|
|
|
|
|
|
|
মিউচুয়াল ফান্ড |
ভুল ধারণাই চক্রব্যুহ
আমি-আপনি তো কোন ছার। ফান্ড নিয়ে ভুল ধারণা ডুবিয়ে দিতে
পারে এই বিষয়ের অনেক
পাকা খেলোয়াড়কেও। তাই আগে থেকেই
সাবধান হতে দোষ কী? জানাচ্ছেন নীলাঞ্জন দে |
|
আগের বার ফান্ডের গোড়ার ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিলাম আমরা। যেমন, ফান্ড কী, কেন তাতে টাকা রাখা সুবিধাজনক ইত্যাদি। এ বার আমরা নজর দেব ফান্ডকে ঘিরে ছড়িয়ে থাকা নানা ভুল ধারণার দিকে। কারণ, দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, যাঁরা এই বিনিয়োগের দুনিয়ায় নতুন পা রাখছেন, তাঁরা তো বটেই। বহু পোড় খাওয়া লোকের লগ্নিকেও ডুবিয়ে ছেড়েছে ওই ভুল ধারণা আর তাকে ঘিরে তৈরি অযথা ভয়ের বৃত্ত। চলুন আজ এ রকম কয়েকটা ভুল ধারণা শুধরে নিই।
ধারণা ১: কম ন্যাভের ফান্ডে লগ্নি করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে ভবিষ্যতে রিটার্ন বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা। কারণ, প্রথম থেকেই ন্যাভ বেশি থাকলে, আমি পলিসি থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাকে বাড়তে হবে আরও অনেক বেশি। তা ছাড়া ইউনিট কেনার খরচও বেশি
যুক্তি বলে: এটা ঠিকই যে, আপনার প্রথম লগ্নি করার সময় ফান্ডের ন্যাভ এবং টাকা তুলে নেওয়ার সময়কার ন্যাভ এই দু’য়ের পার্থক্যই ঠিক করে দেবে প্রাপ্য টাকার অঙ্ক। তবে মনে রাখবেন, ন্যাভ গুরুত্বর্পূণ। কিন্তু শুধু তা দেখে লগ্নি করবেন না। বরং তাকে শুধু একটা সূচক হিসেবে দেখুন। যা থেকে বোঝা যাবে একটি নির্দিষ্ট টাকায় কতকগুলি ইউনিট কিনতে পারবেন আপনি।
এর পর গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করুন বাকি সব বিষয়। যেমন, ফান্ড পরিচালকের দক্ষতা, সংস্থার মূল্যবোধ, ফান্ডের ঘোষিত লক্ষ্য ইত্যাদি। কারণ, ফান্ডের ন্যাভের ওঠা-পড়া নির্ভর করে এই বিষয়গুলির উপরেও। গোড়াতেই চিন্তা করুন আপনার চাহিদার সঙ্গে ফান্ডের চরিত্র আদৌ খাপ খায় কি না।
সহজ করতে উদাহরণ: মনে করুন, দু’টি একই ধরনের ফান্ড রয়েছে। ক এবং খ। দু’জনেই বাজারে এই মুহূর্তে ১০ লক্ষ টাকা খাটায়। কিন্তু দু’জনের ন্যাভ আলাদা। ক-এর ১০০ টাকা। আর খ-এর ৫ টাকা।
এক বছর পর দেখা গেল, ক বেড়েছে ৪০%। সেখানে খ বেড়েছে ৩০%। কেন এই পার্থক্য, তার অবশ্য বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। হতে পারে যে, ক তুলনায় বেশি ভাল শেয়ারে লগ্নি করতে পেরেছিল। কিংবা হয়তো গোড়া থেকেই তার পরিকল্পনা ছিল অনেক বেশি আঁটোসাঁটো। কারণ যা-ই হোক, বছর শেষে ক-এর ন্যাভ বেড়ে দাঁড়াবে ১৪০ টাকায়। সেখানে খ পৌঁছবে সাড়ে ছয়ে। তা হলে কী দাঁড়াল? কম ন্যাভের ফান্ড সব সময় ভাল না-ও হতে পারে। কি তাই তো?
