছে। আমাকে বাঁচাও’।” তিনি বলেন, “ও দোষ করে থাকলে আইনানুযায়ী তার বিচার হবে। কিন্তু পুলিশ এমন করে মারবে কেন?” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, সঞ্জীবের ‘ক্রেনিয়টমি’ (মাথা থেকে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে জমাট রক্ত বার করা) করা হয়। তাঁর মাথায় রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তবে বাইরে থেকে কোনও আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়নি। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে। |