স্থায়ী পরিচারক সম্পর্কে তথ্য জমা দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় থানায়। কিন্তু তাঁর বদলে কিছু দিনের জন্য কাজে আসা অস্থায়ী পরিচারক সম্পর্কে কোনও তথ্য জমা করা হয়নি। আর সে-ই লক্ষাধিক টাকা, সোনা ও হিরের গয়না চুরি করে নিয়ে গেল বলে অভিযোগ। ওই পরিচারক পলাতক। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
সল্টলেকের এফডি ব্লকে এই চুরির ঘটনা ঘটেছে ব্যবসায়ী শম্ভু কেডিয়ার বাড়িতে। বুধবার সকালে চুরির বিষয়টি টের পেয়ে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় অভিযোগ দায়ের করেন গৃহকর্তা। অভিযুক্ত পরিচারক নিরঞ্জন বলে নিজের পরিচয় দিয়েছিল। এ ছাড়া তার সম্পর্কে কোনও তথ্য ছিল না কেডিয়া পরিবারের কাছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ৯ নম্বর প্রিটোরিয়া স্ট্রিট এলাকায় থাকত ওই পরিচারক। আসল বাড়ি বিহারে।
শম্ভুবাবুর বন্ধু অমিত দানসাল জানান, স্থায়ী ভাবে এক জন পরিচারক কাজ করতেন ওই বাড়িতে। এক মাস আগে তিনি ছুটি নিয়ে দেশে গেলে নিরঞ্জনকে কাজে নিযুক্ত করা হয়। সে-ই মঙ্গলবার রাতে জানলার গ্রিল কেটে ঘরে ঢোকে বলে সন্দেহ। আলমারির তালা ভেঙে নগদ টাকা ও গয়না চুরি করে বলে তাঁদের অনুমানের কথা পুলিশকে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যেরা। পুলিশ সূত্রে খবর, নিরঞ্জনকে দু’দিন আগেই কাজে না রাখার কথা জানিয়েছিলেন গৃহকর্তা। যদিও গ্রিল কাটা হয়েছে, না কাটা ছিল, সে বিষয়ে ধন্দে রয়েছে পুলিশ। ঘটনায় দু’-তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে বারবার পরিচারক-পরিচারিকাদের সম্পর্কে তথ্য দিতে বাসিন্দাদের কাছে আবেদনও করা হয়েছে। বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্যও জোগাড় করেছে পুলিশ। তবু বাসিন্দাদের মধ্যে যথেষ্ট সচেতনতা যে ছড়ায়নি, এই ঘটনাই তার প্রমাণ দিল। পরিচারক কিংবা পরিচারিকা সম্পর্কে তথ্য দিতে অনীহা কেন? সল্টলেকের বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, ছবি চাইলে কিংবা তুলতে গেলে কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন পরিচারকেরা। যাঁরা ছবি কিংবা নিজেদের তথ্য দিতে অস্বীকার করছেন, তাঁদের কাজে রাখা হচ্ছে কেন? বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, পুলিশের কথায় ভয় পাচ্ছেন অনেক পরিচারক। তাঁরা কাজ ছেড়ে দিলে ফের পরিচারক-পরিচারিকা পেতে সমস্যা হয়।
পুলিশকর্তাদের কথায়, তাঁরা তথ্য জোগাড় করতে গিয়ে ভীতি কাটাতে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন। কলকাতা-সহ শহরতলিতে বিভিন্ন আবাসনে পরিচারক-পরিচারিকাদের পরিচয়পত্র পর্যন্ত করে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বিধাননগরে তেমন কোনও দৃষ্টান্ত নেই। এ প্রসঙ্গে আবাসন কমিটিগুলির দাবি, ইচ্ছে থাকলেও বাসিন্দাদের তরফে সাড়া না মেলায় কোনও ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। যেমন, ‘অর্মত্য আবাসন কমিটি’র সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস বলেন, “অনেক বার চেষ্টা করেও আবাসিকদের তরফে সাড়া পাইনি। কিন্তু আমরা চাই, পরিচারক-পরিচারিকাদের তথ্য জমা করা ও পরিচয়পত্র রাখা বাধ্যতামূলক করা হোক।”
বাসিন্দাদের একটি সংগঠন ‘বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “সমাজে চলতে গেলে নিয়ম মানতে হবে। পুলিশ-প্রশাসন ব্লক কিংবা আবাসিক কমিটিগুলিকে নিয়ে একযোগে কাজ করলে, এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।”
বিধাননগরের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিধাননগরের প্রতিটি থানাকে এই সংক্রান্ত তথ্য জোগাড়ের ক্ষেত্রে আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্লক ও আবাসিক কমিটিগুলির সঙ্গে ফের আলোচনায় বসারও চিন্তাভাবনা চলছে।” |