|
ফান্ডের ‘ফান্ডা’ |
• ডিভিডেন্ড তোলা লক্ষ্য হলে, তবেই তুলুন |
• ভেবে দেখুন, কেন সঞ্চয় করছেন আপনি। তবেই পুনর্নবীকরণ করুন এসআইপি প্রকল্প |
• যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফান্ডে লগ্নি শুরু করুন। বেশি বয়সের জন্য ফেলে রাখবেন না |
• বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। তা না-করে মোটা টাকা ঢালা কিন্তু আত্মহত্যার সামিল |
• শুধু স্বল্প মেয়াদের কথা ভাববেন না। ধরেই নিন, আরও অনেক অনেক দিন বাঁচবেন |
• শুধু ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নির লোভ ভাল নয়। টাকা লাগান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে |
|
ধারণা ২: ডিভিডেন্ড পাওয়া সব সময়েই ভাল
যুক্তি বলে: ফান্ড ডিভিডেন্ড ঘোষণা করলে, বেশ দিল-খুশ হয়ে যায় আমাদের। মনে হয়, এই তো বেশ হাতে এসে গেল পড়ে পাওয়া কিছু টাকা। তার উপর আবার এই টাকায় কর গোনারও ঝক্কি নেই। কিন্তু পুরোটাই নির্ভর করছে, আপনার সঞ্চয়ের লক্ষ্য কী, তার উপর। সাধারণত, বাজারকে টেক্কা দিয়ে ফান্ড উপরি আয় করতে পারলে, তবেই তো ডিভিডেন্ড দেবে আপনাকে। কিন্তু এমন হতেই পারে যে, আপনার লক্ষ্য সম্পূর্ণ আলাদা। আপনি হয়তো চান, সেই বাড়তি টাকা এখন ফান্ডেই থাকুক। আরও ফুলে-ফেঁপে উঠুক তার ন্যাভ। যাতে পরে আরও মোটা অঙ্ক বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন আপনি। তেমনটা হলে কিন্তু ডিভিডেন্ড আপনার জন্য তেমন কাজের কথা নয়।
ধারণা ৩: এসআইপি-র কখনওই কোনও তুলনা হয় না যুক্তি বলে: এটা ঠিকই যে ফান্ডে নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি করতে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি)-এর বিকল্প নেই। কিন্তু তার মানে এই নয়, সব সময় এখানেই রিটার্ন সব থেকে বেশি। তাই এসআইপি-র উপর আপনার আস্থায় আঘাত না-করেই বলছি, দু’টো বিষয় মাথায় রাখুন
(১) আপনি যত টাকা এসআইপি-তে রাখবেন, হতেই পারে শেষে তার থেকে কম টাকা হাতে পেলেন। কারণ, এখানে তো প্রতি মাসের একটা নির্দিষ্ট দিনে
আপনার চেক জমা পড়ছে ফান্ডের তহবিলে, তা সে
দিন শেয়ার বাজার কী খেল্ দেখাবে, তা কে বলতে পারে
(২) অনেক সময়ে একবারে থোক দেওয়া টাকায় রিটার্ন মেলে বেশি।
তবে হ্যাঁ, এক বার এসআইপি-তে লগ্নি করলে, খারাপ সময়ে কিছুতেই বাজার ছেড়ে পালাবেন না। বুদ্ধি করে এক বার যখন ফান্ডে লগ্নির স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তখন খারাপ সময়ে বাজার ছেড়ে লোকসান ডেকে আনবেন কেন? বরং কোমর কষে বাজার ওঠার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন।
ধারণা ৪: নতুন ফান্ডে লগ্নি মানেই ঘরে লোভনীয় রিটার্ন যুক্তি বলে: একেবারেই তা নয়। প্রথমত, এখন ফান্ড নিয়ে যা কড়াকড়ি, তাতে নতুন কোনও সংস্থার তা বাজারে আনাই শক্ত। আর দ্বিতীয়ত, এই ধরনের ফান্ডে কিন্তু ঝুঁকিও অনেক বেশি। কারণ, আগে তা কেমন রিটার্ন দিয়েছে, সে কথা জানার কোনও উপায় নেই।
শেষে একটা কথা বলি। আপনি তো নির্দিষ্ট লক্ষ্যেই ফান্ডে টাকা ঢালছেন। তাই তা বাছাইয়ের আগে চিন্তা করুন, কী ধরনের প্রকল্পে সেই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব। একগাদা ফান্ডে লগ্নি করা অর্থহীন। |
ন্যাভ কী? |
• যে যে শেয়ার, বন্ড ইত্যাদিতে ফান্ড টাকা লাগিয়েছে, প্রত্যেক দিনের শেষে দেখা হয়, তাদের মোট দাম কত দাঁড়াল। ওই দামই হল ফান্ডের অ্যাসেট বা তহবিল। উল্টো দিকে, তেমনই কিছু দায়ও থাকে (লায়াবিলিটি) ফান্ডের। যেমন, তা পরিচালনার খরচ, কর ইত্যাদি। সম্পদ থেকে দায় বাদ দিয়ে যে নিট আয় হাতে থাকে, তা-ই হল ফান্ডের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (ন্যাভ)। সুতরাং, ন্যাভ= (সম্পদদায়)
• সাধারণ ভাবে ন্যাভ বলতে অবশ্য লগ্নিকারীরা বোঝেন ইউনিট প্রতি ন্যাভকে।
• ইউনিট পিছু ন্যাভ=(ন্যাভ/ফান্ডের হাতে থাকা মোট ইউনিট) = (সম্পদদায়)/ ফান্ডের হাতে থাকা মোট ইউনিট |
|
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর |
|
|
|
|
|